বেঙ্গালুরু : পুলওয়ামা হামলার পরই আশঙ্কা করা হয়েছিল গেরুয়া শিবির আধাসেনাদের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করবে। বিরোধীরা সেই আশংকা গোপন করেনি। ভারতীয বায়ুসেনার প্রত্যাঘাতের ঠিক পরেই রাজস্থানে বিজেপির জনসভায় শহীদদের ছবি পিছনে রেখে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,”দেশ নিরাপদ হাতেই রয়েছে”। দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন,তখন গোটা বিজেপি শিবির যে এটিকে ভোট জেতার অন্যতম হাতিয়ার করবে তা নিয়ে বিশেষ সন্দেহ নেই। সেই রাজনীতির সুর স্পষ্ট করলেন কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা। জানিয়ে দিলেন, পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয় বায়ুসেনা যে স্ট্রাইক করেছে, তাতে ২২টি লোকসভা আসন বিজেপি-র জন্য নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে সম্প্রতি প্রচারে বেরিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি ইয়েদুরাপ্পা। চিত্রদূর্গে সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, ‘‘গত চল্লিশ বছরে এই প্রথমবার পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়া গেল। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাহসিকতার জন্যই তা সম্ভব হয়েছে। পুলওয়ামার বদলা নিয়ে ছাড়বেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রত্যাঘাত করে তা পূরণ করেছেন তিনি। ’’ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তাতে লাভবান হবে বলেও মন্তব্য করেন ইয়েদুরাপ্পা। তাঁর কথায়, ‘‘পাকিস্তানে ঢুকে তিনটি জঙ্গিঘাঁটি গুড়িয়ে এসেছি আমরা। গোটা দেশ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এমনকি বিরোধীরাও। উত্সবে মেতেছেন সকলে। দেশজুড়ে নতুন করে মোদী ঝড় উঠেছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে। শুধুমাত্র কর্নাটক থেকেই ২২টির বেশি আসন জিতব আমরা।’’
Shocking & disgusting to understand #BJPsPlot4Vote. It is unfortunate that @BJP4India is calculating electoral gains even before the dust has settled. No patriot shall derive such sadistic gains over soldiers' death, only a anti-nationalist can.
What will RSS say about this? pic.twitter.com/w6wAhAg6gv— Siddaramaiah (@siddaramaiah) February 28, 2019
বরাবর বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পরিচিত ইয়েদুরাপ্পা। নির্বাচনী প্রচারে তাঁর এই মন্তব্য নিয়েও নতুন করে সমালোচনা শুরু হয়েছে। পুলওয়ামার ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, “রাজনীতি করার জন্য কি জওয়ানদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হলো?” মমতার তোলা সেই প্রশ্নইকে যেন আরও উস্কে দিলেন কর্নাটকের বিজেপি নেতা।
কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিএস নেতা কুমারস্বামী বলেছেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে গোটা দেশ যখন কেন্দ্রীয় সরকার এবং ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর পাশে দাঁড়াচ্ছে, তখন বিজেপি নেতা ইয়েদুরাপ্পা ভোটের অঙ্ক কষছেন। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক।” ইয়েদুরারপ্পার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি দীনেশ গুন্ডু রাও। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো জঘন্য মন্তব্য করেছেন ইয়েদুরাপ্পা। সেইসঙ্গে তাঁর এই মন্তব্য যথেষ্ট লজ্জাজনকও। জম্মু-কাশ্মীরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রতি কোথায় সমব্যথী হবেন, তা নয় রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। নির্বাচনী জয়ই কি বিজেপির কাছে সবকিছু? দেশের নিরাপত্তার কোনও গুরুত্ব নেই? দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরিই কি ওদের আসল নির্বাচনী রণকৌশল? সিদ্দারামাইয়াও ইয়েদুরাপ্পার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন। তাঁর কথায়, ”ইয়েদুরাপ্পার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি আমি। একদিকে আমাদের জওয়ানরা আত্মবলিদান দিয়ে চলেছেন। কোথায় সমব্যথী হবেন, তা নয় নির্বাচনী ফায়দা তুলতে নেমে পড়েছেন। নিহত জওয়ানদের পরিবারের চোখের জলও শুকোয়নি এখনও পর্যন্ত। তার মধ্যেই আসনের হিসাব শুরু করে দিয়েছেন।”প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এর সাফাই দিতে হবে বলেও টুইটারে লেখেন সিদ্দারামাইয়া। একই দাবি তোলেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালাও।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইয়েদুরাপ্পার সমালোচনায় মুখ খোলেন সাধারণ মানুষও। কেউ কেউ বলেন, এতদিন ধরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে আসছিলেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি যে মিথ্যা নয়, ফের একবার প্রমাণিত হল। ইয়েদুরাপ্পাকে বিজেপি থেকে সাসপেন্ড করার দাবিও তোলেন অনেকে।