#তিরুঅনন্তপুরম: প্লাস্টিক দূষণ। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভ্রুকুটি হিসেবে এই প্লাস্টিক দূষণকেই দেখছেন বিজ্ঞানীরা। প্লাস্টিক কীভাবে দূষণের পরিমাণ বাড়ায়, তা জানতে অবশ্য বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। চোখ তুলে তাকালেই, ধরা দেবে দূষণ সৃষ্টিকারী প্লাস্টিক। রাশি রাশি প্লাস্টিক গিয়ে জমা হচ্ছে সমুদ্রের গভীরে। সম্প্রতি করা একটি সমীক্ষা বলছে, এই হারে দূষণ অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে সমুদ্রে মাছ কিংবা অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর চেয়েও বেড়ে যাবে প্লাস্টিকের পরিমাণ।
সম্প্রতি রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে আয়োজিত, পরিবেশ সংক্রান্ত বিভাগের ৫ দিনের ব্যাপী সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার ন্যূনতম করতে হবে৷ না করলে বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না পরিবেশকে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সভাপতি সিম কিসলাম এই সম্মেলনে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, আর কোনও তথ্য-পরিসংখ্যান বা আলোচনা-সমালোচনা নয়। প্লাস্টিক বর্জন নিয়ে এবার সরাসরি পদক্ষেপ চাইছেন তাঁরা৷
প্লাস্টিক দূষণের জের ইতিমধ্যেই এসে পড়েছে বাজারে। মাছের সংখ্যা কমছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাম। সমুদ্র গর্ভে আরও বেশি অনুপাতে বাড়ছে প্লাস্টিক। মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন কেরল উপকূলের মৎস্যজীবীরা। আর সেই দৃশ্য দেখে হা-হুতাশ করতেন সবাই। কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিলেন বছর ৩০ এর কে ভি প্রিয়েশ। কাউকে পাশে না পেয়ে একাই শুরু করেন সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক সরানোর কাজ।
কেরলের কোঝিকোড় জেলার চোম্বালা হারবার এলাকায় থাকেন কে ভি প্রিয়েশ। বাড়ির অর্থনৈতিক টানাটানিতে দশম শ্রেণির পর আর পড়া হয়নি তাঁর। সমুদ্রে মাছ ধরেই জীবন চলে। কিন্তু সমুদ্রে ক্রমাগত বেড়ে চলা প্লাস্টিক দূষণ তাঁকে কষ্ট দিত। আপনার বাড়িতে যদি কেউ এসে আবর্জনা ফেলে যায়, তাহলে আপনার কেমন লাগবে? যে মাছ আমাদের পেটের ভাত যোগায়, তাদেরও ঠিক সেরকমই অবস্থা। বলেছিলেন প্রিয়েশ। যেমনি বলা তেমনই কাজ। মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে প্রতিদিন যেতেন ঠিকই, কিন্তু মাছ উঠত না। সবাইকে অবাক করে দিয়ে গভীর সমুদ্রে প্লাস্টিক সংগ্রহ করতেন প্রিয়েশ। তাঁকে দেখে কেউ কেউ পাগল বললেও, কাজ থামাননি প্রিয়েশ। প্রিয়েশ জানাচ্ছেন, জাল ফেললে সাধারণত ৫০ কেজি মাছ ওঠার কথা। কিন্তু ইদানীং সেই পরিমাণ কমছিল। এক একবার জাল তুললে তাতে উঠে আসছিল গড়ে ১৩ কিলো প্লাস্টিক। প্রিয়েশ বলছেন, মানুষের ধারণা কেবলমাত্র সমুদ্র তটেই প্লাস্টিক দূষণ সীমাবদ্ধ। কিন্তু আমরা অভিজ্ঞতা দিয়ে দেখেছি, গভীর সমুদ্রেও নিঃশব্দে একইভাবে ক্ষতি করে চলেছে প্লাস্টিক। এর হাত থেকে বাঁচতেই হবে। তাই নিজেই উদ্যোগ নিলাম।