Site icon The News Nest

মোদী ‘ব্যর্থ’ জেনেও তৃণমূলের অপশাসন রুখতে ব্রিগেডমুখী জনতা

tmc bjp 021218

কলকাতা: নরেন্দ্র মোদীর সভা ঘিরে বিজেপির নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস তুঙ্গে। তবে একান্তে কেউ কেউ স্বীকার করলেন যে উন্নয়ন নয়, তৃণমূলের অপশাসন থেকে মুক্তি পেতেই বিজেপিকে চাইছেন তাঁরা। গত পাঁচ বছরে নরেন্দ্র মোদীর পরিকল্পনার ব্যর্থতা দেশজুড়ে প্রমাণিত। সুতরাং বাংলায় কী নতুন করে যে বিজেপি বিশেষ উন্নতি করতে পারবে না তা বঙ্গ বিজেপি ভালই জানে।

ব্রিগেডে মোদীর মুখোশ পরে আসা বহু মানুষই তা স্বীকার করলেন। তারপরও চোয়াল চেপে অনেকে বললেন, আর যাই হোক এই সরকার চায় না। কিন্তু প্রশ্ন হল এই সরকারের বিকল্প কী মোদি সরকার হতে পারবে? তার জবাবে অনেকে জানালেন তা হয়তো হতে পারবে না। তবে তৃণমূলকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া জরুরী। গ্রামে গঞ্জে তাদের অপশাসন মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছে। ঠিক শেষ জমানায় সিপিএম যেমন করেছিল এ যেন তার থেকেও ভয়ঙ্কর। এমনটাই জানালেন ব্রিগেড মঞ্চে আসা অনেকেই। কেউ কেউ অবশ্য কিছু না জেনে বুঝেই সবার সঙ্গে এসেছেন কলকাতা ঘুরতে।যেকোনও দল ব্রিগেডে সভা ডাকলে এটা হয়ে থাকে। এবার আবার রোদে পুড়তে হবে না। আগে থেকেই জেনে গিয়েছেন সকলে।কলকাতায় এসে খানিকটা ঘোরাফেরা হবে এই ভাবনাও রয়েছে। বিরোধী দল গণতন্ত্রে অত্যন্ত জরুরী।কিন্তু প্রশ্ন হল বিজেপি নিজেই তো বিরোধী মুক্ত দেশ চেয়েছে। নরেন্দ্র বহুবার নিজেই কংগ্রেস মুক্ত ভারত চেয়েছেন। তাহলে সে কথা তৃণমূল বললে অসুবিধা কোথায়? এই প্রশ্ন অবশ্য অস্বস্তি লুকিয়ে রাখতে পারেনি বিজেপি সমর্থকরা। বেশ কয়েকজনকে দেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আমতা আমতা করেছেন প্রত্যেকে। কেউ কেউ অবশ্য বাধা গতে উত্তর দিয়েছেন, যেমন পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে।, ভারতীয় সেনার মনোবল বেড়েছে, দেশে উন্নয়ন হয়েছে – কিন্তু কি উন্নয়ন হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট খবর তাঁদের কাছে নেই।

কারণ এরা অনেকেই নোটবন্দির কারণে কাজ খুইয়েছেন। বহু মানুষ আছে যারা জিএসটির কারণে চাপে পড়েছেন। তারপরও তৃণমূল তাঁদের মাটির শত্রু। তাই এই মুহূর্তে তৃণমূলকে দুর্বল করাই মূল লক্ষ্য তবে তারই মাঝে অনেকেই দলছুট তৃণমূল নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি। কিন্তু কথা বলেছেন দিলীপ ঘোষের ভাষায়। তাদের বক্তব্য প্রথম দিকে কিছু করার থাকে না। বিজেপির এখন তেমন নেতা নেই। সে কারণে অন্য দল থেকে নেতা নিতে হচ্ছে। ক্ষমতায় এলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে প্রশ্ন হল যে মুকুলকে ভাগ মুকুল বলে বিজেপি স্লোগান দিয়েছিল তাঁর নেতৃত্বে মিছিল হাঁটতে বিজেপি কর্মীদের কি সংকট হচ্ছে না ? জবাবে অবশ্য এই সত্যিটি অস্বীকার করতে পারেননি। অনেকেই মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন মুকুল রায় দুর্নীতিগ্রস্ত কিন্তু তাঁদের উপায় নেই।

অন্যদিকে, মোদীর দলের একটি মারাত্মক সমস্যা হলো তারা কখনো দাড়ি-টুপি দেখলে গলাগলি করছে কখনো বা গালাগালি করছে। এই দ্বিচারিতার কারণে তারা বাংলায় মুসলিম ভোট পেতে ব্যর্থ হবে। অথচ এই সরকারকে ধাক্কা দিতে গেলে মুসলিম ভোট অত্যন্ত জরুরি। একদিকে মুসলিম বিদ্বেষ অন্যদিকে মুসলিমদের উন্নয়নের কথা বললে কেউ তা বিশ্বাস করতে পারে না। অথচ বাংলায় মুসলিম ভোট একটি বড় বিষয়। এই ভোটে একদিন সিপিএমকে মসনদ এনেছিল এবং দীর্ঘদিন মসনদ ধরে রাখতে সাহায্য করেছিল। কংগ্রেস দীর্ঘদিন এই ভোটেই খুশিতে ছিল। বিজেপি যদি মনে করে কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট এক জোট করে তারা ক্ষমতায় থাকবে তাহলে বুঝতে হবে তারা আর যাই হোক দেশের মাটিকে বোঝে না। বাংলার মাটিকে তো নয়ই। এমনিতেই গোটা দেশে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির দাপট বাড়ছে। বাংলায় সমস্ত হিন্দু একজোট হয়ে বিজেপিকে ভোট দেবে এ ভাবনা একপ্রকার বাতুলতা বরং উল্টো দিক থেকে বলা যায় বাংলার মুসলিমদের ভোট বিজেপির ঝুলিতে আসবে না। যদিও কিছু মুসলিম তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুব রাগ থেকে ইভিএমে পদ্ম বোতামে আঙুল রাখেন তবে সে সংখ্যা ধর্তব্যের মধ্যে নেই। এরাজ্যের অবাঙালিদের একটা ভোট হয়ত বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে কিন্তু আর এসএসএবং মোদীবাহিনী যে হিন্দুত্বে বিশ্বাস করে বাংলার হিন্দুদের বিশ্বাস সেই হিন্দুত্বে নেই। এখানকার মানুষ ধর্মকে সংস্কৃতির মোড়কে দেখতে চায়। তবে এটাও ঠিক যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহিঃপ্রকাশে সংখ্যালঘুদের প্রতি আলাদা পক্ষপাতিত্ব রয়েছে বলে মনে করেন বাংলার বহু হিন্দু। সেই কারণেই অনেকেই গেরুয়ামুখী হয়েছেন বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।

Exit mobile version