#নয়াদিল্লি: গোটা দেশে একটাই নির্বাচন। একই সঙ্গে লোকসভা ও সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই দাবির পক্ষে অনেক আগে থেকেই সওয়াল করে আসছেন তিনি। দ্বিতীয় বার ফিরতেই এক দেশ-এক ভোট নিয়ে ফের সক্রিয় মোদী সরকার।
বুধবার ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নিয়ে আলোচনার জন্য সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে যাবেন না বলে মঙ্গলবারই জানিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তাঁর পথ অনুসরণ করেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও। ইভিএম নিয়ে কথা হলে যদিও বা যেতেন, কিন্তু মোদী এই বৈঠকে যাওয়ার কোনও অভিপ্রায় তাঁর নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
কংগ্রেস বৈঠকে যোগ দেবে না বলে এ দিন সংসদে ঢোকার মুখেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দেন দলের সাংসদ গৌরব গগৈ। আগেই বৈঠক বয়কট করেছিলেন ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিন। এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারও বৈঠকে যাবেন না বলে জানা যায়। তবে নিজেরা না গেলেও, বৈঠকে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন কে চন্দ্রশেখর রাও, অরবিন্দ কেজরীবাল এবং চন্দ্রবাবু নায়ডুরা। বৈঠকে যোগ দেন বাম নেতারাও।
সর্বদল বৈঠক শেষে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দাবি করলেন, উপস্থিত বেশিরভাগ দলই বিষয়টিতে সমর্থন জানিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যে একটি কমিটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটিই এই বিষয়টির বাস্তবতা খতিয়ে দেখেবে।
উল্লেখ্য, ১৯৫২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কিন্তু নির্বাচনগুলো একসঙ্গেই হত। কিন্তু তার পরে বেশ কিছু রাজ্যের সরকার মাঝপথেই ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে সেই সব রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সময় বদলে যায়। ১৯৭৭ সালে কেন্দ্রে যে প্রথম অকংগ্রেসি সরকার আসে, সে সরকারও মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পারেনি। তাই ১৯৮০ সালে দেশ প্রথম বার অকাল নির্বাচনের মুখোমুখিও হয়। তার পরে সে রকম ঘটনা আরও বেশ কয়েক বার ঘটেছে। ফলে এখন লোকসভা নির্বাচন একটা সময়ে, বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন বিভিন্ন সময়ে, তার বাইরে পুরসভা বা পঞ্চায়েতের নির্বাচন তো রয়েছেই। অর্থাৎ পাঁচ বছর অন্তর নয়, প্রায় প্রতি বছরই দেশের প্রায় প্রতিটা প্রান্তে কোনও না কোনও নির্বাচন লেগেই থাকে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নীতি প্রণয়নে উদ্যোগী হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বছরখানেক আগেই এই ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নীতি নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে দেশের আইন কমিশনও সক্রিয় হয়েছে। গোটা দেশে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করানোর যে প্রস্তাব, তার বিভিন্ন দিক কমিশন ব্যাখ্যা করেছে। এই নীতি রূপায়ণের জন্য আইনে এবং সংবিধানে কী ধরনের পরিবর্তন বা সংশোধন আনা দরকার, সে বিষয়ে আইন কমিশন কিছু সুপারিশও ইতিমধ্যেই পেশ করেছে। সে সব সুপারিশ এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে পরিষ্কার যে, এই নীতির রূপায়ণ খুব সহজ-সরল কোনও প্রক্রিয়া নয়।
‘এক দেশ-এক ভোট’ বাস্তবায়িত করতে হলে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। আর সেটা করতে হলে রাজ্যসভাতেও প্রতাব পাশ করাতে হবে মোদীকে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যেহেতু এখনও রাজ্যসভায় নরেন্দ্র মোদীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, তাই বিরোধীদের পাশে পেতে চাইছেন তিনি।