নয়াদিল্লি: টানা ৪০ দিন। সর্বকালের সর্ববৃহৎ লকডাউনের পথে এগোচ্ছে ভারত। আর এর পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ দিল্লির নিগমবোধ ঘাটের কাছের একটি শ্মশানের এই ছবি। যাতে দেখা যাচ্ছে অনাহারে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা শেষকৃত্য সারতে আসা মৃতের পরিজনদের উচ্ছিষ্ট পচা কলা বেছে বেছে নিয়ে যাচ্ছেন, খাবেন বলে। খিদের জ্বালায় তাঁরা এতটা মরিয়া যে, শশ্মানে পড়ে থাকা পচা ফল খেতেও আপত্তি নেই তাঁদের।
আরও পড়ুন: লকডাউনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে? টাকা পাঠাবে রাজ্য সরকার
শুকনো জমিতে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য পাকা কলা। রোদের তেজে কোনওটা পুরো পচে গিয়েছে। কিছু আবার ভাল অবস্থাতেও রয়েছে। এই কলার স্তূপের পাশেই ব্যাগ হাতে জড়ো হয়েছেন কয়েকজন। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কলার মধ্যে থেকে বেছে বেছে ভাল কয়েকটা হাতের ব্যাগে ভরে নিচ্ছেন তাঁরা। সম্প্রতি শিউরে ওঠার মত এমনই এক দৃশ্য প্রকাশ্যে এসেছে। কলা বাছাই করার সময় একজনকে বলতে শোনা গিয়েছে, “এমনিতে তো কলা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বেছে বেছে ভালগুলো নিতে পারলে এখন কাজ চলে যাবে।“ আরেকজন বলছিলেন,’যেভাবেই হোক পেট তো ভরাতেই হবে। আর কলাতে পোকা তো আর পড়ে না।’ ক্ষুধার্ত শ্রমিকেদের নিজেকে দেওয়া এই সান্ত্বনাই হয়তো লকডাউনের সময় ‘দরিদ্র’ ভারতের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল।
Watch | "Have to fill our stomach": Migrant workers scour through piles of rotten bananas in Delhi's Nigambodh Ghat amid #CoronavirusLockdown. Report by NDTV's @Saurabh_Unmute pic.twitter.com/426D5OhIQq
— NDTV (@ndtv) April 15, 2020
আরও পড়ুন: চড়ছে আতঙ্কের পারদ! ২৪ ঘণ্টায় ২৬০০ মৃত্যুর রেকর্ড আমেরিকায়
জানা গিয়েছে, এদিন এই শশ্মানে জড়ো হওয়া লোকেদের বেশিরভাগই ভিনরাজ্যের শ্রমিক। এতদিন ধরে দেশে করোনা মোকাবিলায় লকডাউন চলছে। যার ফলে কাজ হারিয়েছেন তাঁরা। সঞ্চয়ের সবই প্রায় শেষ।গত কয়েকদিনে লকডাউনের বহু নির্মম ছবি চোখে পড়েছে। কিন্তু এ জন্য অন্য মাত্রার।
২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করতেই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন। কাজ খুইয়ে, অস্থায়ী বাসস্থান খুইয়ে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন তাঁরা। ওদের কাছে মাথা গোঁজার জন্য বাড়ি নেই, রোজগারের জন্য কাজ নেই, খাবার জন্য অন্ন নেই। তারপর আরও ১৯ দিনের জন্য বেড়েছে লকডাউনের মেয়াদ। আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জীবন। এখন বেঁচে থাকার ভরসা বলতে সরকারি সাহায্য (যা কিনা কখনও এসে পৌঁছায়, আবার কখনও এসে পৌঁছায় না) আর মনের জোর। কিন্তু, মনের জোর দিয়ে তো আর দিনের পর দিন অনাহারে বেঁচে থাকা যায় না। ‘পাপী পেট’ চায় খাবার। হোক না সে শ্মশানে পড়ে থাকা পচা ফল। হোক না শেষকৃত্যে ব্যবহার হওয়া উচ্ছিষ্ট। কিছুক্ষণের জন্য হলেও ওই খেয়ে পেটের জ্বালা তো জুড়োবে।
আরও পড়ুন: রাজ্যে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, তার মধ্যেই চলছে রাজ্যপাল- মুখ্যমন্ত্রীর তরজা