নিউ জিল্যান্ড: অবশেষে খুলে দেওয়া হল সন্ত্রাস হামলার শিকার হওয়া নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদ। হামলার শিকার হওয়া ক্রাইস্টচার্চের লিনউড মসজিদও খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার থেকে সীমিত সংখ্যক লোককে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয়।
মসজিদের দেয়ালে গুলির আঘাত লাগা গর্তগুলো বন্ধ করে নতুনভাবে রং করা হয়েছে।মসজিদের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘ একসঙ্গে ১৫ জন করে মসজিদের ভেতরে যেতে দিচ্ছি আমরা। কিছুটা স্বাভাবিকতা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তবে কবে নাগাদ পুরোদমে খুলে দেওয়া হবে তা তিনি জানাননি। হামলার ঘটনায় ৩ বছরের শিশুসন্তান হারানো আদেন দিরিয়া আজ আল নূর মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসেন। নামাজ আদায় শেষে তিনি বলেন, নামাজের জায়গা ফিরে পেয়ে তাঁর ভালো লাগছে।হামলার দিন মসজিদের ভেতরে থেকেও বেঁচে যাওয়া আসিফ শেখ বলেন, ‘এটা আমাদের নামাজের জায়গা এবং একইসঙ্গে আমাদের সবার সাক্ষাতেরও জায়গা। আমরা সবাই আবার ঘুরে আসব।’
এদিকে হামলায় আক্রান্তদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শনিবার তিন হাজার মানুষ ক্রাইস্টচার্চ অভিমুখে পদযাত্রায় অংশ নেন। এ সময় অনেকেই শান্তির পক্ষে ও বর্ণবাদ বিরোধী নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।পদযাত্রার আয়োজকদের একজন ১৬ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থী ম্যানাইয়া বাটলার বিবিসিকে বলে,‘ আমাদের মনে হচ্ছে, ঘৃণা আমাদেরকে অন্ধকারে নিপতিত করেছে। একমাত্র ভালোবাসাই আমাদের শহরকে এই অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।’
শুক্রবার মসজিদ প্রাঙ্গণে বিশেষ নামাজের আয়োজন করা হয়। ইসলামকে শ্রদ্ধা জানাতে হিজাবে মাথা ঢেকে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন ও আরও বহু অ-মুসলিম মহিলা। গত শুক্রবার নমাজ চলাকালীন আল-নুর মসজিদে ঢুকে ৫০ জনকে খুন করেছিল শ্বেতাঙ্গ জঙ্গি ব্রেন্টন ট্যারান্ট। চাপ-চাপ রক্ত, অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের আওয়াজ, স্বজন হারানোর হাহাকার পেরিয়ে ক’টা দিন কেটে গিয়েছে মাঝে। ঠিক দুপুর দেড়টা নাগাদ দু’মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় প্রার্থনা। ওই সময়টাতেই মসজিদে হত্যালীলা চালিয়েছিল জঙ্গি। সে দিনের হামলা থেকে যাঁরা বেঁচে ফিরেছেন, যাঁরা জখম হয়েছিলেন, প্রিয়জন হারানো বহু মুখ যোগ দিয়েছিলেন আজকের সমাবেশে। হুইলচেয়ারেই এসেছেন এক জন। সে দিন আল-নুর মসজিদে ছিলেন তিনি। গুরুতর জখম হয়েছিলেন। ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাননি এখনও। কান্নাভেজা মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে আল-নুর মসজিদের ইমাম গামাল ফৌদা বললেন, ‘‘দেশের মন ভেঙেছে, দেশটা কিন্তু ভেঙে পড়েনি।’’