ওয়েব ডেস্ক: আর দু’দিন পরেই বাংলা নববর্ষ। অন্য বার হালখাতা, গণেশ পুজোর তোড়জোড়, খরিদ্দারদের মিষ্টি, নতুন ক্যালেন্ডারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে দম ফেলার ফুরসত পান না ব্যবসায়ীরা। এ বার অবশ্য সবই খাঁ-খাঁ করছে। পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। ক্ষতির মুখে খাতা, ক্যালেন্ডার তৈরির কারিগর, মিষ্টির দোকান, ফল ব্যবসায়ী, মৃৎশিল্পীরাও।
আরও পড়ুন: জেনে নিন করোনা মুক্ত ৪ দেশ যেভাবে ফিরছে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে
লকডাউন চলার জন্য এবছর অন্তত পঞ্জিকা ছাড়াই কাটাতে হতে পারে। পঞ্জিকা ও বাংলা ক্যালেন্ডার ছাপা হয়ে গেলেও তা ক্রেতাদের কাছে পর্যন্ত পৌঁছানো গেল না। যাকে কেন্দ্র করে মাথায় হাত প্রকাশক ব্যবসায়ীদের। মূলত এই বাংলা নববর্ষকে লক্ষ্য রেখেই পঞ্জিকার জন্য প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক ব্যবসায়ী। কিন্তু সেইসব পঞ্জিকা গুলি এখন বস্তাবন্দি অবস্থায় প্রকাশকদের গোডাউনে পড়ে রয়েছে। একদিকে যেমন আপামর বাঙালি কে নববর্ষে পঞ্জিকা বাংলা ক্যালেন্ডার ছাড়াই কাটাতে হবে।তেমনি অন্যদিকে এই প্রকাশকেরা বুঝতে পারছেন না এই লোকসান সামলাবেন কি করে?
পয়লা বৈশাখে বিভিন্নন দোকানগুলিতে হালখাতা করতে যাওয়ার সময় বাংলার ক্যালেন্ডারটি অবশ্যই দেওয়া হয় দোকান গুলির তরফে। কিন্তু এবার সেগুলি বিক্রি করার আর কোন উপায় নেই। লকডাউন উঠলেও সেই ভাবে বাংলার ক্যালেন্ডার বিক্রি হবে নাকি তা নিয়েও কোন নিশ্চয়তা নেই। নববর্ষের হালখাতা পুজোর জন্য পুরোহিত নিয়ে টানাটানির এই ছবি বাঙালির কাছে বহু পুরনো। কিন্তু করোনার প্রভাবে এ বার বদলেছে সেই ছবিও। ফোন না-ধরা পুরোহিতও এখন অপেক্ষায় রয়েছেন, কত ক্ষণে ফোনটা বাজবে আর গণেশ বা লক্ষ্মীপুজোর বরাত আসবে।
আরও পড়ুন: বাড়ছে উদ্বেগ! দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮০০০ ছাড়াল, মৃত ২৭৬
শুধু নববর্ষের হালখাতা পুজোই নয়, চৈত্র থেকে টানা কয়েক মাস বিভিন্ন পুজো এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে এখন আর তাঁরা ডাক পাবেন কি না, তা নিয়েই চিন্তায় দিন কাটছে অধিকাংশ পুরোহিতের। এমনই এক পুরোহিতের কথায়, ‘‘পুজো করেই কিছু রোজগার হত। সামাজিক ব্যবধান-বিধির জেরে এখন তো সব পুজো-অনুষ্ঠানও বন্ধ।’’ লকডাউনের জেরে পুরোহিতদের রোজগারে যে টান পড়েছে, সে কথা মানছে রাজ্য সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টও। সংগঠনের সম্পাদক শ্রীধর মিশ্র বললেন, ‘‘কিছু পুরোহিতের খুবই অভাবে দিন কাটছে। বিষয়টি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন জানিয়েছি।’’
মন ভাল নেই বস্ত্র ব্যবসায়ীদেরও। আসলে পয়লা বৈশাখ মানে তো আর শুধু হালখাতা নয়। তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মিষ্টি-ক্যালেন্ডার-কার্ড-ঠাণ্ডা পানীয় ব্যবসা। রয়েছে ফল-ফুল-পুজো-পুরোহিতও। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার জোগাড়। ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ। লকডাউন ৩০ এপ্রিল শেষ হলেও অধিকাংশ মানুষই মনে করছেন, ওই মেয়াদ আরও বাড়তে পারে।সে ক্ষেত্রে দোকানগুলোতে এ বছর ঘটা করে অক্ষয় তৃতীয়ার উৎসব পালন করা কার্যত অসম্ভব।
আরও পড়ুন: লকডাউন ভঙ্গকারীদের হামলায় হাত খোয়া গেল পুলিশের,আহত আরও ২