শ্রীনগর : পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার স্মৃতি এখনও তরতাজা। কিন্তু উপত্যকায় সাধারণ যুবকদের মনােবলে বিন্দুমাত্র চির ধরেনি, বরং বেড়েছে, তার প্রমাণ ফের পাওয়া গেল সেনাবাহিনীতে নিয়ােগের একটি ক্যাম্পে। শনিবার জম্মু-কাশ্মীরের দোদা জেলায় সেনার চাকরি পেতে নাম লেখান প্রায় ২০০০ জন কাশ্মিরী যুবক।পুলওয়ামা হামলার পর দেশজুড়ে বেড়েছে কাশ্মিরীদের উপর নির্যাতন। কাশ্মিরীদের বয়কটের ডাক দিয়েছেন খােদ ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়। এই অবস্থায় কাশ্মিরী যুবকরা ফের | একবার প্রমাণ করলেন তারা নিজেদের ভারতবাসী বলেই মনে করেন। সেই কারণেই সেনা দলে নাম লেখানাের লাইনে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা।
দোদার স্পাের্টস স্টেডিয়ামে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মুবান্সির আলি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, দেশ ও পরিবারকে বাঁচাতে ভারতীয় সেনা বাহিনীতে যােগ দিতে চাই। এখন আমার অনুপ্রেরণা উইং কমান্ডার অভিনন্দন। পাকিস্তানী সেনার কবল থেকে বীরবিক্রমে ফিরে এসেছেন তিনি। উনিই এখন আমাদের আশার আলাে। বেকার সমস্যায় জর্জরিত জম্মু-কাশ্মীর। সারা দেশের চেয়েও উপত্যকায় বেকারত্বের হার বেশি। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উপত্যকায় ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সের যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ২৪.৬ শতাংশ, যা ওই সময় কেন্দ্রীয় হারের চেয়েও বেশি। বর্তমানেও সেই পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হয়নি।
আবার ২০১৭ সালে জম্মু কাশ্মীর সরকারের একটি অর্থনৈতিক সমীক্ষায় উঠে আসে, উপত্যকায় বেকারত্বের হার বেশি হওয়ার অন্যতম। কারণ সরকারি তথা প্রশাসনিক সহযােগিতার অভাব। নিয়ােগে স্বচ্ছতার অভাবও অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসে ওই সমীক্ষায়। এই অবস্থায় সেনাবাহিনীতে নিয়ােগ অধিকাংশ যুবকের কাছেই সুবর্ণ সুযােগ। বেকারত্ব এবং তার জেরে অভাব-অনটনের সুযােগ নিয়ে উপত্যকার অল্পবয়সী যুবকদের অনেকেরই মগজ ধােলাই করে জঙ্গিরা তাদের দলে নাম লেখায় বলে অভিযােগ দীর্ঘদিনের। কাশ্মীরিদের একটা অংশ জঙ্গিদের সমর্থন করেন বলেও অভিযােগ ওঠে নানা শিবির থেকে। লাইনে দাঁড়ানাে যুবকরা অবশ্য উল্টোটাই মনে করেন ।ক্যাম্পের বাইরে অপেক্ষারত এক যুবক বলেন, এখানকার যুবকদেরই যদি বেশি করে উপত্যকায় নিয়ােগ এবং পােস্টিং দেওয়া হয়, তা হলে অনেক সুবিধা হবে। স্থানীয়দের ভাবাবেগ, ভাষা, দাবিদাওয়া বুঝে সেই মতাে পদক্ষেপ করতে পারব আমরা। এই প্রথম নয়। এর আগেও উপত্যকার সেনা নিয়ােগ ক্যাম্পগুলিতে চোখে পড়েছে উপছে পড়া ভিড়। পুলওয়ামা হামলার চারদিন পরেই মাত্র ১১১টি শূন্যপদের জন্য বারামুলার একটি ক্যাম্পে লাইন দিয়েছিলেন প্রায় ২৫০০ যুবক। তাঁদের অধিকাংশেরই বক্তব্য ছিল, ‘পরিবারকে বাঁচানাের পাশাপাশি, দেশের সেবা করতে চাই।
অন্যদিকে, শনিবার সেনা প্রশিক্ষণ সমাপ্তি অনুষ্ঠানে লেফটানেন্ট কর্নেল | জেনারেল কানওয়াল জিৎ সিং ধিলাে কাশ্মীরি মায়েদের কাছে আবেদন করে বলেন,’ছেলেদের বিপথগামী হওয়া থেকে।আটকান।| কাশ্মীরের সন্তানদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা নেব।’ওই দিন কাশ্মীরের একটি রেজিমেন্ট থেকে মােট ১৫২ ক্যাডার সেনা প্রশিক্ষণ শেষ করেন। তার মধ্যে ২৬ জন কাশ্মীরের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।