যুদ্ধ নয়, ভারতের চাপে সুর নরম কোনঠাসা ইমরান খানের

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

ইসলামাবাদ: যুদ্ধের উত্তেজনা কমাতে সুর নরম করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বায়ুসেনার প্রত্যাঘাতের পরে ফের শান্তির বার্তা দিলেন তিনি।

এদিন সকালেই নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতের বায়ুসীমায় প্রবেশ করে পাকিস্তানের এফ ১৬। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, পাক বায়ুসেনা ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু যথাসময়ে ভারত যোগ্য জবাব দিয়েছে।প্রথমে পাকিস্তান সরকারের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, সংঘাত বাড়ানোর কোনও উদ্দেশ্য নেই তাদের। বরং ভারতের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতেই আগ্রহী তারা। তবে ভারতের প্রত্যাঘাতের জবাবে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে হত। তাই অসামরিক অভিযান চালাতে যুদ্ধবিমান পাঠানো হয় কাশ্মীরে। এরপরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শান্তির বার্তা দেন। জানিয়ে দিলেন ভারত আলোচনা চাইলে, পাকিস্তান প্রস্তুত।

পাকিস্তানে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাক প্রধানমন্ত্রী  ভারতকে আলোচনার আহ্বান জানান। আলোচনা শুরু হলে পাকিস্তানের তরফে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেন,’আমরা দেখাতে চাইছিলাম যে চাইলে আমরাও নিয়ন্ত্রণ রেখা টপকে ভারতে আঘাত হানতে পারি। তবে ভারতের কোনওরকম ক্ষতি বা সমান্তরাল ক্ষয়ক্ষতি সাধনের কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। শুধু আমাদের ক্ষমতা দেখানোরই উদ্দেশ্য ছিল ইসলামাবাদের। কিন্তু ওই ঘটনার সময়েই ভারতের দুটি মিগ বিমান পাকিস্তানের দিকে ঢুকে পড়ে। পাইলট আমাদের কব্জায় রয়েছে।কিন্তু যা হয়েছে তা হয়েছে। আমি আশা করব ভারত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পদক্ষেপ করবে।’

ভারতের উদ্দেশ্যে এদিন ইমরান খান বলেন,’ইতিহাসে যত যুদ্ধ হয়েছে সব ভুল সিদ্ধান্তের ফলে। যারা যুদ্ধ শুরু করে তারা কেউ জানে না সেই যুদ্ধ কোথায় গিয়ে শেষ হবে। তাই, আমি ভারতকে প্রশ্ন করতে চাই, আপনাদের বা আমাদের কাছে যে অস্ত্র আছে, সেই অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও আমরা এই ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কতটা প্রস্তুত? যদি যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে তা আমি বা নরেন্দ্র মোদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আপনারা যদি সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা চান তাহলে আমরা প্রস্তুত। আমাদের বসে আলোচনা করা উচিত।’

সরকারি বিবৃতি জারির পর ইসলামাবাদে সাংবাদিক সম্মেলন করেন পাক সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর। তিনি জানান,’গতকাল সীমান্ত লঙ্ঘন করে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। আত্মরক্ষার তাগিদে তার জবাব দিতেই হত আমাদের। কিন্তু আমরা শান্তি চাই। তাই দায়িত্বশীল দেশ হিসাবে কোনও সেনা শিবির বা জনবসতিপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধবিমান পাঠাইনি। বরং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ৬ জায়গায় অভিযান চালাই। চাইলে গুলি চালাতেই পারতাম। কিন্তু সামরিক অভিযান চালানো উদ্দেশ্য ছিল না আমাদের। শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতা প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম।’ ভারতের বিরুদ্ধে নতুন করে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের অভিযোগও তোলেন মেজর জেনারেল গফুর। তাঁর দাবি, বুধবার সকালে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিল ভারতীয় বায়ুসেনার দু’টি যুদ্ধবিমান। কিন্তু গুলি করে সেগুলি নামানো হয়। যার মধ্যে একটি গিয়ে পড়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। ভারতের অন্তর্গত কাশ্মীরে গিয়ে পড়ে আর একটি। পাক সেনা মুখপাত্রের দাবি, দুই ভারতীয় পাইলটকে আটক করেছেন তাঁরা। যার মধ্যে একজন গুরুতর জখম হয়েছেন। অন্য জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রও উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় হামলার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ কখনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না বলে জানান মেজর জেনারেল গফুর। তাঁর কথায়,’প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আগেই বলেছেন, যুদ্ধ শুরু করা সহজ, কিন্তু শেষ করা সহজ নয়। তাই যুদ্ধে যাওয়ার কোনও অভিপ্রায় নেই আমাদের। পাকিস্তান সরকার, সেনাবাহিনী এবং দেশের আমনাগরিক ভারতের সঙ্গে শান্তিস্থাপন করতে আগ্রহী। একমাত্র আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তা সম্ভব। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশেরই যুদ্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তা কখনও সমাধান হতে পারে না। শান্তিপূর্ণ উপায়েই তা খুঁজে বার করতে হবে। আগেও একাধিকবার দিল্লিকে শান্তির প্রস্তাব দিয়েছি আমার। যত তাড়াতাড়ি তা গৃহীত হয়, ততই মঙ্গল। কারণ এতে শুধুমাত্র দুটো দেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের নিরাপত্তা জড়িয়ে।’ দুই দেশের সংবাদমাধ্যমকেও সংযত হতে অনুরোধ জানান মেজর জেনারেল গফুর।

যদিও ইমরানের এই বক্তব্য নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও দেয়নি নয়াদিল্লি। সাউথ ব্লকের কূটনীতিকরা বলছেন, চাপে পড়েই এ সব কথা বলছেন ইমরান। কারণ, ইসলামাবাদ বুঝতে পারছে নয়াদিল্লির সঙ্গে সামরিক সংঘাতে গেলে তাদের অস্তিত্বই সংকটে পড়তে পারে। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ভারত যেখানে সন্ত্রাসবাদীদের গুড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য পাক বায়ুসীমা অতিক্রম করেছিল সেখানে পাকিস্তান সরাসরি হামলা চালালো ভারতীয় সামরিক বাহিনীর উপর। যুদ্ধের অভিসন্ধি যদি নাই থাকবে, তাহলে কেন ভারতীয় সেনার উপর হামলা। যদিও বিভিন্ন মহলের মতে, ভারতীয় সেনার ক্ষমতা এবং বিভিন্ন দেশের ভারতকে সমর্থনে ক্রমশই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে পাকিস্তানের৷ এবং এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পাকিস্তান পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে৷ পাশাপাশি ভারতের সামরিক শক্তির কাছে পেরে ওঠা যে বেশ কঠিন তাও টের পেয়েছে এই প্রতিবেশী রাষ্ট্র৷ আর তাই যুদ্ধের পরিস্থিতি এড়াতে এখন আলোচনার পথকে আশ্রয় করতে চাইছে তারা৷ বুধবারই ইমরান খান পরমাণু অস্ত্র নিয়ে বৈঠকে বসেন বলে জানা যায়৷ ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে ইসলামাবাদে৷ যেখানে পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা চলে বলে সূত্রের খবর৷

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest