কলকাতা: রোগীদের শরীরে প্লাজমা থেরাপি করে প্রাথমিক পরীক্ষায় ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে দিল্লিও (Delhi)। এবার একই পথে হাঁটবে বাংলাও (West Bengal)। আগামী সপ্তাহ থেকেই এই বিষয়ে পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানা গেছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে এই পরীক্ষা করবে CSIR-IICB।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, করোনায় আক্রান্ত সুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দেহে এই রোগের মোকাবিলায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই অ্যান্টিবডি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম এমন মানবশরীরে পাঠালে কী ফল হয় তা দেখতেই এই গবেষণা। চিকিৎসার পরিভাষায়, এর নাম ‘প্লাজমা কনভালসেন্ট থেরাপি’। চিন এই থেরাপি প্রয়োগ করে সুফল পাওয়ার দাবি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা-সহ কিছু দেশ এই প্রক্রিয়ায় পথ খোঁজা সম্ভব কি না, তা দেখছে। এ দেশে কেরল, দিল্লির পরে সেই গবেষণার কাজ বাংলাতেও শুরু হতে চলেছে।
আক্রান্তের রক্তরসকে কাজে লাগিয়ে কোভিড মোকাবিলার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে রাজ্য যে আগ্রহী তা আগেই জানিয়েছিল নবান্ন। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি’ (আইআইসিবি)। সেই ট্রায়ালের অন্যতম অংশীদার হতে চলেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমিউনো হেমাটোলজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন (আইএইচবিটি) বিভাগ। আইসিএমআর-এর অনুমতি পেলে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই আক্রান্তের শরীর থেকে সংগৃহীত প্লাজমার প্রক্রিয়াকরণ মেডিক্যাল কলেজে শুরু হবে বলে স্বাস্থ্য দফতরের খবর।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ডিএ-তে কোপ, সরব মনমোহন- রাহুল
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের আইএইচবিটি বিভাগের প্রধান প্রসূন ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে প্লাজমা প্রক্রিয়াকরণ হবে। দাতার থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে তা অপর করোনা আক্রান্তের শরীরে দেওয়া হবে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। এই পর্বে গবেষণার দায়িত্বে রয়েছেন আইডি-র মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান বিশ্বনাথ শর্মা সরকার, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান বিভূতি সাহা এবং সংক্রামক রোগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর যোগীরাজ রায়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রোগ প্রতিরোধের গতিবিধি পর্যালোচনা করবে আইআইসিবি।
করোনা থেকে সেরে ওঠা হাবড়ার এক তরুণী-সহ আরও কয়েক জন গবেষণার শরিক হতে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। এ দিন হাবড়ার তরুণী বলেন, ‘‘এই রোগের প্রতিষেধক এখনও তৈরি হয়নি। আমার দান করা প্লাজমায় যদি অনেকে সুস্থ হন, তার থেকে ভাল কিছু হতে পারে না।’’
তবে প্রশ্নও আছে! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’ একটা কথা বারে বারে বলছে এখন যে, যার করোনা হয়েছিল তিনি সুস্থ হওয়ার পর আবার যে করোনায় আক্রান্ত হবেন না এমন কিন্তু নয়। কারণ এই মারণ ভাইরাস নিজেকে বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তন বিবর্তন করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। তাই শরীর ভেদে, পরিবেশ ভেদে, আবহাওয়ার ভেদে সে কিন্তু টিকে থাকছে। আর সেটাই বিপদ বাড়াচ্ছে। তাইও প্লাজমা থেরাপিতে রোগ মুক্তি ঘটলেও তা ভবিষ্যতে দ্বিতীয়বার আবার সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে কিনা সেই পরীক্ষা কিন্তু বাকি আর সেটাই সব থেকে কঠিন পরীক্ষা। কারণ একবার করোনা থেকে সেরে ওঠার পর দ্বিতীয়বার সেই দেহে যদি আবারও এই মারণ ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে প্রবেশ করে তখন সেই শরীর সেই ধকল সহ্য করতে পারবে কিনা সেটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: ১৯ হাজার মাইল বেগে ছুটে আসছে ‘মাস্ক পরা’ উল্কা! ২৯ এপ্রিল নিয়ে আশঙ্কায় বিজ্ঞানীরা