বিরোধিতা মানেই দেশদ্রোহিতা নয়,নাম না করে ব্লগে মোদী- শাহকে তোপ আডবাণীর

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

নয়াদিল্লি: দীর্ঘদিন ধরে দলে একঘরে হয়েছিলেন তিনি। এবারের লোকসভা নির্বাচনে যে লোকসভা কেন্দ্রের ছ’বারের সাংসদ তিনি, সেখান থেকেও তাঁকে টিকিট দেয়নি তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টি। যে দলটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে তাঁর, অর্থাৎ, লালকৃষ্ণ আদবানির নামটি জানে গোটা বিশ্ব। অবশেষে ভোটের আগে মুখ খুললেন তিনি। একটি ব্লগ লিখলে বৃহস্পতিবার। যার শিরোনাম- নেশন ফার্স্ট, পার্টি নেক্সট, সেলফ লাস্ট (আগে দেশ, তারপর দল, সবশেষে নিজে)। এই ব্লগে দলের উদ্দেশে তাঁর বার্তা- সামনের দিকে তাকান, পিছনের দিকে তাকান এবং অবশ্যই নিজের ভিতরে তাকান। প্রসঙ্গত, ৯১ বছর বয়সী এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের বদলে গান্ধীনগরে বিজেপি টিকিট দিয়েছে দলীয় সভাপতি অমিত শাহ’কে।

সেদিনের পর বৃহস্পতিবার এই প্রথম মুখ খুললেন বিজেপি-র এই নবতিপর নেতা। ৬ এপ্রিল বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস। ওই দিনেই জনসঙ্ঘ থেকে বিজেপির যাত্রাপথ শুরু করেছিলেন অটল-আডবাণীরা। ব্লগ লিখে সবক শেখাতে চাইলেন দলের পরবর্তী প্রজন্মকে। বললেন, “রাজনীতিতে যাঁরা আমাদের বিরোধী, আমরা তাঁদের কখনও শত্রু হিসাবে দেখিনি, দেখেছি প্রতিপক্ষ হিসাবে। বিজেপি-র শুরু থেকে সেই দর্শনেই বিশ্বাস করেছে।” তাঁর কথায়, বিজেপি ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে কখনও সংকীর্ণ আঙ্গিকে দেখেনি। বরং বরাবর মনে করেছে, প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের স্বাধীনতা রয়েছে। এমনকী যাঁরা আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করে না তাঁদেরও কখনও দেশবিরোধী বলে মনে করেনি। বরং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সুনিশ্চিত রাখার জন্যই দল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক স্তরেও প্রতিটি নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকারের স্বপক্ষেই কথা বলে এসেছে বিজেপি।

আডবাণীর আবেদন, দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে মজবুত করতে ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা করা উচিত। গণতন্ত্রের উত্সব নির্বাচন। এটা রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের সত্ভাবে আত্মমন্থনের সুযোগ তৈরি করেছে।তবে শুধু এ ব্যাপারেই নয়, দলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নিয়েও এদিন পরোক্ষে খোঁচা দিয়েছেন আডবাণী। ব্লগে তিনি লিখেছেন, দলের কর্মীদের অতীত ও ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর পাশাপাশি আত্মমন্থনও করা জরুরি। তাঁর কথায়, দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিজেপি-র বরাবরই গর্বের বিষয় ছিল।পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদী-অমিত শাহরা যে ঘরানায় বিজেপি পার্টি চালাচ্ছেন তাতে আডবাণী যে ঘোর অসন্তুষ্ট তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এমনকী তাঁকে যে দল এবার আর প্রার্থী করবে না সে ব্যাপারে তাঁকে মোদী বা অমিত শাহ কিছু বলেননি। সেই বার্তা দিয়ে পাঠানো হয়েছিল দলের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রামলালকে। এ হেন পরিস্থিতিতেই দলের গণতান্ত্রিক পরিবেশ কায়েম রাখার ব্যাপারে আরও বেশি করে সওয়াল করেছেন।

বস্তুত বিজেপি-র সাংগঠনিক কাঠামোর রাশ সাত বছর আগেই পুরোপুরি দ্বিতীয় প্রজন্মের হাতে চলে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরাই এখন দলের কর্তা-ধর্তা। এবং তাঁদের নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে গেরুয়া শিবিরে অদ্ভুত ট্রেন্ডটা গোটা বিশ্বেরই নজর কেড়েছে। তা হল, কারও সঙ্গে মতান্তর হলেই তাঁর উপর দেশবিরোধী বলে তকমা সেঁটে দেওয়া। বা সটান বলে দেওয়া পাকিস্তানে চলে যান! শুধু তা নয়, মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ নিয়েও গেরুয়া শিবির থেকে উপর্যুপরি আঘাত হানা হয়েছে। কখনও বলা হয়েছে, এমন পোশাক পরা যাবে না, কখনও বলা হয়েছে গোমাংস খাওয়া যাবে না।আডবাণীর এ দিনের মন্তব্যকে সেই প্রেক্ষাপটেই দেখছেন রাজনীতির চরিত্ররা।স্বাভাবিক ভাবেই যা অস্বস্তিতে ফেলেছে ক্ষমতাসীন নেতৃত্বকে। কারণ, আডবাণীর এই মন্তব্যকে চকিতে হাতিয়ার করে নিয়েছেন বিরোধীরাও। যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে বলেছেন, “বিজেপি-র প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রাক্তন উপ প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সৌজন্য বজায় রাখার কথা বলেছেন তা প্রশংসনীয়। বিরোধিতা করা মানেই দেশবিরোধী নয়। ওঁর বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।”

লোকসভা এবার লালকৃষ্ণ আডবাণীকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। ৯১ বছরের আডবাণীর জায়গায় গান্ধীনগরে প্রার্থী হয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। এই গান্ধীনগরেই নয়ের দশকে আডবাণীর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সঙ্গে বুথ সামলাতেন অমিত শাহ। সময়ের চাকা ঘুরেছে। আডবাণীর ‘রাজনৈতিক শিষ্য’ই আজ দিল্লির মসনদে। ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বরে মোদী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পর থেকে ক্ষুব্ধ আডবাণী। মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভিতরে-বাইরে কোণঠাসা প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী। আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীদের ‘নাম কে ওয়াস্তে’ উপদেষ্টা কমিটিতে রেখে তাঁদের কক্ষচ্যুত করে দিয়েছেন মোদী-শাহ। এবার লোকসভা নির্বাচনেও টিকিট পেলেন না। এদিনের আডবাণীর ব্লগে ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। আর এটা করতে গিয়েই লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদের হাতে হাতিয়ার তুলে দিলেন বর্ষীয়ান নেতা।

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest