Site icon The News Nest

উন্নয়ন প্রকল্পেই জোর মুখ্যমন্ত্রীর,কৃষকদের জন্য ১০ হাজার কোটি ঘোষণা

mamata981237

লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে জন পরিষেবার ওপর জোর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বোলপুর গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তাদের এমনই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই প্রশাসনিক কর্তাদের বললেন মানুষকে অযথা হয়রান করাবেন না যথাযথ পরিষেবা দিন৷
বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের বেশির ভাগ জুড়েই ছিল কৃষক ও কৃষি-সমস্যার প্রসঙ্গ। সেখানেই প্রকল্পের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যা বলা হয়েছে, তার জন্যই ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এর বাইরে আমি আর কিচ্ছু দিতে পারব না। প্রচুর স্কিম দিয়েছি। আমাকে বিক্রি করলেও আর কিছু পাওয়া যাবে না!’মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, ইতিমধ্যেই চাষিদের খাজনা মকুব করা হয়েছে। চাষের জমি মিউটেশন করার জন্য এখন আর কোনও ফি দিতে হয় না। এ বার কৃষকের মৃত্যু হলে ১৫ দিনের মধ্যেই প্রকল্পের সুবিধা পাবে সংশ্লিষ্ট পরিবার। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে চেক ড্যাম তৈরি করেছে। আগামী দিনে আরও দু’হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে সেচ ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করা হবে। এই সব মিলিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ বলে দাবি মমতা।
এরই সাথে তিনি জানতে চান বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কি অবস্থায় রয়েছে? এরপরে আধিকারিকরা বলেন বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে৷ ২০২০ সালে শেষ হবে কাজ৷ এদিন নলহাটি থেকে মোরগ্রাম জাতীয় সড়কের অবস্থা নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী৷তিনি বলেন কেন তিন মাস পর পর রাস্তা করতে হবে? ৩ মাস অন্তর সরকারের টাকা জলে যাবে এটা ঠিক নয়৷ এমন ভাবে টেন্ডার করুন যাতে কংক্রিটের রাস্তা করে দেওয়া যায়৷ পাশাপাশি এদিন বোলপুরে থেকে হাওড়া কর্পোরেশনে ১০ দিন ধরে আবর্জনা পড়ে রয়েছে সে নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কলকাতার পাশেই হাওড়া একটা কর্পোরেশন, সেখানে ১০ দিন ধরে আবর্জনা পড়ে রয়েছে৷ আমার কাছে একের পর এক ফোন আসছে, অ্যাডমিনিস্ট্রেটার কি করছে ওখানে। তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিন৷’এদিন বীরভূমের ৬টি পৌরসভার কি অবস্থায় রয়েছে সেটিও জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী৷ এলাকার সৌন্দর্যায়ন করার জন্য প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে বলেন তিনি৷ তিনি বলেন ‘শহরকে সাজিয়ে তোলার জন্য ভালো আলো লাগান, হাসপাতালগুলির পার্শ্ববর্তী এলাকায় শৌচাগার করুন৷ মানুষকে পরিষেবা দিন, মানুষের জন্য কাজ করুন৷ কাজ না করলে আমি কাউকে রেয়াত করব না৷’
নির্বাচনের কথা উল্লেখ না করলেও মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু নির্বাচনকে মাথায় রেখে বীরভূমের ঝাড়খণ্ড সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করতে জেলা পুলিস সুপার শ্যাম সিংকে নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু নির্দেশই নয়, সীমান্ত এলাকায় রাখা হচ্ছে ড্রোন। উল্লেখ করা যেতে পারে, বীরভূমে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বা রাজনৈতিক সঙ্ঘর্ষে বারবার ঝাড়খণ্ড থেকে বিজেপি–র লোক নিয়ে আসার অভিযোগ উঠেছিল।
বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বোলপুরে আসেন। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। হেলিপ্যাডে অনুব্রত মণ্ডলকে দেখে বলেন, ‘‌তোদের শান্তিনিকেতন এত ভিআইপি!‌ জায়গাও আছে। একটি স্থায়ী হেলিপ্যাড কেন করছিস না?‌’‌ এদিন গ্রামীণ হস্তশিল্প এবং ক্ষুদ্রশিল্পের ওপর জোর দেন। হঁাস ও পোলট্রির জন্য রাজ্য সরকার যে সব সুযোগ–সুবিধা দিচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তা জানিয়ে দেন প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব। এদিন তিনি জানান, যে সমস্ত পুরসভায় প্রশাসকরা রয়েছেন, সেখানে কোথাও কোথাও নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। তা একেবারেই কাম্য নয়। মানুষের যেন কোনও সমস্যা না হয়। সমস্যা যদি হয়, তা দ্রুত মেটাতে হবে। পুর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের সচিব সুব্রত গুপ্তকে হস্তক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি ‌বিষয়টি দেখতে এবং প্রশাসনের ওপর মনিটরিং কমিটি করার নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রথম থেকেই পথ–‌দুর্ঘটনার লাগাম টানতে প্রত্যেকটি জেলা পুলিসকে সতর্কতার পাশাপাশি কড়া হওয়ার নির্দেশ দেন। বৈঠকে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরি, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব উপস্থিত ছিলেন।‌‌
বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য রোখার ভার দিলেন জেলা প্রশাসনের ওপর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট নির্দেশ, স্থানীয় থানার আইসিরা নন, বালি পাচার রুখতে বসানো সিসিটিভিতে নজর রাখবেন স্বয়ং জেলাশাসক।
বুধবার বোলপুর রাঙা বিতান গেস্ট হাউসে রাত্রি বাস করে বৃহস্পতিবার ইলামবাজার কামারপাড়া ময়দানে জনসভায় যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই জনসভা থেকেই একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী৷

Exit mobile version