ওয়াশিংটন: ভাইরাস নোভেল করোনার তাণ্ডবে অপরিশোধিত তেলের বাজারেও মন্দা দেখা দিয়েছে। গত কুড়ি বছরের মধ্যে মার্কিনী তেলের দাম সর্বনিম্ন স্থানে পৌঁছেছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিশ্বজুড়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কোথাও লকডাউন চলছে, কোথাও চলছে শাটডাউন। রাস্তায় যানবাহন নেই, কল-কারখানা চলছে না। ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমছিলই। স্বাভাবিক কারণেই তাই অপরিশোধিত তেলের চাহিদাও কমছিল, সেই সঙ্গে বাড়ছিল তা মজুত করার সংকট।
কিন্তু সেই সংকট সোমবার ভারতীয় সময়ের প্রায় মধ্য রাতে আকাশ ছুঁয়ে ফেলল, যখন নিউইয়র্কে মার্কিন অপরিশোধিত তেলের মে মাসের জন্য ট্রেডিংয়ে দাম শূন্য ডলারেরও নীচে চলে গেল। বাজার যখন বন্ধ হয়েছে, তখন মে মাসের তেলের জন্য ব্যারেল প্রতি দাম দাঁড়িয়ে -৩৭.৬৩ ডলার।
এই ছবিটা কতটা ভয়াবহ তা ছোট উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। দশ বছর কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সময় অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ১২০ থেকে ১৩০ ডলার। সেই কারণে তখন পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয় সরকার। তার রাজনৈতিক খেসারতও দিতে হয়। কেন্দ্রে মোদী জমানার শুরু থেকেই অপরিশোধিত তেলের দাম কম। ব্যারেল প্রতি কম বেশি ৭০ থেকে ৮০ ডলার ছিল। তাও পেট্রল, ডিজেলের পাইকারি দাম কমায়নি সরকার। বরং অপরিশোধিত তেলের দাম কমায় যে লাভ বিপণন সংস্থাগুলির হচ্ছিল, ততটা টাকা সরকার কর বসিয়ে আয় বাড়িয়ে নেয়। এ বছর গোড়ার দিকে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৬০ টাকা প্রতি ব্যারেল। তাও ভারতে পেট্রল ও ডিজেলের দাম কমেনি।
আরও পড়ুন: হার্টের অপারেশন পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় কিম! নজর রাখছে মার্কিন গোয়েন্দারা
কিন্তু সেই ৬০ ডলার থেকে দাম পড়তে পড়তে সোমবার তেলের দামই পিছলে গেল। এদিন নিউইয়র্কে তেলের ট্রেডিংয়ের সময় নাটকীয় ভাবে দাম পড়তে দেখা যায়। প্রথমে ব্লুমবার্গ জানায় ইউএস বেঞ্চমার্ক টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটে মে মাসের ডেলিভারির জন্য দাম ব্যারেল প্রতি ১ ডলার হয়ে গিয়েছে। দিন যত এগোয় তা আরও পড়তে থাকে। দাম হয়ে যায় ব্যারেল প্রতি ১ সেন্ট। তার পর ট্রেডিং বন্ধ হওয়ার সময় তা ব্যারেল প্রতি (-)৩৫.৬৩ ডলারে দাঁড়ায়। যার অর্থ যারা মে মাসে তেল নেওয়ার জন্য কনট্রাক্ট নিয়েছে, তারা সেই তেলের ডেলিভারি নিতে চাইছে না। কারণ মজুতের জায়গাই নেই। ফলে তাদের এখন উল্টে লোককে টাকা দিতে হচ্ছে যাতে তারা তেলটা নিয়ে নেয়।
অপরিশোধিত তেলের দামের এই বিপুল পতনের কারণ হিসাবে করোনাকেই দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, করোনা রুখতে অনেক দেশই লকডাউনের পথে হেঁটেছে। তার ফলে তেলের চাহিদাও প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে। বন্ধ আন্তর্জাতিক উড়ানও। দাম তলানিতে নেমে যাচ্ছে দেখে, ১০ শতাংশ তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)-এর সদস্য এবং মিত্র দেশগুলি। কিন্তু তাতেও পতন ঠেকানো যায়নি।
মার্কিন মুলুকে তেলের দামের এই ঐতিহাসিক পতনকে দেখে ভারতের পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ দেশের বাজারে এই পতনের তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। তার কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ওঠানামা করলেও, তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দেশে খুচরো বিক্রির ক্ষেত্রে খুব কম সময়েই দাম কমানো হয়। এর আগে ২০১৫ সালে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম পৌঁছেছিল ২৮ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ২১৪৮ টাকা)। কিন্তু তার প্রভাব বাজারে তেমন একটা পড়েনি।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ লক্ষ ছাড়াল, মৃত ১ লাখ ৬২ হাজার