কলকাতা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে আজ সকাল সাতটা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত দেশবাসীকে ‘জনতা কার্ফু’ পালনের ডাক দিয়েছিলেন মোদী। কোনও জরুরি পরিষেবা ছাড়া স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি থাকার আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। সেইমতো আজ সকাল থেকেই দেশজুড়ে ‘জনতা কার্ফু’ পালিত হচ্ছে।
সকাল থেকে জনশূন্য কলকাতার রাজপথ। দু’একটি ট্যাক্সি, হাতে গোনা সরকারি বাস ছাড়া পথে নামেনি প্রায় কোনও গণপরিবহণ। বাকি রাজ্যের ছবিটাও কার্যত একই। সাতসকালে ফাঁকা লোকাল ট্রেনের কামরা।এদিন মাত্র ৩৪০ টি লোকাল ট্রেন চলবে। ভিনরাজ্য থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের জন্য সরকারের তরফে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিউ কমপ্লেক্সের ভিতরে মেডিক্যাল ক্যাম্প খোলা হয়েছে। সেখানে তিনজনের শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকায় তাঁদের রাজারহাটে কোয়াকেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনার জেরে স্যানিটাইজার, মাস্কের দাম বেঁধে দিল কেন্দ্র
কোনও কোনও বাজারে দু’একটা দোকান খুললেও দেখা পাওয়া যায়নি ক্রেতার। চেনা ব্যস্ততার সামান্যতম চিহ্ন নেই বেহালার শকুন্তলা পার্ক, বকুলতলা বাজার থেকে উত্তর কলকাতার পাতিপুকুরের পাইকারি মাছের বাজারে।ফাঁকা, শুনশান ধর্মতলা। ধর্মঘটের দিনেও কলকাতার প্রাণকেন্দ্র এরকম শুনশান থাকে না। কোনও বেসরকারি বাস দেখা যাচ্ছে না। গুটিকয়েক সরকারি বাস চোখে পড়েছে। অ্যাপ ক্যাবও প্রায় অমিল। হলুদ ট্য়াক্সির সংখ্যা হাতেগোনা। এমনকী বন্ধ চা দোকানও।
শুনশান করুণাময়ী। ফাঁকা উল্টোডাঙাও। অন্য রবিবারও সকালে গমগম করে উল্টোডাঙা। স্টেশনের কাছে অটোর বড়সড় লাইন থাকে সবসময়। আজ তা কার্যত শূন্য। মাঝেমধ্যে দু’একটি অটো আসছে। তাতেও যাত্রী প্রায় নেই বললেই চলে।আজ সকালে শিয়ালদহে কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেন পৌঁছায়। রেলের নির্দেশ মতো, কোনও দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়েনি। তবে হাতগোনা লোকাল ট্রেন ছাড়ছে। তাতে যাত্রী সংখ্যা কম। আর পাঁচটা রবিবার শিয়ালদহ ফাঁকা থাকলেও আজকের ছবিটা আরও শুনশান। এদিন শিয়ালদহ থেকে ৫০০-র মতো লোকাল ট্রেন ছাড়বে। অন্য রবিবার ৭৮৮ টি লোকাল ট্রেন ছাড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনতা কার্ফুর সিদ্ধান্ত একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। অনেকের মতে, এই সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল। স্বাস্থ্য কর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই প্রয়োগের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে আরও বড় মাপের লকডাউনের পথে হাঁটতে পারে সরকার। আজ তারই জল মাপা হবে।এখনও অবধি দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩১৫। এ রাজ্যেও ৪ জনের শরীরে মিলেছে ভাইরাসের অস্তিত্ব।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, যে গতিতে ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে, তাতে সংক্রমণের জাল ছিন্ন করাটাই এখন সরকারের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। আর তা কার্যকর করতে গেলে এ ভাবে ‘লকডাউন’ করা ছাড়া কোনও উপায় খোলা নেই বলেই মত স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশের।