কলকাতা: কংগ্রেসের সঙ্গে জোট জল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় রাজ্যের বাকি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ফেলল বামফ্রন্ট। তবে সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে অলিখিত একটা আসন সমঝোতার ছবিও ধরা পড়ল। কারণ ২০১৪ সালে রাজ্যে যে চারটি আসন কংগ্রেস জিতেছিল, সেখানে বামেরা প্রার্থী দিচ্ছে না।বলা ভাল,কংগ্রেসের জন্য সমঝোতার রাস্তা খোলা রেখেই দ্বিতীয় দফার প্রার্থী ঘোষণা করল বামফ্রন্ট।
চারটি আসনে প্রার্থী না দিয়ে মোট ৩৮টি কেন্দ্রে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল বামফ্রন্ট। আগের বার ২৫টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। বাকি ১৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল সোমবার। শেষমেশ তা হয়নি। বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে বিমান বসুগতবার কংগ্রেসের জেতা উত্তর মালদহ, দক্ষিণ মালদহ, জঙ্গিপুর এবং বহরমপুর— এই চারটি আসন ছেড়ে বাকি ১৩টি আসনে প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেন।বিমানবাবু জানান, মুর্শিদাবাদ থেকে এ বার তাঁদের প্রার্থী হচ্ছেন মহম্মদ বদরোজ্জা খান। কৃষ্ণনগর থেকে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন শান্তনু ঝা। ব্যারাকপুর থেকে দাঁড় করানো হচ্ছে গার্গী চট্টোপাধ্যায়কে। বসিরহাটে শাসকদল তৃণমূলের প্রার্থী নূসরত জাহানের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করানো হচ্ছে পল্লব সেনগুপ্তকে। তৃণমূলের আর এক তারকা প্রার্থী মিমি চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে যাদবপুরে দাঁড়াচ্ছেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
দেখে নিন সম্পূর্ণ তালিকা-
দার্জিলিং: সমন পাঠক
আলিপুরদুয়ার: মিলি ওঁরাও
ঝাড়গ্রাম: দেবলীনা হেমব্রম
হাওড়া: সুমিত অধিকারী
কাঁথি: পরিতোষ পট্টনায়েক
তমলুক: শেখ ইব্রাহিম
কৃষ্ণনগর: শান্তনু ঝা
আসানসোল: গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়
বোলপুর: রামচন্দ্র ডোম
শ্রীরামপুর: তীর্থঙ্কর রায়
বাঁকুড়া: অমিয় পাত্র
মথুরাপুর: শরৎ হালদার
কলকাতা উত্তর: কণীনিকা ঘোষ
২০১৪র লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্য থেকে চারটি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস৷ বহরমপুরে অধীর চৌধুরি, মালদা উত্তর মৌসম বেনজির নূর, মালদা দক্ষিণে আবু হাসেম খান চৌধুরী এবং জঙ্গিপুরে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়রা গিয়েছিলেন সংসদে৷ আসনরফার প্রক্রিয়ায় কংগ্রেসের জেতা এই চারটি আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়ার কথা হয়েছিল৷ সেইমতো এই চারটিতে প্রার্থী দেয়নি বামফ্রন্ট৷ আর এই তালিকার মধ্যে দিয়েই তাঁরা জোটধর্ম বজায় রাখার বার্তা দিলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ৷ এদিন প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘ওই চারটি আসনে প্রার্থী দিইনি বলে পরেও দেব না, তেমনটা নয়৷ পরে ওই চারটি আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে৷’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘তেমন পরিস্থিতি হলে, প্রার্থীতালিকায় রদবদল করা হোক৷ প্রয়োজনে ৪২টি আসনের তালিকাই নতুন করে ঠিক করা হবে৷’
তবে কংগ্রেসের তরফে এ দিনও আসন সমঝোতার ইঙ্গিত মেলেনি। সমঝোতার কোনও সম্ভাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তা উড়িয়ে দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বামেদের প্রস্তাব কোনওভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে। বীরভূমে কাকে দাঁড় করানো উচিত, দার্জিলিঙে কাকে দাঁড় করানো উচিত, সব ওঁরা ঠিক করে দেবেন? তা হতে পারে না।’’ তিনি আরও বলেন,‘‘পাশ করতে গেলে তিরিশ নম্বরের দরকার হয়। সেটা বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন ওঁরা। তাই আঠাশ পেয়েই লাফাচ্ছেন। বাকি দু’নম্বরের জন্য যে আমাদের দরকার, সেটা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন। উল্টে অবাস্তব শর্ত চাপাচ্ছেন।’’ সোমেনের কথায়,‘‘সমঝোতায় যাব না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম আমরা। কোনও সময়সীমার দরকার নেই আমাদের। আমার বাড়িতে কে থাকবেন, আর কে থাকবেন না, তা ওঁরা ঠিক করে দিতে পারেন না।’’