#নয়াদিল্লি: কাঠুয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে ছ’জনের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল পাঠানকোটের বিশেষ আদালত। প্রমাণ লোপাট এবং দোষীদের আড়াল করার দায়ে বাকি তিনজনের ৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তবে তথ্য প্রমাণের অভাবে অপর অভিযুক্ত বিশালকে বেকসুর খালাস করেছে আদালত।
২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি জম্মুর কাঠুয়া গ্রাম থেকে উদ্ধার হয়েছিল আট বছরের কিশোরীর দেহ। চারদিন ধরে স্থানীয় মন্দিরে আটকে রেখে লাগাতার ধর্ষণ করা হয় ওই কিশোরীকে। তারপর শ্বাসরোধ করে নির্মম ভাবে খুন করা হয় তাকে। ১০ জুন কিশোরীকে অপহরণ করা হয়। ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে অকথ্য অত্যাচার। ঘটনার তিনদিন পর ১৭ জানুয়ারি উদ্ধার হয় ওই কিশোরীর দেহ। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল পাঠানকোটের বিশেষ আদালত। এই অভিযুক্তদের মধ্যে ছিল পুলিশ অফিসার দীপক খাজুরিয়া, প্রবেশ কুমার এবং মন্দিরের পুরোহিত সঞ্জি রাম। এই সঞ্জি রামই ছিল কাঠুয়ার নৃশংস ঘটনার অন্যতম পাণ্ডা। এ ছাড়াও রয়েছে সাব ইনস্পেকটর আনন্দ দত্ত, হেড কনস্টেবল তিলক রাজ, সঞ্জি রামের ছেলে বিশাল এবং তার নাবালক ভাইপো।
গণধর্ষণ কাণ্ডের মূল চক্রী তথা রাজস্ব দফতরের প্রাক্তন অফিসার সঞ্জিরামের ফাঁসি চেয়েছিলেন সরকারি আইনজীবী। তবে তাঁকে যাবজ্জীবনই দেন বিচারপতি। অন্য দুই মূল অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার দীপ খাজুরিয়া এবং প্রবেশ কুমারকেও একই সাজা শোনানো হয়। সঞ্জিরামের নেতৃত্বে মুসলিম যাবাবর বাখরওয়াল সম্প্রদায়কে এলাকা ছাড়া করতে, তারা আট বছরের মেয়েটিকে অপহরণ করে ধর্ষণ করে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। ৩০২ (খুন), ৩৭৬-ডি (গণধর্ষণ) ধারায় তাদের সাজা হয়েছে। এই তিনজনকে আড়াল করার অপরাধে পুলিশ অফিসার তিলক রাজ, আনন্দ দত্ত এবং সুরেন্দ্র বর্মাকে জম্মু-কাশ্মীরের ২০১ রণবীর ধারায় (প্রমাণ লোপাট, ভুয়ো তথ্য) ৫ বছর করে সাজা শোনানো হয়েছে।
ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জি রামের ছেলে বিশাল জানায়, ঘটনার দিন উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে পরীক্ষা দিচ্ছিল সে। ঘটনায় তার ভূমিকা নিয়ে কোনও প্রমাণ না মেলায়, তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে জানান নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী ফারুকি খান। সঞ্জিরামের ভাইপো তথা অষ্টম অভিযুক্ত নাবালক কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক জারি। জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টে বিষয়টির শুনানি চলছে।
এ দিন দুপুরে আদালত ছ’জনকে দোষী সাব্যস্ত করার পর জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইটারে লেখেন, ‘‘দোষীদের চরম শাস্তি হওয়া উচিত। আর যে রাজনীতিকরা অভিযুক্তদের আড়াল করছিলেন, নির্যাতিতাকে অপমান করেছিলেন এবং বিচার ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিতে চেয়েছিলেন, কোনও ভাষাই তাদের নিন্দা করার পক্ষে যথেষ্ট নয়।’’ মেহবুবা মুফতি টুইটারে লেখেন, ‘‘কাঠুয়া রায়ে স্বস্তি পেলাম। সত্যটাকে সামনে আনার জন্য আইজিপি মুজতবা, এসএসপি জালা, অতিরিক্ত এসপি নাভিদ, ডেপুটি এসপি শ্বেতাম্বরী এবং তালিবের প্রশংসা প্রাপ্য।’’