নয়াদিল্লি: এবার কি করোনাভাইরাসের ‘হটস্পট’ হয়ে উঠতে চলেছে দিল্লির নিজামুদ্দিন? সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে প্রশাসনের। আতঙ্কিত স্থানীয়রাও।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি করছে জনসন অ্যান্ড জনসন, ট্রায়াল হবে সেপ্টেম্বরে
গত ২২ মার্চ রবিবার দেশ জুড়ে ‘জনতা কার্ফু’ পালন হয়েছে। ২৪ তারিখ দেশ জুড়ে ঘোষণা হয়েছে লকডাউন। কিন্তু তার পরেও দিল্লির মারকাজ নিজামউদ্দিন মসজিদে ছিলেন শয়ে শয়ে দেশ-বিদেশি মানুষ। ইতিমধ্যেই ওই জমায়েতে যোগ দেওয়া অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত আরও অন্তত ২০০ জন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। ওই সম্মেলনের জেরেই দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
চলতি মাসের ১ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত চলা সেই জমায়েতে দেশ-বিদেশের ২০০০-এর বেশি প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় দেশজুড়ে লকডাউন শুরু না হলেও ততদিনে ভারতে করোনার প্রকোপের প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। ফলে বড় জমায়েত এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। সরকারিভাবে গত ১৬ মার্চ ৫০ জনের বেশি যে কোনও ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তখনও নিজামুদ্দিনের জমায়েত ঘিরে তেমন কোনও তৎপরতা শুরু হয়নি।
আরও পড়ুন: এবার করোনার বলি হাওড়ার মহিলা, রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩
কিন্তু গত সপ্তাহে শ্রীনগরে এক ধর্ম প্রচারকের মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জানা যায়, ওই বৃদ্ধ দিল্লির জমায়েতে হাজির ছিলেন। তারপর উত্তরপ্রদেশেও গিয়েছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীরে ফিরেও তিনি একাধিক ধর্মীয় সভায় যোগ দিয়েছিলেন। সেই সভায় উপস্থিত কয়েকজনের করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করোনা আক্রান্তের যোগসূত্র হিসেবে উঠে আসে নিজামুদ্দিনের জমায়েত।
জানা গিয়েছে, ওই জমায়েত থেকে তেলঙ্গানায় ফেরা ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে মৃত্যু হয়েছে আরও এক জনের। আন্দামান নিকোবরে ফিরে যাওয়া ১০ জনের করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি দেশ-বিদেশের কয়েকশো মানুষ। গতকাল সোমবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ওই মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি, আগে দিল্লিতে এবং পরে গোটা দেশে লকডাউনের জেরে ওই অনুষ্ঠানের পরে গন্তব্যে ফিরতে পারেননি অতিথিরা। তার জন্যেই মসজিদে ছিলেন।
এই ঘটনা সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে দিল্লি সরকার ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ওই অনুষ্ঠানে অন্তত ১২০০ মানুষ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফিরে গেলেও ছ’তলা ওই মসজিদে থেকে গিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের অন্তত সাড়ে আটশো প্রতিনিধি। ডরমিটরিতে থাকছিলেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই ওই মসজিদ সিল করে দিয়েছে প্রশাসন। সবাইকেই হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বহু মানুষ দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে খবর, গত কাল সোমবার তাঁদের প্রায় ৩০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অনেকের রিপোর্ট পজিটিভ।
আরও পড়ুন: করোনা এড়াতে হস্তমৈথুনে মন দিন, পরামর্শ নিউইয়র্কের স্বাস্থ্য দফতরের
প্রশাসনিক আধিকারিককরা জানিয়েছেন, একাধিক ছোটো ছোটো জমায়েত জড়ো হয় জামাতের সদর দফতরে। সেখানে কমপক্ষে ২,০০০ জন থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। ছ’তলা কমপ্লেক্সের পাশে রয়েছে নিজামুদ্দিন থানা। কাছেই রয়েছে খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া। এছাড়াও একেবারে নাকের ডগায় রয়েছে বস্তি নিজামুদ্দিন। যেখানে ২৫,০০০-এরও বেশি মানুষের বাস। তাই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয়দের।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিষয়টি নিয়ে তদারকি করা মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই জমায়েতে যোগ দেওয়া লোকজনের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তবে সেটা বিরাট কঠিন কাজ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রতিদিন বিষয়টির নির্যাস জানানো হচ্ছে। তিনিও নজর রাখছেন। শ্রীনগর ও হায়দরাবাদ মিলিয়ে এই জমায়েতে যোগ দেওয়া কয়েক জনের মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে জরুরি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ওই অনুষ্ঠানের শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্দেশে ২৫টিরও বেশি বাস ছেড়েছিল। সেই বাসে কারা ছিলেন, তাঁদের গন্তব্য কোথায়, তাঁরা কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, সেই খোঁজও শুরু হয়েছে কাল থেকে। নিজামুদ্দিন এলাকা জুড়ে চলছে ড্রোন নজরদারিও।
আরও পড়ুন: ভাইরাস মোকাবিলায় প্রস্তুত রাজ্য, সব জেলায় ব্যবস্থার তদারকি মুখ্যমন্ত্রীর