ভর সন্ধ্যায় জন সমক্ষে খুন হয়ে গেলেন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। শনিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মাজদিয়া ফুলবাড়ি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।
জানা গিয়েছে,এদিন ফুলবাড়ি এলাকায় সরস্বতী পুজোর উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন বিধায়ক। উদ্বোধনের পর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দর্শকাশনের প্রথম সারিতে বসে অনুষ্ঠান দেখছিলেন সত্যজিৎ বিশ্বাস-সহ জেলা তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা। একই মঞ্চে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী রত্না ঘোষ কর।তখনই হঠাত্ চেয়ার থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঝরতে থাকে রক্ত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভিড়ে মিশে যায় আততায়ীরা। রক্তাক্ত সত্যজিৎকে উদ্ধার করে কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার কিছুক্ষণের পরই ঘটনাস্থল থেকে ১০০ মিটার দূরে উদ্ধার হয় একটি ওয়ান শটার বন্দুক। অনুমান ওই বন্দুকটি থেকেই গুলি চালানো হয়েছে। চিকিত্সকরা জানিয়েছেন,পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাঁকে গুলি করা হয়।
কে বা কারা গুলি চালাল তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা খুব পরিকল্পিত এই খুন। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। নদিয়ার এই সীমান্ত এলাকায় সম্প্রতি বিজেপি যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজেপি সম্প্রতি ভাল সংগঠন তৈরি করেছে। সেই নিয়ে সম্প্রতি বিজেপি-তৃণমূল একটা চাপা লড়াই চলছিল তা স্বীকার করছেন জেলার শীর্ষ পুলিশ কর্তারাও।সত্যজিৎ বিশ্বাসের আগে কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক ছিলেন সুশীল বিশ্বাস। ২০১৪-র অক্টোবরে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর ২০১৫-র উপনির্বাচনে জিতে সত্যজিৎ বিশ্বাস। বিধায়ক হন। পরে ২০১৬-য় ওই আসনেই জেতেন তিনি।এলাকায় দলীয় সংগঠনের ভিত শক্ত করতে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। একে ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’ বলে অভিহিত করে সরাসরি বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি গৌরীশংকর দত্তর সুস্পষ্ট অভিযোগ, ‘দুষ্কৃতী যে বা যারাই হোক, তারা মুকুল রায়ের মদতপুষ্ট। তদন্তে সত্য প্রকাশিত হবেই।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, সত্যজিৎ অত্যন্ত জনপ্রিয়, ভাল ছেলে। মতুয়া মহাসংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তা নিয়েই গত কয়েকদিন ধরে টানাপোড়েন চলছিল। তাতে সত্যজিৎ কিছুটা চিন্তিত ছিল। এই সময়েই ওর ওপর হামলা চালানোর টার্গেট করেছে দুষ্কৃতীরা। এর শেষ দেখে আমরা ছাড়ব।’ নদিয়া জেলার ভারপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলেরও একই বক্তব্য। তিনিও সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, ‘উনিশে ফিনিশ হয়ে যাবে বুঝে বিজেপি এখন তৃণমূলের শক্তপোক্ত নেতাদের সরিয়ে দিচ্ছে। অরাজকতা তৈরি করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। নিজেদের পায়ের তলায় মাটি নরম। তাই অন্যের ওপর হামলা চালিয়েছে।’ তিনি রবিবার সকালের মধ্যে কৃষ্ণগঞ্জে পৌঁছে ঘটনা বিস্তারিত দেখবেন বলে জানিয়েছেন। নাম না করে মুকুলকে কাঠগড়ায় তুলছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়- ও। তাঁর দাবি, ‘একেবারে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে সত্যজিৎকে। এর পিছনে বিজেপির মদত আছে। সদ্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন যে গদ্দার তার মদত রয়েছে এতে। আমরা এর প্রতিবাদ করছে। বিজেপির যারা মদত দিচ্ছে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা হবে। বৃহত্তর ষড়যন্ত্র খতিয়ে দেখা হবে।’
তবে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি পাল্টা বলেন, ‘অনুব্রত মণ্ডল বীরভূম থেকে খুনের রাজনীতি আমদানি করেছেন। আমরা চাই যে এই কাজ করেছে তাঁর শাস্তি হোক। তদন্ত হোক। দেখা যাবে নিজেদের দ্বন্দ্বেই খুন হয়েছেন সত্যজিৎ বিশ্বাস।’