শ্রীহরিকোটা: মিশন শক্তির পর আরও একটি মাইলফলক পেরল ইসরো। ইলেকট্রনিক ইন্টেলিজ্যান্স স্টাটেলাইটের উৎক্ষেপণ করল ভারত। আর এভাবেই নজরদারি উপগ্রহ তৈরির দিকে আরেকটু এগিয়ে গেল দেশ । এর সফল উৎক্ষেপণে ভারতের শক্তি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে৷
পূর্ব নির্ধারিত কথা মতোই আজ ১ এপ্রিল সকাল ৬.২৭ মিনিটে পিএসএলভি-সি ৪৫ রকেট থেকে এমিস্যাটের সঙ্গে ২৮ টি অন্য বিদেশি উপগ্রহ লঞ্চ করা হয়৷ টেক অফের প্রায় ১৭ মিনিট পরে রকেট থেকে ৪৩৬ কোজির এমিস্যাটকে ছাড়া হয়৷ জুলাই অথবা অগস্টে স্মল স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল বা এসএসএলভি-র সঙ্গে আরও দুটি ডিফেন্স স্যাটেলাইট ভারত লঞ্চ করবে বলে জানা গিয়েছে৷এই প্রথম ভিজিটর গ্যালারি থেকে রকেট উৎক্ষেপণ চাক্ষুস করলেন সাধারণ মানুষরা।
এক নজরে এমিস্যাটের বিশেষত্ব:-
- সীমান্তে শত্রুর ব়াডার এবং সেনসরের ওপর নজর রাখবে
- শত্রু এলাকার সঠিক নকশা তৈরি করে দেবে
- সীমান্তে মজুত সক্রিয় মোবাইল ফোনের তথ্য তুলে ধরবে
- মোবাইল এবং অন্যান্য মাধ্যমে হওয়া কথাবার্তা ডিকোড করতে সক্ষম
অবশ্য এদিনের অভিযান নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে সমস্ত উদ্বেগ শেষ করে সফলভাবেই পাড়ি দেয় পিএসএলভি রকেট। গত সপ্তাহে কৃত্রিম উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বা ‘এস্যাট’-এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘মিশন শক্তি’। জানা গিয়েছে, এর মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে পৃথিবী থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরের কক্ষে অবস্থিত ৭০০ কিলোগ্রাম ওজনের মাইক্রোস্যাট-আর নামের এই স্যাটেলাইট। বিজ্ঞানীরা জানাছেন, এর ফলে ওই স্যাটেলাইট এবং ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় ৩০০টি টুকরো মহাকাশেই রয়ে গিয়েছে। এদিনের নতুন উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠতে পারত ওই টুকরোগুলি। কারণ মহাকাশে এই টুকরোগুলির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ইসরোর মহাকাশ যান।নীতি আয়োগের সদস্য এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান ভি কে সারস্বত জানাচ্ছেন, শুধু কৃত্রিম উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রর জন্য নয়, সাধারণ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সময়েও এমন বহু টুকরো তৈরি হয়। পৃথিবীর আশপাশে এমন বহু টুকরোই ছড়িয়ে আছে। মাধ্যাকর্ষণের ফলে এই টুকরোগুলোও উপগ্রহের মতো পৃথিবীর পাশে কক্ষে ঘোরে। স্যাটেলাইট বা মহাকাশ যানের উৎক্ষেপণের সময় এমন টুকরো থেকে দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা থাকে। তাই বিশ্বের বহু দেশই এই ধরনের আবর্জনা সাফ করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে আছে ভারতও।
ইসরো সহকারী বিজ্ঞান সচিব, বিবেক সিং অবশ্য জানাচ্ছেন, এর জন্য যথেষ্ট সতর্কতা নেয় ইসরো। মহাকাশের এমন জঞ্জালের পথ চিহ্নিত করতে শ্রীহরিকোটায় বিশেষ রেডার বসানো আছে। এমন কী এর জন্য মার্কিন সেনাবাহিনী বা অন্য সংস্থার দেওয়া তথ্যের সাহায্যও নেয় ইসরো। ওই ধরনের আবর্জনার সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে কখনও কখনও উৎক্ষেপণ কয়েক মিনিটের জন্য পিছিয়েও দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘মিশন শক্তি’-র পরেও এই জন্য বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে ইসরো।