কলকাতা: করোনার আবহে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো নিয়ে কেন্দ্রে রাজ্য সংঘাতে এবার রণংদেহী মনোভাব নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধ সরাসির অভিযোগ তুলে বুধবার তিনি বললেন, ‘বাংলার বিরুদ্ধে বলে চলেছে। অথচ সব কিট ত্রুটিপূর্ণ বলে তুলে নিয়েছে। এখন মানুষ মারা গেলে কার দোষ? কত কিট দিয়েছে, ক্ষমতা থাকলে প্রকাশ্যে বলুক দেখি কেন্দ্র। দুটো করে কিট লাগে, অথচ একটা করে দিয়েছে, বুঝতে পারছেন, কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা।’
পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে সংক্রামিতদের চিহ্নিত করতে মোটই কম টেস্ট হয়নি বলে বুধবার পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা।তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৭০৩৭ জনের কোভিড টেস্ট হয়েছে। এই সংখ্যাটা কম নয়। মুখ্যমন্ত্রীর এও বক্তব্য, বাংলায় টেস্ট কম হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব তা নয়। একে তো কেন্দ্রের সরকার পর্যাপ্ত সংখ্যায় কিট দিয়ে সাহায্য করেনি। দ্বিতীয়ত, যে র্যাপিড টেস্ট কিট পাঠিয়েছিল তা ত্রুটিপূর্ণ বলে ব্যবহার করতে বারণ করেছে।
তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ বিজিআই কিট এবং আরটিপিসিআর কিট-ও ত্রুটিপূর্ণ ছিল। তাঁর কথায়, ভাগ্যিস স্বাস্থ্য দফতর বাইরে থেকে কিছু কিট কিনে এনেছিল। নইলে এতো সংখ্যক মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা যেত না। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র র্যাপিড টেস্টের জন্য ১০ হাজার কিট দিয়েছিল। কিন্তু সেই কিট কেন্দ্র আবার ফেরতও নিয়ে নিয়েছে। কারণ, ওই কিট ত্রুটিযুক্ত। ফেরত নেওয়া হয়েছে কোভিড টেস্টের পিসিআর কিটও।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘বাংলার বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছিল। বাংলার নামে কুৎসা রটানো হচ্ছিল।”
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা-পরিস্থিতি দেখতে পথে নামছে কেন্দ্রীয় দল, সহযোগিতার আশ্বাস মুখ্যসচিবের
করোনা-আবহে রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দলের নাম না করে এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘রোজ একে ওকে পাঠানো হচ্ছে। লকডাউন হচ্ছে কি না দেখতে। বাংলার লোক খেতে পাচ্ছে কি না দেখতে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উল্লেখ করা হচ্ছে। বুঝতে পারছেন কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?’’
র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট নিয়েও এ দিন মুখ্যসচিব সরব হন রাজীব সিংহ। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ২২০টি র্যাপিড টেস্ট হয়েছে। মুখ্যসচিবের কথায়, ‘‘আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা আরও বেশি টেস্ট করিনি। করলে, পুরো পরিশ্রমটাই বৃথা যেত। যে ক’টি রিপোর্ট এসেছে, তা-ও ঠিক কি না জানি না। কারণ, টেস্ট কিট-ই তো ত্রুটিযুক্ত।”
তিনি আরও জানান, বুধবার বিকেল পর্যন্ত রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্ত ৩০০ জন। মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল ২৭৪। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ জন। এখনও পর্যন্ত রোগ মুক্ত হয়েছেন ৭৯ জন। মৃতের সংখ্যা ১৫ থেকে আর বাড়েনি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা-পরীক্ষা হয়েছে ৮৫৫টি। তার মধ্যে পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে ২৬টি। এর পরেই মুখ্যসচিবের বক্তব্য, ‘‘বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছিল যে, রাজ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কম পরীক্ষা করাচ্ছে। এই তথ্যই স্পষ্ট করে দেয় যে, কম টেস্ট করে তথ্য লুকনো হচ্ছে না।’’
আরও পড়ুন: ‘সংক্রমণ রুখতে’ নয়া পদক্ষেপ, কোভিড হাসপাতালে মোবাইল নিষিদ্ধ করল নবান্ন