কলকাতা: যথাযথ সতর্কতা না-নেওয়ার বিরাট মাসুল দিতে হল এনআরএস হাসপাতালকে। অজান্তে করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তির চিকিৎসা করায় রবিবার অন্তত ৬৫ জন ডাক্তার-নার্সকে রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারেপাঠাল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। এঁদের প্রত্য়েকের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হবে।স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, সোমবার থেকেই ওই বিভাগে নতুন করে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী দু’দিন জীবাণুমুক্ত করা হবে ওই ওয়ার্ড এবং সিসিইউ।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬১, মৃত ৩, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
শনিবার ওই হাসপাতালে মৃত্যু হয় দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলার বাসিন্দা ৩৪ বছরের এক যুবকের। তিনি হিমোফিলিয়ায় ভুগছিলেন। গত ৩০ মার্চ তাঁকে ভর্তি করা হয়। প্রথমে তাঁকে রাখা হয়েছিল মেডিসিন বিভাগের পুরুষদের ওয়ার্ডে। কিন্তু তার পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাঁকে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে থাকে ওই যুবকের শরীরে। এর পরই শনিবার সকালে তাঁর লালারসের নমুনা পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। কিন্তু সেই রিপোর্ট আসার আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। শনিবার রাতে ওই যুবকের রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরেই রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা হাসপাতাল জুড়ে।
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত ২৬ নার্স, ৩ চিকিৎসক- সিল করা হল মুম্বইয়ের ওখার্ড হাসপাতাল
ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা এক পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনি বলেন,‘‘যখন ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়েছিল তখন তাঁর শরীরে করোনার কোনও উপসর্গ ছিল না। ফলে কোনও ধরনের স্ক্রিনিং হয়নি। কোনও চিকিৎসক, নার্স বা চিকিৎসাকর্মী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টও ব্যবহার করেননি।” শনিবার ওই রিপোর্টের কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়। ওই ওয়ার্ডে এবং সিসিইউ-তে কারা কারা ওই ক’দিন চিকিৎসা করেছেন এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা কারা ছিলেন— তা চিহ্নিত করা শুরু হয়। জানা যায়, প্রায় ৩৯ জন চিকিৎসক ওই ওয়ার্ড এবং ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন পিজিটি, ৬ জন হাউস স্টাফ এবং ১৮ জন ইন্টার্ন। সবাইকে দ্রুত রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়াও নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের সংস্পর্শে আসা সব মিলিয়ে প্রায় ৬৪ জনকে সোমবার পর্যন্ত কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে।
আরও পড়ুন: ৪৮ ঘন্টার মধ্যে করোনাকে খতম করছে উকুন মারার ওষুধ! চাঞ্চল্যকর দাবি অস্ট্রেলিয়ান গবেষকদের
হাসপাতাল সূত্রে খবর, রবিবার থেকেই গোটা ওয়ার্ড জীবাণুমুক্ত করার কাজ শুরু হয়। সোমবারও সেই কাজ হয়। সিসিইউ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরও ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ রেখে জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলবে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, ওই বিভাগে তিন জন রোগী ছিলেন। তাঁদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাঁদেরও আইসোলেশনে রেখে পর্যবক্ষণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই যুবকের এখনও কোনও ভ্রমণের ইতিহাস পাওয়া যায়নি। তিনি কী ভাবে করোনা আক্রান্ত হলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সরকারি ভাবে এখনও রাজ্য ওই যুবকের ম়ৃত্যু করোনার কারণে হয়েছে বলে ঘোষণা করেনি। রাজ্য সরকার নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি ৩৪টি কারণ খতিয়ে দেখার পর সিদ্ধান্ত নেবে ঠিক কী কারণে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: সামনে কঠিন লড়াই, দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে দেশবাসীকে বার্তা প্রধানমন্ত্রীর