নয়াদিল্লি : উরি হামলার পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন পাকিস্তান উচিত শিক্ষা পেয়েছে. কিন্তু তা যে তারা পায়নি পুলওয়ামা হামলা। ১৪ ফেব্রুয়ারির নৃশংস জঙ্গি হামলায় ৪৯ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হন। নরেন্দ্র মোদী সেই সময় বলেছিলেন, এর বদলা যে ভাবে খুশি নিতে পারে সেনা। সেই মতোই চলছিল গোপনে পরিকল্পনা। নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেনাবাহিনীর প্রতিটি শাখা। একেবারে নিখুঁত পরিকল্পনার মাধ্যমে পালটা জবাব দেওয়া শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা ছিল। মঙ্গলবার ভোররাতে সেই নির্দিষ্ট সময়ে ভারতীয় বায়ুসেনা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বিমান অভিযান চালায়। জইশ, লস্কর, হিজবুল-সহ একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস হওয়ায় কমবেশি ৩৫০ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার পাক মাটিতে ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইকের খবরে দেশবাসীর ঘুম ভেঙেছে। জইশ-ই-মহম্মদের বিরুদ্ধে অভিযান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীকে বিশদ রিপোর্ট দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সকালে নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠক বসে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। সেই বৈঠক শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বিবৃতি দেন। বিদেশ সচিব বিজয় গোখলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী কোনও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি। চুরুর জনসভায় গিয়েই তিনি মুখটা খুললেন। শুরুতেই মোদীর প্রতিক্রিয়া, ‘প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ভারতের মাথা নত হতে দেব না। সেই প্রতিজ্ঞা রেখেছি।’
লোকসভা ভোটের আগে এ দিন চুরুতে বিজেপি-র রাজনৈতিক সভা ছিল। স্বাভাবিক ভাবে রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে জাতীয়তাবাদের হাওয়া সবটাই বিজেপি-র অনুকূলে টানতে চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। সভামঞ্চে বক্তৃতা করতে উঠেই টেনে আনলেন দ্বিতীয় সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ। তবে এদিন বায়ুসেনার অভিযানের প্রসঙ্গে একটি শব্দও বলেননি। কিন্তু আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি কী বলতে চাইছেন। মোদী যখন মঞ্চে ওঠেন, তখন উপস্থিত কর্মী-সমর্থকরা মোদী-মোদী ধ্বনি তুলেছেন। আর তা দেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন,’আমি বুঝতে পারছি কেন আপনারা আজ এত উজ্জীবিত।’
পুলওয়ামায় জঙ্গিহানার বদলা নেওয়ার পর আরও আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার তিনি সরাসরি বললেন,’ আজ নিশ্চয় আপনারা বুঝতে পারছেন দেশ সুরক্ষিত হাতেই রয়েছে।’ ষোল আনা আবেগ গলায় ঢেলে কবিতার কয়েকটি লাইন উল্লেখ করেন। তার সারমর্ম, দেশের মাটির প্রতি তাঁর শপথ কখনও কোনও দেশের কোনও ক্ষতি হতে দেবেন না। কখনও দেশকে ঝুঁকতে দেবেন না। নিজেকে ফের প্রধান সেবক আখ্যা দিয়ে বলেন,’দেশ জাগছে, প্রত্যেক ভারতবাসীর জয় হবে। আমাদের কাছে নিজের থেকে বড় দল, দলের চেয়ে বড় দেশ। আজকের এই বিশেষ দিনে সেই দেশ জাগছে।কোথাও থামলে চলবে না।’ ভারতীয় বায়ুসেনার এত বড় সাফল্য এদিন সেই শহিদদের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর কথায়,’আমার কাছে নিজের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়েও বড় দেশ। তাই এক নাগাড়ে দেশের সেবা করে যাচ্ছি। জয় জওয়ান, জয় কিষাণ, জয় বিজ্ঞান – এই ভাবনা নিয়ে এগোচ্ছি।’
এদিন চুরুতে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চ সাজানো ছিল পুলওয়ামার শহিদদের ছবিতে। রাজনৈতিক মতবিরোধ নির্বিশেষে পাকিস্তানকে ভারতীয় বায়ুসেনার এই জবাবকে সকলে স্বাগত জানালেও, কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল এর কৃতিত্ব নিতে চাইবেই। আর তাই প্রধানমন্ত্রী অন্য কোথাও নয়, রাজস্থানের জনসভা থেকেই এনিয়ে বিবৃতি দিয়ে গেলেন। ভাষণ শেষে দেশমাতৃকার জয় ঘোষণা করেন মোদী। আরও এক বার মনে করিয়ে দেন, সবার ওপরে দেশ সত্য। তার উপর কোনও আঘাত মেনে নেওয়া হবে না।