নয়াদিল্লি: রাসেল ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল বিরাট কোহলির দল। প্রতিবারেই রাসেল নিজের দাপট দেখাচ্ছেন। কিন্তু একটা ভাবনার জিনিস হল, রাসেলের এই দাপট তাঁকে নাইটদের টিমে ‘নরেন্দ্র মোদী’ বানিয়ে ছেড়েছে। সেটা যে কোন দলের জন্য বিপদজনক সন্দেহ নেই। বিজেপি মানেই নরেন্দ্র মোদী। অসংখ্য কর্মকর্তা এবং অজস্র নেতা থাকা সত্ত্বেও।গতবারের মত এবারও বিজেপি নরেন্দ্র মোদীর কাঁধে ভর করে জিততে চাইছে। নাইটদের অবস্থা খানিকটা তেমনি দাঁড়িয়েছে। দলে প্রতিভার কমতি নেই। কিন্তু একা রাসেলই থামিয়ে দিচ্ছেন সকলকে। ইতিমধ্যে নেটিজেনরা মশকরা করতে শুরু করেছেন রাসেলকে নিয়ে। কেউ কেউ বলছেন ক্রিকেট তো ভদ্রলোকের খেলা সেখানে রাসেল কেন ?মানুষের খেলায় রাসেল থাকবেনই বা কেন? ওর ভাবভঙ্গি দেখে কি কারো মনে হয় তিনি মানুষ! রাসেল আর যাই হোক মানুষ নন। তিনি অতি মানব এতে কোন সন্দেহ নেই।
নাইট এবং বিজেপির সমস্যা এখন একই এবং সমাধানও। লোকসভার আগে সারা দেশ জুড়ে একা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। গোটা দল একজনের উপরই নির্ভর করে আছে। দল যখন ব্যক্তির উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল হয়ে পরে সেই দলের ভিত্তি নষ্ট হয়ে যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও একথা খানিকটা প্রযোজ্য সন্দেহ নেই। কিন্তু একটা ফারাক রয়েছে তাতেও। তৃণমূল কংগ্রেস আঞ্চলিক দল জাতীয় দল নয়। বিজেপি সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে তুলনীয়। নরেন্দ্র মোদী যেভাবে বিজেপিকে তুলে ধরতে চেষ্টা করছেন তাতে দল কতটা মাইলেজ পাচ্ছে তার থেকেও বেশি চর্চা হচ্ছে তাঁকে নিয়ে। অথচ একেবারেই যে বলার মত নেতা সে দলে নেই তা নয়। বরং বেশ কিছু শিক্ষিত নেতা ও সেখানে রয়েছেন। কিন্তু অদ্ভুত কায়দায় উন্নয়ন এবং হিন্দুত্ব, দেশপ্রেম এবং সংখ্যালঘু বিদ্বেষকে একসঙ্গে মিশিয়ে সুস্বাদু ঝাল মুড়ি বানাতে মোদীর মতন সফল হননি কেউই। সেখানেই তাঁর বাহাদুরি।এই গুণই মোদী দলের থেকেও উচ্চস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
যেমনটা কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে তত বেশি রাসেলমুখী হয়ে উঠছে কিং খানের দল। এটা নিঃসন্দেহে একটা সুস্থ টিমের জন্য ঝুঁকিবহুল। রাসেল যেদিন তাঁর ঝড়ো ইনিংস খেলতে পারবেন না সেদিনই খানিকটা নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে যাবে দল। এটাই হিউম্যান সাইকোলজি। সেকারণে সকল নাইট প্লেয়ারদের তৈরি থাকতে হবে। প্রত্যেককে ভাবতে হবে রাসেল একটি ঝড়। আর ঝড় প্রতিদিন বয় না। যদি রাসেল নির্ভরতা ক্রমশ শেয়ারবাজারের সূচকের মত ঊর্ধ্বগামী হয় তাহলে কিং খানের কপালে দুঃখ আছে। তাই যে নাইট ভক্তরা রাসেলের ঝড় দেখে উদ্বাহু হয়ে নাচছে একসময় হয়ত তারা রাসেলের বাপান্ত করবেন দিনভর।
এদিকে বিরাটের দশা খুবই করুন। এত ভালো একটি প্লেয়ার আইপিএল- এলেই পুরো শামুক হয়ে যান। তাঁর টিম গুটিয়ে ঢুকে পড়ে খোলের ভেতর। এখন তাঁর অবস্থা খানিকটা কংগ্রেস টিমের মত। মনে মনে যারা আরসিবির ফ্যান তারাও আর লোকের সামনে মুখে বলতে লজ্জা পাচ্ছেন। কংগ্রেসের বহু সমর্থক আছে যারা অনেকেই প্রকাশ্যে নিজেদের কংগ্রেস বলতে চাই না। যদিও ভোটটা তাঁরা কংগ্রেস দিয়ে আসেন নিয়মিত। রাহুলের নেতৃত্ব অবশ বিরাটের উল্টো। একটি ভাল টিম পেলেও ক্যাপ্টেন্সিতে তাঁকে মাত দিচ্ছেন মোদী। ফলে যতগুলি ভোট বক্সে ঢোকার কথা সেটি হচ্ছে না। উপরন্তু জোট রাজনীতির বাস্তবতা বুঝতে তিনি এখনও কিছুটা কাঁচা। ব্যাক্তি ক্যারিশমায় তিনি মোদীর পিছনে। প্রিয়াঙ্কা শেষ মুহূর্তে সামনে এনে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন রাহুল। এই প্রচেষ্টা আরও কয়েকমাস আগে করলে ফল আরো ভাল হতে পারত বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
তবে মোদ্দা কথা হল, মোদী হোক বা রাসেল- প্রতিদিন প্রতিবার ঝড় তোলা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এটা মনে রাখতে হবে নাইট ও বিজেপি ভক্তদের।