মুসলিম বিরোধী স্লোগানের সামনে সাহসী পদক্ষেপ হিজ়াব পরা তরুণীর

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

ওয়াশিংটন: মাথায় হিজ়াব। হাতে ভিকট্রি চিহ্ন। মুখে অনাবিল হাসি। রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসে পোজ দিচ্ছেন বছর চবিবশের তরুণী। পিছনে তখন সমবেত বিক্ষোভকারীরা হুঙ্কার ছাড়ছেন, ‘মুসলিম নিপাত যাক।’ হিজ়াবের তরুণীর তাতে হেলদোল নেই। নিঃশব্দে যেন বিপ্লব ঘোষণা করেছেন তিনি। প্রতিবাদের ভাষা ঠোঁটের হাসিতে আবদ্ধ, যেন বলতে চাইছেন “ধর্মান্ধতা নয়, শান্তি রাখুন।”

ইসলামিক সার্কল অব নর্থ আমেরিকার (ICNA) সম্মেলন ঘিরে কয়েক দিন ধরেই বিক্ষোভ চলছে ওয়াশিংটনে। সম্মেলনে বাইরে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে চলছে প্রতিবাদ-আন্দোলন। বিক্ষোভকারীদের স্লোগান, “ইসলাম হলো রক্ত ও খুনের ধর্ম। প্রভু যীশুর রক্ত মানবসভ্যতার জন্য চরম বিপর্যয়ের দিন।” অনেকের টি শার্টের বুকে বড় বড় হরফে লেখা, ‘আজ আমরা বেঁচে রয়েছি, কাল হয়তো থাকবো না। তার জন্য দায়ী কারা?’ এই বিক্ষোভ মিছিলের সামনে বসেই হাসি মুখে ছবি তুলে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন তরুণী। সাইমা ইসমাইল। এই নামটাই এখন ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে নেট দুনিয়ায়। মিছিলের সামনে কখনও দাঁড়িয়ে, কখনও বসে হাতে ভিকট্রি চিহ্ন দেখিয়ে পোজ দিয়েছেন তরুণী।

“এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম আমিও। দু’দিন ধরেই দেখছি অনাবশ্যক কিছু কথা লিখে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন মানুষজন। আর থাকতে পারিনি, ভাবলাম প্রতিবাদ হওয়া দরকার,” মিডিয়াকে এমনটাই জানিয়েছেন সাইমা। বলেছেন, গোটা বিষয়টাতেই পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। প্রথমে এই বিক্ষোভ মিছিলের সামনে যাওয়ার জন্য পুলিশেরই অনুমতি চান তিনি। তবে চোখ রাঙিয়ে পুলিশ কর্তারা সপাটে না করে দেন তাঁকে। তখনই এই ফন্দি আঁটেন তরুণী। বিক্ষোভের স্লোগান যখন জোরদার হয়ে উঠছে, হাতে প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে মুখে মাইক নিয়ে বিক্ষোভকারীরা এগিয়ে আসছেন তখনই ফাঁক বুঝে সেই মিছিলের সামনেই রাস্তায় বসে পড়েন তিনি। মুখের নানা ভঙ্গিমায় বুঝিয়ে দেন এই প্রতিবাদ তাঁর না পসন্দ। এটা শুধু তাঁর একার প্রতিবাদ নয়, শিক্ষিত, রুচিশীল মানুষরা হানাহানি, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতাকে প্রশ্রয় দেন না।

“আমাকে দেখে কুরুচিকর মন্তব্য করছিলেন বিক্ষোভকারীদের অনেকে। কারও মুখে ছিল সাম্প্রদায়িকতার বার্তা। কেউ বলছিলেন, তোমার উচিত প্রভু যীশুর শরণাপন্ন হওয়া,” সাইমার কথায়, ধর্মান্ধতা সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে পারে না। উত্তেজনার আবহে পারস্পরিক দোষারোপ ও হিংসা সমস্যার সমাধানের বদলে তাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।মুসলিম তরুণীর সাহস দেখে যেমন নাক সিঁটকেছেন অনেকে। তেমনই প্রশংসাও করেছেন বহু মানুষ। ভিউয়ারদের কেউ লিখেছেন, ‘এটাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সঠিক সময়,’ আবার কারওর মন্তব্য, ‘সাইমা সাহসী, এই অভিনব প্রতিবাদে আমরা আপ্লুত’।

নানা সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত সাইমা। অটিসম-আক্রান্ত শিশুদের বিশেষ থেরাপির কাজ করেন তিনি। জানিয়েছেন, এই সম্মেলনে শিশু সুরক্ষা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, বিনোদন এমনকি খেলাধূলা সংক্রান্ত নানা গঠনমূলক ও প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়। লাউডস্পিকার থাকত তাহলে বিক্ষোভকারীদের শোনানো যেত কত সুন্দর জিনিস এখানে শেখানো হয় যার সঙ্গে হিংসা ও সন্ত্রাসের সামান্যতম যোগাযোগও নেই।

টুইটারের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রামেও এই ছবি পোস্ট করেছেন সাইমা। সেখানে তাঁর ক্যাপশন, “উদারতাই বিশ্বাস ও শান্তির মূল প্রতীক। যেখানে উদার ও নিরপেক্ষ মনোভাব নেই, সেখানে বিশ্বাসও জমাট বাঁধে না।” বুধবার ভারতীয় সময় দুপুর পর্যন্ত সাইমার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লাইক ছাড়িয়েছে ৬৩,০০০। টুইটারে প্রায়  ২৬,০০০। সেটা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest