Site icon The News Nest

চৈত্র সেলের মত বঙ্গ জীবনে ফিরে ফিরে আসে সারদা- নারদা তদন্ত

sale

কলকাতা: চৈত্র সেলের আবেগ বঙ্গ জীবন থেকে এখনও মুছে যায়নি। অনেকেই বেজার মুখে বলেন, এসব সেল- টেল ফালতু কথা। ওরা আসলে দাম ধরে নেয়। মূলত, সেলে বিক্রি হয় লো কোয়ালিটির জিনিস। সে কারণেই দাম কম হয়। কিন্তু তারপরও মা- মাসি ও দিদি- বৌদিদের ভিড় করতে দেখা যায় দোকানগুলিতে। আসলে চৈত্র সেল এখন একটা উৎসব ছাড়া কিছু নয়। এখন প্রায় সারা বছর জুড়েই চলে ‘ছাড়’ উৎসব। তবু চৈত্র সেলের ধরন তাদের থেকে আলাদা। এ যেন খানিকটা ভোটের আগে সারদা -নারদা কেলেঙ্কারি মতই মুখরোচক।সারা বছরই সারদা নারদা কান্ড নিয়ে টুকটাক লেখালেখি, বাকযুদ্ধ চলতে থাকে। কিন্তু ভোট এলেই এই আলাপ আলোচনা নয়া এক উৎসবে পরিণত হয়।

একসময় এই সারদাকে হাতিয়ার করতে চেয়েছিল বিজেপি। উত্তর প্রদেশ থেকে উড়ে আসা নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিং স্লোগান দিয়েছিলেন ভাগ মুকুল ভাগ, ভাগ মমতা ভাগ। কিন্তু মুকুল ভেগে গিয়ে যে তাঁদের দলে আশ্রয় নেবেন তা বোধহয় এই নেতা জানতেন না। তাহলে আর যাই হোক স্লোগানটা থেকে মুকুলকে বাদ দিয়ে দিতেন। রাজনীতি তো এসব জায়েজ থুড়ি বৈধ। সেখানে নিষিদ্ধ বলে কোন শব্দ নেই। বিরোধী রাজনৈতিক দলে ফাটল ধরানোও নিজের রাজনৈতিক দলকে আরও শক্তিশালী করাই সব দলের নেতাদের লক্ষ্য।

এখনকার ডানপন্থী দলগুলি এক সুরে কথা বলে। বামপন্থী দলগুলো খানিকটা ভিন্ন সুরে কথা বললেও সে সুর এখন আর জনগনের কাছে তেমন বোধগম্য হচ্ছে না। তাদের নিজেদের কাছে হচ্ছে কিনা তা নিয়ে বিস্তর সংশয় রয়েছে। যাই হোক এবঙ্গে এখন শাসক দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। তারা ভোট কুড়োতে হাতিয়ার করছে সারদা -নারদাকে। অথচ প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছেন মুকুল রায়কে পাশে নিয়ে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কি হতে পারে। মুকুল রায় এই দুই কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত। যার ফলে বাংলার বিজেপি পন্থীরায় পড়েছেন বেজায় অস্বস্তিতে। কেউ কেউ ঢোক গিলে বলছেন রাজনীতিতে এমনটা হয়ে থাকে। তাদের আবার টিপ্পনি কেটে অনেকে বলছেন তবে রাজনীতিতে চৌকিদারটা নতুন। কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মুকুল রায় যখন রাতারাতি চৌকিদার হয়ে ওঠেন তা অবশ্যই রঙ্গ করার যোগ্য বিষয়। এরকম আরও যে কত চৌকিদার নরেন্দ্র মোদীর অনুপ্রেরণায় তৈরি হয়েছে তার সঠিক হিসেব নেই। কে জানে হয়ত নীরব মোদীও টুইটারে চৌকিদার লেখার অপেক্ষায় বসে রয়েছেন বেচারি জামিন পাচ্ছেন না এই যা। তা না হলে চৌকিদার লিখতে কি এমন সমস্যা।

এই বাংলায় নরেন্দ্র মোদীর দলের অন্যতম সমস্যা হল, যাকে তিনি সমাধান মনে করছেন। যদি দলত্যাগী তৃণমূলের নেতারা তাঁর দলে ভিড়তে থাকেন লাগাতার তাহলে আখেরে বিজেপির ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকবে না। তৃণমূলের যে নেতারা বিজেপিতে দিয়ে আশ্রয় খুঁজছেন তাঁদের জনভীতি নষ্ট হয়েছে আগেই। যার ভিত্তি মজবুত থাকে তাকে দল মাথায় তুলে রাখে। তবে কখন কখন এই জনগণের কারণেই দলীয় সুপ্রিম চোখের বালি হতে হয় তাঁকে। একথাও সত্যি তৃণমূল থেকে যাঁরা বিজেপিতে যাচ্ছেন তাদের আকুল আহ্বান না করে মাটি থেকে নেতা তৈরি চেষ্টা করতে পারত বিজেপি। তাতে জনগণের বিশ্বাস খানিকটা মজবুত হত। রাজনীতি কখনই শর্ট টাইম গেম নয়। রাজনীতিকে যারা জুয়ার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন তাদের জনগণ অচিরেই ছুঁড়ে ফেলে। মুকুলকে দলে নিয়ে বিজেপি সারদা- নারদা তদন্ত দাবির নৈতিক জায়গাটুকুও আর রইল না। কারণ অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর পাশে আলো করে থাকছেন। যেমন দাভোসে নরেন্দ্র মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছিলেন নীরব মোদী।

মুকুল বিজেপিতে যাওয়ার পর সারদা- নারদা কেলেঙ্কারির সুরাহা হওয়ার আসা আর বঙ্গবাসী করে না। তবু ভোট মরসুমে চৈত্র সেলের মত ফিরে ফিরে আসে এই ইস্যু। এই মুহূর্তে অন্যতম অভিযুক্তকে পাশে বসিয়ে এটি নিয়ে কথা বলে নরেন্দ্র মোদী ভোট প্রচারকে হাস্যকর জায়গায় নিয়ে এলেন। বিজেপি কর্মীরাও অনেকেই হতাশা থেকে মাথা চুলকাচ্ছে। তাদের বক্তব্য, এখন আর সারদার কথা বলে কি লাভ। এখন সারদা প্রসঙ্গ তোলা মানে নিজের দিকে থুতু ফেলা। তারপরও অবশ্য সারদা- নারদা তদন্তের দাবি উঠবে। তবে তা চৈত্র সেলের মতই আনুষ্ঠানিক। নতুনত্ব তাতে কিছুই থাকবে না। লোকজন যে এ কথা শুনতে ভিড় করবে না তাও নয়। বাজারে গেলে চৈত্র সেলের প্রভাব এখনও নজর এড়ায় না। অনলাইন কেনাকাটার এই যুগেও।

 

 

 

 

Exit mobile version