#নয়াদিল্লি: গত ২ জুন, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে জলের জন্য কী ভাবে পানীয় জলের গাড়ির পেছনে কার্যত ছুটছেন মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ জেলার ফুলম্বাড়ির মহিলারা। তাঁদের লক্ষ্য যে ভাবেই হোক, অন্তত এক বালতি জল নিতেই হবে।
একটা ভিডিও দিয়ে হয়তো দেশের সামগ্রিক ছবিটা বোঝানো যাবে না। একটা তথ্য যদি দেওয়া হয়, আপনি চমকে যেতে বাধ্য। কর্নাটকের ৮০ শতাংশ এবং মহারাষ্ট্রে ৭২ শতাংশ জেলা তীব্র খরার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই জলসংকটের ফলে চাষবাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে এই সব অঞ্চলের কৃষকরা এখন বড়ো বিপদের মুখে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কী ভাবে বাঁচবেন সেটাই ভেবে উঠতে পারছেন না তাঁরা। এই জলসংকটের মুখোমুখি মহারাষ্ট্রের ৪,৯২০ গ্রাম এবং ১০,৫০৬টি জনপদ। এই সব অঞ্চলের মানুষের জন্য মহারাষ্ট্র সরকারের তরফ থেকে ছ’হাজারটি জলের ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এটা সবাই বুঝতে পারবেন যে, এতগুলো অঞ্চলের এত মানুষের জন্য এই সংখ্যক ট্যাঙ্ক একদমই পর্যাপ্ত নয়। জলসংকটের জন্য কর্নাটকের বিভিন্ন জেলায় স্কুলে গরমের ছুটি আরও এক সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হয়েছে। মহারাষ্ট্র, কর্নাটকের পাশাপাশি তামিলনাড়ুতেও খরা পরিস্থিতি খুব খারাপ হওয়ার দিকে এগোচ্ছে।
যে চারটে জলাধার থেকে চেন্নাইয়ের জল আসে, সেই জলাধারগুলি ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত খালি হয়ে গিয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে তামিলনাড়ু সরকার ২৩৩ কোটি বরাদ্দ করেছে দ্রুত জল সরবরাহের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য। জলাধারের এই অবস্থার ফলে চেন্নাই শহরাঞ্চলে জলের পরিষেবায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শহরের বাসিন্দাদেরও জলের গাড়ির সামনে লম্বা দিতে দেখা যাচ্ছে। অনেক সময়ে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এই জল থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। তাঁদের সন্দেহ নিকাশির জলের সঙ্গে মিশে যাওয়া জলই তাঁদের সরবরাহ করা হচ্ছে।
দক্ষিণ ভারতের পাশাপাশি উত্তর ভারতেও একই জিনিস। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা দিয়ে এ বার দেশে বর্ষাও ঢুকছে দেরিতে। আবার বর্ষা কেমন পারফর্ম করবে, সেই নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহে রয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। ভারতে মোট ভূগর্ভস্থ জলের মাত্র ৩৭ শতাংশ জলই আমরা ব্যবহার করতে পারি, কারণ বাকিটা দূষিত হয়ে যায়। ভারতের জলের চাহিদার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মেটায় এই ভূগর্ভস্থ জল। কিন্তু সেই জলের মাত্রা অস্থিতিশীল গতিতে কমে যাচ্ছে। নীতি আয়োগ জানিয়েছে, এর ফলে ২০২০ সালের মধ্যে দিল্লি, হায়দরাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের ২১টা শহরের ভূগর্ভস্থ জল শেষ হয়ে যাবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ ভারতবাসী আর পানীয় জলও পাবেন না বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইনদওরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির করা একটি সমীক্ষায় একটি তথ্য উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, প্রতি আট-ন’বছর অন্তর একটা ভয়াবহ খরার সম্মুখীন হয় ভারত। কিন্তু তার পরেও খরাপ্রবণ ৬০ শতাংশ জেলাতেই এই খরা মোকাবিলা করার মতো কোনো ব্যবস্থাই নেই। পাশাপাশি দেশের ৬৩৪টা জেলার মধ্যে অন্তত ১৩৩টা জেলা এমন রয়েছে, সেখানে প্রতি বছরই খরা হতে পারে। সিংহভাগ জেলাই রয়েছে ছত্তীসগঢ়, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থানে।