নাগপুর: প্রধানমন্ত্রীর পর এবার ময়দানে সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত। বৈষম্য ভুলে করোনা আক্রান্তের সেবায় সঙ্ঘ সদস্যদের সাহায্য চেয়ে আবেদন জানালেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। নিজামুদ্দিন মারকাজের উল্লেখ না করে তিনি জানান, যদি কেউ ভুল করে থাকেন, তার ভিত্তিতে সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করা অনুচিত।
রবিবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সদস্যদের উদ্দেশে একটি বাক্যে বার্তা দিয়েছেন ভাগবত। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ধৈর্যশীল ও শান্ত থাকতে হবে। কোনও আতঙ্ক বা ক্ষোভের আবহ সৃষ্টি করতে দেওয়া চলবে না, কারণ তার সুযোগ নেবে দেশ-বিরোধী শক্তি।’ তিনি জানিয়েছেন, কেউ কোনও ভুল করলে তার ভিত্তিতে সমগ্র সম্প্রদায়কে বিচার করা ঠিক হবে না। কিছু কিছু মানুষ এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে তৎপর হবে এবং রাষ্ট্র বিরোধী পদক্ষেপ করার চেষ্টা করবে।
অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) প্রকাশ্যে ভারতের সমালোচনা করে বলেছে, ‘ভারতে মুসলিম বিদ্বেষের যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিক সে দেশের সরকার। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষিত করা হোক।’ মার্কিন মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়েছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক ব্যবহার করা হচ্ছে গুজরাতের হাসপাতালে।
করোনা ত্রাসের মধ্যে নরেন্দ্র মোদী যখন আরব দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক দৌত্য মসৃণ করার চেষ্টা করছেন, ঠিক সেই সময়েই নতুন অভিযোগে চরম অস্বস্তিতে সরকার। তবিলিগি জামাত নিয়ে দেশ জুড়ে সোশ্যাল মিডিয়া-সহ বিভিন্ন স্তরে মুসলিম-বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে বলে ভারতের দিকে আঙুল তুলছে আন্তর্জাতিক মহল।
আরও পড়ুন: ৩ মে-র পরেও চলুক লকডাউন, দাবি বাংলা-সহ ৫ রাজ্যের,কাল মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে মোদী
গোটা বিষয়টি সামলাতে কোমর বেঁধেছে ভারত সরকার। আরব দেশগুলিতে প্রায় ৮০ লক্ষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত বসবাস করেন। নয়াদিল্লি কোনও ভাবেই চায় না সে দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হোক, যাতে দলে দলে ভারতীয়দের আপৎকালীন ভিত্তিতে ফিরিয়ে আনতে হয়। সে কারণে ৬টি আরব দেশের সঙ্গে বারবার ফোনে কথা বলে সে সব দেশে চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মী এবং পর্যাপ্ত ওষুধ পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া করোনা-পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আরবকে পাশে পাওয়া যে জরুরি, সেটাও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।
ক্ষত মেরামতির জন্য একই সঙ্গে আসরে নেমেছে ভারত সরকার এবং বিজেপি। দলের নেতা মুখতার আব্বাস নকভি ওআইসি-র মন্তব্য সম্পর্কে বলেন, “সংখ্যালঘু এবং মুসলমানদের স্বর্গরাজ্য হল ভারত। তাঁদের সামাজিক অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় অধিকার এখানে সুরক্ষিত। কেউ যদি নিজেদের অন্ধবিশ্বাস থেকে কথা বলে আলাদা কথা। বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই অভিযোগ করা উচিত।”
তাহলে কি প্রতিক্রিয়া বেশ কড়া ধাঁচের হয়েছে? সে কারণেই কি প্রধানমন্ত্রীর পর সংঘ প্রধান ভাগবতকেও মুখ খুলতে হল? প্রধানমন্ত্রী বিদ্বেষপোষণ কারীদের উদ্দেশে বার্তায় জানিয়েছিলেন কোভিড-১৯ জাত-ধর্ম দেখে হামলা করে না। এবার নিজামুদ্দিনের নাম না করে সে বার্তা মোহন ভাগবত যে সংঘকর্মীদের দিলেন তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারও।
আরও পড়ুন: লকডাউনে দুঃস্থদের মুখে খাবার দিতে জমি বেচে দিলেন তাজাম্মুল ও মুজাম্মিল