নয়াদিল্লি : তাঁর খাস তালুক গুজরাটে সভা করছে কংগ্রেস। আর সেদিনই মহাত্মা গান্ধীকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসকে কড়া আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।ডান্ডি অভিযানকে স্মরণ করে মঙ্গলবার ব্লগ লেখেন প্রধানমন্ত্রী। ডান্ডি অভিযানের ৮৯ তম বর্ষপূর্তির দিনে কংগ্রেসের আদর্শ নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন। দাবি করলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর গাঁধীজিই কংগ্রেসকে ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন।’’ কারণ? মোদীর মতে, ‘‘গাঁধীজির অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যের নীতিই মানেনি কংগ্রেস।’’ তিনি লেখেন, গান্ধীজির দেখানো পথের উল্টো দিকে চলাই কংগ্রেসের কাজ। ডান্ডি অভিযান কীভাবে হবে তার শুরু থেকে শেষ জানতেন বল্লভভাই। কংগ্রেসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা ছিলেন দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ব্লগে লেখেন,‘‘একাধিক লেখায় মহাত্মা বলেছেন, তিনি বৈষম্যের বিপক্ষে, সাম্যের পক্ষে। কিন্তু কংগ্রেস সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে দ্বিধা করেনি। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জাতি দাঙ্গা বা দলিতদের ওপর সর্বাধিক আক্রমণ নেমে এসেছে কংগ্রেসের শাসনকালেই।’’ এছাড়া তাঁর দাবি, গান্ধীর দেখানো পথ আর কংগ্রেসের সংস্কৃতি এক নয়। আর তাই গান্ধীজি চেয়েছিলেন, কংগ্রেস ভেঙে যাক। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গান্ধীজির মনোভাব আরও স্পষ্ট হয়।
গান্ধী একবার বলেছিলেন অপশাসন এবং দুর্নীতি একসঙ্গে চলে। এই কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ব্লগে লেখেন,‘‘আমাদের সরকার দুর্নীতিকে শেষ করতে সবরকম উদ্যোগ নিয়েছে। আর গোটা দেশ জানে কংগ্রেস এবং দুর্নীতি সমার্থক। টেলিকম থেকে সেচ, খেলা থেকে শুরু করে সংস্কৃতি বা শহুরে উন্নয়ন, সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি করেছে কংগ্রেস। গরিবের টাকায় কংগ্রেস নেতারা নিজেদের ব্যাঙ্ক আকাউন্টের স্বাস্থ্য ভাল করেছেন। কিন্তু গরিব মানুষ নিজেদের সামান্য চাহিদাটুকু মেটাতে পারেনি।’’ গণতন্ত্র সম্পর্কে নরেন্দ্র মোদি লেখেন,‘‘গান্ধীজি গণতন্ত্রের কঠোর সমর্থক ছিলেন। আমি মনে করি গণতন্ত্র সুস্থ সমাজের চালিকাশক্তি। কিন্তু ১৯৭৫ সালে কংগ্রেস সেই গনতন্ত্রকে বিনষ্ট করার কাজ করেছে। আমার মনে হয় কংগ্রেসের অনেকে শুধু রাজনৈতিক কারণে স্বরাজ চেয়েছিলেন।’’
দীর্ঘ কয়েক দশকের কংগ্রেস শাসন কালে সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায় ইন্দিরা গাঁধী জমানার ‘জরুরি অবস্থা’। সেই প্রসঙ্গেও কংগ্রেসকে এক হাত নিয়েছেন মোদী। জরুরি অবস্থার ঘোষণা গণতন্ত্রের পবিত্রতা নষ্ট করেছে— এই অভিযোগ তুলে মোদীর দাবি, ‘‘কংগ্রেস বহু বার ৩৫৬ ধারার অপব্যবহার করেছে। যখনই কোনও নেতাকে পছন্দ হয়নি, তখনই সেই সরকার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আর সব সময় পরিবারতন্ত্রের পক্ষে সওয়াল করে এসেছে এবং দলের কাছে গণতন্ত্রের কোনও মূল্য নেই।’’ ওই ব্লগের একেবারে শেষে এসে মোদী দাবি করেছেন, তাঁর সরকার গান্ধীজির দেখানো পথেই চলেছে। তাই গান্ধীজি যেমন চেয়েছিলেন কংগ্রেস-মুক্ত ভারত, বিজেপি সেই পথে চলে কংগ্রেসকে নির্মূল করে দেবে গোটা দেশ থেকে।
যদিও লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসকে ভয় পেয়েই মোদি এই পথ ধরেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, ডান্ডি অভিযান এবং গাঁধীজিকে স্মরণ করার নামে আসলে লোকসভা ভোটের মুখে নিজের ব্লগে আসলে কংগ্রেসেকে আক্রমণ করাই মূল উদ্দেশ্য মোদীর।