বেনারসের গলিতে আজও শোনা যায় তাঁর সানাইয়ের সুর,১০৩ তম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য বিসমিল্লাহ খান’কে

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

নিউজ কনার ওয়েব ডেস্ক: শিল্পীর কোন জাত থাকে না, ধর্ম থাকে না। শিল্পের গ্রহণযোগ্যতা সার্বিক। দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে শিল্পী ও শিল্পের অবস্থান। সানাইসম্রাট বিসমিল্লাহ খান এমনই একজন শিল্পী যাকে নিয়ে বুক ঠুকে গর্ব করা যায় আজও। যদিও এদেশে বহুবার শিল্পীদের ছাড় দেয়নি। সংকীর্ণমনা আমআদমি ভরা মজলিসে জানতে চেয়েছে জাত -পাত ও ধর্ম।সানাইয়ের মূর্ছনা তাদের কানে প্রবেশ করেনি। কোনদিন কবিতা গান নাটক সাহিত্য যারা কখনও ছুঁয়ে দেখেনি তারা কেবল প্রশ্ন করেছে ধর্ম কি?
তবে এই প্রশ্ন আজকের নয়। এই প্রশ্ন যুগে যুগে বারবার ঘুরে এসেছে।কবি নজরুল ইসলাম এক হাতে লিখেছেন শ্যামা সংগীত, সেই হাতেই লিখেছেন অসামান্য ইসলামী গজল। তারপরও তাঁর জাতপাত ধর্ম নিয়ে অর্ধশিক্ষিত- ছদ্মশিক্ষিতরা ময়নাতদন্ত করেছে। কিন্তু তাতে শিল্পীর কিছু যায় আসে না। একই ভাবে এসবকে পাত্তা দেননি সানাইসম্রাট বিসমিল্লাহ খান। অনেকে অবশ্য নাক কুঁচকে বলেছেন উনি তো শিয়া ছিলেন। সে কারণেই তাঁর মধ্যে ধর্মের বিশেষ প্রভাব ছিল না।কিন্তু তাঁর যারা শুনেছেন তাদের মনে হয়েছে এ যেন এক স্বর্গীয় কান্না। আসলে এই শিল্পীরা সর্বশক্তিমানের আরাধনা করেছেন সুরের ঝংকার দিয়ে।  হৃদয়ের অভ্যন্তর থেকে আসা রক্ত ঝরানো সুর যাতে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই, আচার সর্বস্বতা নেই, রয়েছে কেবল সর্বশক্তিমান ও পরম করুণাময় ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের আকুতি।বিসমিল্লাহ খানের সানাইয়ের স্বর্গীয় সুর ভেঙ্গে দিয়েছিল জাতপাত- ধর্মের বেড়াজাল।

নজরুল তাঁর গানে লিখেছেন, কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন।আবার সেই নজরুল অন্য জায়গায় লিখেছেন, মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।কোন একটি লাইন দিয়ে কবিকে বিচার করতে যাওয়া পাহাড়প্রমাণ মূর্খতা বৈ কিছু নয়। কিন্তু তারপরও শিল্পী ও কবিরা এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন বহুবার। একবার ইরাকের এক মাওলানা বিসমিল্লাহ খানকে বলেছিলেন,গানবাজনা মিউজিক ইসলামে নিষিদ্ধ আপনি নিষিদ্ধ কাজ করছেন। স্বভাবসুলভ ভাবে বিসমিল্লাহ মৃদু হেসে বলেছিলেন, আপনি আমার সানাই শুনুন তারপর কথা বলুন। পরে সানাইয়ের মূর্ছনায় মুগ্ধ হয়ে কথা হারিয়েছিলেন সেই মাওলানা।এনডিটিভির ওয়াক দা টক অনুষ্ঠান করতেন শেখর গুপ্ত। সেই সময় তাঁকে এই অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন বিসমিল্লাহ খান।

১৯১৬ সালের ২১ মার্চ বিহারের বক্সার জন্ম বিসমিল্লাহ খানের। অর্থাৎ আজ তাঁর ১০৩ তম জন্মদিন। জীবনে দুটো বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন তিনি কিন্তু কখনো মনে হয়নি হিংসার কথা। তিনি বহুবার বলেছেন, আশেপাশের সব শেষ হলেও সুর শেষ হবে না। দেশভাগের পর বহুজন তাঁকে পাকিস্তানের চলে যাবার জন্য আমন্ত্রণ করে কিন্তু তিনি প্রতিবার  ফিরিয়ে দিয়েছেন সেই আহ্বান। বেনারসের প্রতি তাঁর ছিল অসম্ভব ভালোবাসা। গুরু আলী বক্স বেনারসের বিশ্বনাথ মন্দিরে সানাই বাজাতেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা অনেকেই মন্দিরে সানাই বাজিয়ে রোজগার করেছেন। বিসমিল্লা খান ধর্মকে দেখতেন সুরের ভাষায়। সে কারণে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর ধর্মীয় চেতনা এক ছিল না।
তিনি প্রকাশ্যে সরস্বতীর কথা বলেছেন, বিষ্ণুর অবতার বালাজির কথা বলেছেন। ভাবনায় সততা থাকলে মানুষ তাঁকে স্মরণ করে, সম্মান করে। প্রাথমিকভাবে কিছু প্রতিবন্ধকতা আসে ঠিকই কিন্তু ব্যক্তি তার আপন পরিচয় ধীরে ধীরে সেসব মুছে দেন। স্ত্রীর প্রয়ানের পর বিসমিল্লাহর চিরদিনের সঙ্গী হয়েছিল সানাই। এটিকে তিনি বেগম বলে ডাকতেন।

১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট রাত ১২ টার ঠিক পরেই তাঁর সানাই শুনেছিল গোটা দেশ। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু লালকেল্লায় নিয়ে এসেছিলেন তাঁকে। ১৯৬১ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মান পান। ১৯৬৮ তে পদ্মভূষণ সম্মানে বিভূষিত করা হয় তাঁকে। ১৯৮০ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০১ -এ ভারতরত্ন সম্মান পান বিসমিল্লা খান। কেন চলচ্চিত্র জগতে পা রাখলেন না,এই প্রশ্নের উত্তরে বিসমিল্লাহ, ওরা আমাকে নিজেদের কায়দায় চালাতে চায়। কিন্তু আমি সেসব শোনার বান্দা নই।২০০৬ সালের ২১ আগস্ট প্রবাদপ্রতিম এই সানাই শিল্পী চিরতরে সুরলোকে যাত্রা করেন।

(তথ্যসূত্র -দ্য প্রিন্ট)

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest