#শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি থামছেই না এবং থামার কোনো লক্ষণও আপাতত নেই। ফলে ক্রমশ জটিল হওয়া সামগ্রিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। ইতিমধ্যেই ফুঁসছে উত্তরবঙ্গের প্রায় সব নদী। এর মধ্যে চরম সতর্কতা জারি হয়েছে তিস্তায়।অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সতর্কতা জারি হয়েছে । সংরক্ষিত এলাকায় জারি করা হয়েছে হলুদ অ্যালার্ট। একইসঙ্গে, জলঢাকার অসংরক্ষিত এলাকাতেও হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে চূড়ান্ত বৃষ্টি হচ্ছিল পাহাড়ে। কিন্তু শিলিগুড়িতে বৃষ্টির দাপট কিছুটা কম ছিল। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় আকাশ ভেঙে পড়েছে শিলিগুড়িতে। বৃষ্টি হয়েছে ২০৩ মিলিমিটার। এর ফলে শহরের বিভিন্ন জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জল বেড়েছে মহানন্দা নদীতেও। শিলিগুড়ির পাশাপাশি চরম বৃষ্টি হয়েছে জলপাইগুড়ি শহরেও (১৪০ মিমি)।
তিস্তা ব্যারেজ থেকে আজ সকালে ৩৫৮৬.৯০ কিউমেক জল ছাড়া হয়েছে। এরফলে জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রবল বৃষ্টি হয়েছে উত্তরের জেলাগুলিতে। অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়ে উঠতে চলেছে বলে আশঙ্কা। গতকাল লিস নদীর জলে ভেঙে যায় সাওগাঁও এলাকায় নদীবাঁধ। বৃষ্টি না কমায় আজ অবস্থা আরও খারাপ। লিস নদীর জল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বহু কৃষি জমি। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ধানের বীজতলা, রাস্তার হিমপাইপ, গ্রামে যাওয়ার রাস্তা। বৃহস্পতিবার বিকালে বৃষ্টি একটু কমলেও, রাত থেকে শুরু হয়েছে একটানা বৃষ্টি।
বৃষ্টিতে মেরামত করা যায়নি নদীবাঁধ। আজ জলের গতি আরও বেড়েছে। নদী জলে ভেসে গিয়েছে পানীয় জলের কুয়ো। পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে এলাকায়। এখনও বৃষ্টি হয়ে চলছে। রাত থেকে ফের বৃষ্টির কারণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে জলপাইগুড়ি পৌরসভার বেশকিছু এলাকাও। তিস্তা ছাড়াও জলস্তর ভয়াবহ ভাবে বাড়ছে তোর্সা, কালজানি, লিস, ঘিস, রায়ডাকের মতো নদীগুলিতে। পাহাড়ের অবস্থা আরও বেশি খারাপ। বৃহস্পতিবার সেবকের শ্বেতীঝোরার কাছে ব্যাপক ধস নামে। ফলে সিকিম, কালিম্পং এবং মালবাজার হয়ে ডুয়ার্সের পথ বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার সকালেও সেই ধস সরানো যায়নি। এখনও বিভিন্ন জায়গায় পাথর পড়ছে। প্রশাসনের আশঙ্কা, আগামী পাঁচ দিনের যা পূর্বাভাস রয়েছে, তাতে রাস্তা আদৌ খোলা সম্ভব হবে কি না, সেই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
এই প্রবল খারাপ অবস্থার জন্য উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের তরফে ৮ ট্রেন বাতিল করা হয়। কয়েকটি ট্রেনকে ফালাকাটা, ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি হয়ে এনজেপি নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রেন বাতিলের জেরে এবং ট্রেনের রুট আচমকা বদলানোর ফলে বহু যাত্রী সমস্যায় পড়েন। কিন্তু এরই মধ্যে মানুষের মধ্যে আরও বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে আগামী দিনগুলির পূর্বাভাস। কারণ সেখানে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী অন্তত চার দিন বৃষ্টি তো কমবেই না, বরণ তা আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সোমবার পর্যন্ত দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলায় অতি ভারী তো বটেই এমনকি চরম অতি ভারী বৃষ্টিও হতে পারে।