ওয়েব ডেস্ক: কথাতেই বলে রসে বশে বাঙালি। মাছ ছাড়া তাদের দিনযাপন একপ্রকার অসম্ভব। বাজারে গিয়ে বেছে মাছটা কিনে না আনলে মাছে-ভাতে দুপুরের খাওয়াটাই তো মাটি। তা সে প্রলয় আসুক কিংবা লকডাউন। এই রুটিনে কোনও বদল নেই।
রাজনৈতিক নেতা থেকে বুদ্ধিজীবীরা বারবারই বলছেন ‘ঘরে থাকুন, ভাল থাকুন, সাবধানে থাকুন। ন্যূনতম খাবার খেয়ে, সাধারণ জীবনযাপন করুন। সকলেরই যাতে পেট ভরে সেদিকে নজর রাখুন। কিন্তু বাস্তবে কি সেটা হচ্ছে?
পরিচালক ও নাট্যকার দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের ‘গলদা চিংড়ি’ লকডাউন শর্ট ফিল্ম যেন সেই নিদারুণ সত্যিটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এমন একটা সাহসি ভাবনায় ছবি করতে অনেকটাই মনের জোর লাগে। বুদ্ধিজীবী মহলের আসল রূপ সপাটে দেখিয়েছে এই ছোট ছবি।
ছবির একমাত্র চরিত্র নাট্যকার কল্লোল চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য। এই অভিনেতার লুকে আছে একটা নিখাদ পেটুক বাঙালি। তাই বোধহয় দেবেশ চট্টোপাধ্যায় অম্বরীশকেই পারফেক্ট মনে করেছেন এই ছবিতে চরিত্রে। যিনি এই লকডাউনেও ফ্রেশ মাছ কিনতে রোজ বাজারে দৌড়োন। তাঁকে মাছওয়ালা বলে রেখেছে টাটকা গলদা চিংড়ি এনে রেখেছে, তাই তিনি বাজারে যাচ্ছেন। মনোমতো বাজার করে আয়েশ করে খাওয়াটা এই লকডাউন পিরিয়ডেও তাঁর কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আরও পড়ুন: ‘ওম’ মন্ত্র লেখা অর্ধনগ্ন শরীরে ছবি পোস্ট করে বিতর্কে মডেল সোফিয়া
কিন্তু এই কল্লোলবাবু যেহেতু একজন নাট্যকার, তাই তাঁর জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি দুই-ই আছে। সেই জায়গা থেকেই কোনও এক সংবাদ চ্যানেল থেকে সাংবাদিক সঞ্চালিকা যখন লকডাউনে প্রান্তিক অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষদের জন্য কী করা উচিত এই প্রশ্ন করে তাঁর কাছে মতামত জানতে চান, তখন তিনি বলেন “অল্প খেয়ে কৃচ্ছ্রসাধন করে গরীব মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে হবে।”
পরক্ষণেই ফোন ছেড়ে তিনি গলদা চিংড়ি কিনতে ছোটেন। তার আগে আবার জিজ্ঞেসও করেন, “কী? কেমন বললাম!”
দেখে নিন টেলিফিল্মটি –
অম্বরীশের মতে, পরিস্থিতি সত্যি কঠিন। যাঁরা তুলনায় স্বচ্ছ্বল তাঁরা কিন্তু এভাবেই বিলাসে জীবন কাটাচ্ছেন। অর্থের বিনিময়ে এসি, ভালো মন্দ খাবার, টিভিতে বিনোদন, ফ্রিজের ঠাণ্ডা জল—সবটাই পাচ্ছেন। বিপদে নীচতলার বাসিন্দারা। দিন আনি দিন খাই যাঁদের সম্বল, তাঁরা কাজ হারিয়ে সত্যিই নিরন্ন। কিন্তু ক-জন তাঁদের কথা ভাবছেন!
খেতে অম্বরীশও ভালোবাসেন। তবে এই মুহূর্তে তাঁর খিদে-তেষ্টা একেবারেই লোপ পেয়েছে। বরং, অনাগত দিনের আশঙ্কায় ভুগছেন তিনি। এবং দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া লকডাউনের আসল চেহারাকে উপেক্ষা করে একমুঠো খাবার তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সেই সব মানুষের মুখে যাঁরা অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: করোনা যুদ্ধে ঘরবন্দি কনসার্ট শাহরুখ-প্রিয়াঙ্কা-লেডি গাগাদের, তৈরি হল ১৩ কোটি ডলারের তহবিল