নয়াদিল্লি: ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত আইপিএস হেমন্ত কারকারেকে নিয়ে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের রেশ কাটতে না-কাটতেই অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করলেন বিজেপির স্টার প্রার্থী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর ওরফে সাধ্বী প্রজ্ঞা। টিভি নাইন কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সিদ্ধান্ত যথাযথ ছিল। যখন মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল তখন ধ্বংসকারীদের দলে তিনিও ছিলেন। এর জন্য তিনি নিজেকে গর্বিত মনে করেন।
প্রজ্ঞা বলেন, “আমি এটাকে (বাবরি মসজিদ) ভেঙে ফেলার জন্য কাঠামোর উপর উঠেছিলাম। আমি ভয়ঙ্কর ভাবে গর্বিত যে, ঈশ্বর আমাকে সেই সুযোগ এবং শক্তি দিয়েছেন এবং আমি তা করেছি। আমরা দেশ থেকে একটা কলঙ্ক মুছে দিয়েছি। এখন আমরা সেখানে রাম মন্দির নির্মাণ করব”। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। রামমন্দির নির্মাণ হবেই। রামই রাষ্ট্র, রাষ্ট্রই রাম”।
শনিবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রজ্ঞার এই মন্তব্য প্রচারিত হওয়ার পরই বিতর্কের ঝড় ওঠে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন কমিশন তাঁকে নোটিশ পাঠায়। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের কারণ দর্শানোর নোটিশ পেলেন প্রজ্ঞা। মধ্যপ্রদেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ভি এল কান্ত রাও জানিয়েছেন, টেলিভিশন চ্যানেলে রাম জন্মভূমির ধ্বংসকাণ্ড সম্পর্কিত সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, প্রজ্ঞার মন্তব্যে বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়, জাতির ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর জবাব তলব করা হয়েছে।
এর আগে হেমন্ত কারকারেকে নিয়ে ‘অভিশাপ’ মন্তব্য প্রথম নোটিশটি পান প্রজ্ঞা। মুম্বই সন্ত্রাসের শহিদ পুলিশ অফিসার কারকারের মৃত্যু হয় লস্কর-ই-তৈবার ফিদায়েঁ আজমল কাসভ এবং তার সঙ্গীদের গুলিতে। যদিও বিজেপি প্রার্থীর দাবি, তাঁর অভিশাপেই মৃত্যু হয়েছে কারকারের। প্রজ্ঞার কথায়, “সে সময় আমি কারকরেকে বলেছিলাম, তোর সর্বনাশ হবে। তার সওয়া মাস পরেই সে শেষ হয়েছিল”। ২৬/১১ জঙ্গি হামলায় মুম্বইয়ের এটিএস প্রধান হেমন্ত কারকারের দুঃসাহসিক আত্মত্যাগ দেশবাসীর আবেগের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তাঁকে মরণোত্তর অশোকচক্র সম্মান দেওয়া হয়। তাই, প্রজ্ঞার এমন মন্তব্যের জেরে সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। প্রজ্ঞার মন্তব্যের ব্যাখ্যা তলব করে নোটিস জারি করে নির্বাচন কমিশন। যদিও, বিজেপিকে সে ভাবে সমালোচনা করতে দেখা যায়নি।
এ ধরনের অবমাননকার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস এবং এনসিপি ২৬/১১ সন্ত্রাসের শহিদের অবমাননার দায়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি তুলেছে। আইপিএস অ্যাসোসিয়েশন প্রজ্ঞার মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।