লখনউ: লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগেই কৃষকসম্মাননিধি নামে প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রকল্পে দেশের প্রত্যেক কৃষক বছরে ৬০০০ টাকা পাবেন। তিনবারে ২০০০ টাকা করে আর্থিক অনুদানে ভাগ করা হয়েছিল এই প্রকল্পকে। কিন্তু মাত্র ২০০০ টাকায় কী দেনা শোধ হয়, প্রশ্ন তুলেছেন যোগীর রাজ্যের এক আলু চাষী।
সেই কারণে ধানমন্ত্রীর কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের টাকা ফিরিয়ে দিলেন প্রদীপ শর্মা নামে ৩৯ বছরের এক কৃষিজীবী।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লিখে উত্তরপ্রদেশের এই আলুচাষি জানিয়েছেন, প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে তাঁর। এই ঋণ শোধ করা কখনই সম্ভব নয় তাঁর। তিনি আর বেঁচে থাকতে চান না।সরকারের দয়ার দান চান না, তাই মানি অর্ডার করে ফিরিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের দু’ হাজার টাকাও। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে আত্মহত্যার অনুমতি দিলে তিনি বেঁচে যাবেন বলে জানিয়েছেন প্রদীপ শর্মা।
আগ্রার এই আলুচাষী জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর পরিবার দৈনিক গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থাটুকও করতে পারছেন না একেবারেই। এর আগেও তিনি জেলাশাসককেও চিঠি লিখেছেন। ২০১৬ সালে শস্যের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পরে সরকারের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন প্রদীপ। কিন্তু তিনি উত্তর পাননি সে চিঠির।পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দিল্লি দিয়েছিলেন প্রদীপ। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন, কিন্তু ফিরেছিলেন খালি হাতে। সেই সময় তাঁর কাকাও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ঋণ শোধ করতে না পারার চিন্তায়। তাই বাধ্য হয়েই আত্মহত্যার পথই বেছে নিতে চাইছেন প্রদীপ। দেনা শোধ করতে নিজের বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন পরিবারকে নিয়ে ছোট্ট একটি ভাড়ার বাড়িতে থাকেন তিনি। এই অবস্থায় সরকারি প্রকল্পের দু’ হাজার টাকা তাঁর কোনও কাজে আসবে না, তাই মুখ্যমন্ত্রীকে সেই টাকা ফেরত পাঠিয়েছিলেন, সংবাদ সংস্থাকে এমনটাই জানান ওই কৃষিজীবী ।
ফলন ভাল হলেও প্রায় প্রতি বছরই ফসলের দাম না পেয়ে হতাশ হতে হয় চাষিদের। মাঝেমধ্যেই আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। অথচ সরকার সেসব নিয়ে উদাসীন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভও কম হয়নি। চাষিদের সেই চিরাচরিত ছবিই আরও একবার সামনে নিয়ে এলেন এবং প্রতিবাদ করলেন প্রদীপ। ভোটের মুখে যা মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট, এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এর আগে ফসল বিক্রির টাকা পাঠিয়ে অভিনব প্রতিবাদ করেছিলেন মহারাষ্ট্রের কৃষক সঞ্জয় শাঠে। কৃষকদের দুর্দশার কথা জানাতেই, নাসিকের নিফাদ তহশিলের সম্ভ্রান্ত চাষি সঞ্জয় বলেছিলেন, ‘‘ফলন ভালই হয়েছিল। স্থানীয় নিফাদ পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি এক টাকা দর দেয় ব্যাপারীরা। শেষ পর্যন্ত এক টাকা চল্লিশ পয়সা দরে রফা হয়। ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে হাতে পাই মাত্র ১০৬৪ টাকা। সেই টাকাই পাঠিয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে।’’