নয়াদিল্লি: ইস্তেহার প্রকাশ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে বিজেপি। অনেকের ধারণা টেনশন থেকে এটা হয়েছে। সাধারণত শাসক দল যেভাবে ইস্তেহার প্রকাশ করে তাতে উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি বেশি থাকে। কিন্তু এবারে বিজেপির ইস্তেহারে কেবলই আবেগ আর স্বপ্ন। তুলনায় রাহুলের অর্থাৎ কংগ্রেসের ইস্তেহার অনেকটাই স্মার্ট এই। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পড়লে মনে হতে পারে এর খানিকটা হয়ত বাস্তব করা সম্ভব যেটা বিজেপির ইস্তেহারে নেই।
সেখানে কেবল মোদী জামানার আমদানিকৃত জাতীয়তাবাদ, গেরুয়া হিন্দুত্ববাদ ও নমো জমানার বিকাশের গল্প। যা গত ৫ বছর ধরে রেডিওতে সহ্য করেছে আমআদমি। বিজেপির ইস্তেহারে মারাত্মক কয়েকটি সমস্যা রয়েছে।যাতে বোঝা যাচ্ছে অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা হয়েছে এটি। যেমন, বিজেপির ইস্তেহারের এক জায়গায় লেখা হয়েছে মহিলাদের প্রতি অপরাধ করতে আইন আনার বিষয়ে বিজেপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিজেপির এমন মারাত্মক ভুল দেখার পর অনেকের ধারণা কংগ্রেসের ইস্তেহারে চাপেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির। হাত শিবিরের ইস্তেহারেকে গালাগালি করতে অতিরিক্ত সময় নিয়ে ফেলেছেন জেটলিরা। ওরা দেখার চেষ্টা করছিলেন কংগ্রেস কি বলে সেই অনুযায়ী তারাও ইস্তেহার সাজাবেন। আর তা করতে গিয়েই মোক্ষম ভুল হয়ে গেল, ছাপা হল মহিলাদের প্রতি অপরাধ করতে আইন নিয়ে আসবে বিজেপি। যা দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড়। কংগ্রেস তা নিয়ে অবশ্য খোঁচা দিতে ছাড়েনি। তাদের বক্তব্য, মহিলাদের সম্পর্কে বিজেপির প্রকৃত মানসিকতা কি তা ইস্তেহারে স্পষ্ট হয়েছে।
বিজেপির ইস্তেহারে নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রাখা হয়েছে। তাঁকে শক্তিশালী করে দলকে শক্তিশালী করে তোলার বার্তা দেওয়া হয়েছে। পুরনো ইস্যুগুলিকে নতুন করে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবারও। রাজনাথ সিং -এর এর মত বর্ষীয়ান নেতাকে দিয়ে রাম মন্দির নির্মাণের কথা বলানো হয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে উপত্যকার ৩৭০ ধারা এবং ৩৫এ ধারা তুলে দেবে -সেকথাও জোর দিয়ে বলা হয়েছে।এখন প্রশ্ন, ২০১৪ সালে বিজেপিকে মানুষ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে লোকসভায় পাঠিয়ে ছিল। তারপরও তারা রাম মন্দির বানাতে পারেনি কেন। বরং জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপি সরকারের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল বিজেপি। পরে সময়মত পাটিগণিত বদলে ফেলে বিজেপি বেরিয়ে আসে জোট সরকার থেকে। নির্বাচনের জন্যই যে এই খেলা হচ্ছে তা স্পষ্ট ছিল দেশের মানুষের কাছে। কারণ পিডিপি সরকারের সঙ্গে জোট বেঁধে থাকলে আজ ৩৭০ এবং ৩৫ এ নিয়ে নতুন করে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জায়গা থাকত না বিজেপির।যদিও ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ১৯৯৬ সাল থেকে দিয়ে আসছে বিজেপি। একই প্রতিশ্রুতি ফি নির্বাচনে ভঙ্গ করে তারা। তারপরও মানুষের কাছে ওই একই ইস্যু ফিরিয়ে ফিরিয়ে এনে হিন্দু ভোট চায়।
স্বপ্নের ফানুস না উড়িয়ে এবার বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়েই ইস্তেহার প্রকাশ করেছে রাহুল গান্ধীর দল। যদিও কংগ্রেসের সময় কাল মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির সাক্ষী থেকেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপি সরকার। সে কারণেই নেতিবাচক মানসিকতা থেকে বিজেপিকে বিপুল ভোটে জয়ী করে এনেছিল আমআদমি। তবে মোদী জামানাতে নীরব মোদী, বিজয় মালিয়া, মেহুল চোকসিদের দেখার পর জনগণ অন্যকথা ভাবতে শুরু করেছে।সমীক্ষা অনুযায়ী, বেশ কয়েকটি রাজ্যে চাপে পড়তে পারে বিজেপি। ফলে স্বপ্ন বিক্রি করা ছাড়া এই মুহূর্তে বিজেপির হাতে কিছুই ছিল না। তাছাড়া কংগ্রেস এবং বিজেপির ইস্তেহার পাশাপাশি রাখলে স্পষ্ট হবে যে কংগ্রেস গঠনমূলক কিছু করতে চাইছে অথবা করার বার্তা দিচ্ছে এবং বিজেপি পুরোনো রাজনৈতিক ইস্যুকে বাস্তব করার চেষ্টায় মরিয়া।