#রায়পুর: অসমের পর এবার ঝাড়খণ্ড৷ ফের চোর সন্দেহে বেধড়ক মারধর করা হল এক মুসলমান যুবককে৷ একটানা ১৮ ঘণ্টা ধরে মারধরের পাশাপাশি তাঁকে দিয়ে জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানো হয় বলেও অভিযোগ৷ অত্যাচারের জেরে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সি ওই যুবকটির মৃত্যু হয়েছে৷
নিহত ওই যুবকের নাম তবরেজ আনসারি৷ পুণেতে দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি৷ ইদের ছুটি কাটাতে গ্রামে এসেছিলেন৷ পরিজনেরা তাঁর বিয়েরও বন্দোবস্ত করেছিল। গত ১৮ জুন দুজনের সঙ্গে জামশেদপুরে যাচ্ছিলেন তবরেজ৷ অভিযোগ, ঝাড়খণ্ডের খারসাওয়ান দিয়ে যাওয়ার সময় চোর সন্দেহে বেশ কয়েকজন তাঁকে ঘিরে ধরে৷ সুযোগ বুঝে দুই সঙ্গী পালিয়ে যায়৷ উন্মত্ত জনতার রোষের শিকার হন তবরেজ৷ স্থানীয়রা কেউ লাঠি আবার কেউ বা হাত দিয়ে তবরেজ ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করতে থাকে৷ আক্রমণকারীদের কাছে কাকুতি মিনতি করলেও কোনও লাভ হয়নি৷ একটানা প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে এভাবেই তবরেজের উপর চলে অকথ্য অত্যাচার৷ মারধরের পাশাপাশি তবরেজকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা হয়৷
ঝাড়খণ্ডের ওই যুবক মারা গিয়েছেন গত কাল। মোটরবাইক চোর সন্দেহে গত ১৮ জুন তাঁকে প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে পেটায় সরাইকেলা-খরসোঁয়া জেলার ধক্তিদি গ্রামের কিছু মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পেটাতে পেটাতে যুবককে তাঁর নাম জিজ্ঞেস করে কয়েক জন। তিনি বলেন, ‘‘সোনু।’’ পুরো নাম বলতে বলা হয়। উত্তর আসে, ‘‘তবরেজ আনসারি।’’ শোনা মাত্রই মারের মাত্রা বাড়ে। সঙ্গে ‘জয় শ্রীরাম’ বলার নির্দেশ। বেধড়ক মার খাওয়া, ল্যাম্পপোস্টে বাঁধা যুবক হাঁপাতে হাঁপাতে বলছেন, ‘‘জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীরাম।’’ ঘটনাচক্রে,রবিবার মার্কিন সরকারের রিপোর্ট খারিজ করে নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ মন্ত্রক দাবি করেছে, ‘‘ভারতে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত!’’
ইন্টারনেটে ছড়ানো বহু ভিডিয়োর একটিতে দেখা যাচ্ছে, তবরেজকে পেটাতে পেটাতে লাঠিই ভেঙে যাচ্ছে এক জনের। বুকফাটা আর্তনাদ করছেন তবরেজ। অনেক পরে পুলিশ এসে তবরেজকে উদ্ধার করে চুরির দায়ে কোর্টে তোলে। কোর্ট পাঠায় জেল হেফাজতে। গত কাল অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তবরেজকে। সেখানে তিনি মারা যান। সমাজকর্মীদের যদিও অভিযোগ, হাজতে মৃত্যুর পরেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে।
ভিডিয়োগুলির ভিত্তিতে পাপ্পু মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে এফআইআরে। পাপ্পুর সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের যোগ মেলেনি বলে পুলিশ দাবি করলেও কেউ কেউ মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০১৬ থেকে এই নিয়ে ১৩ জনকে পিটিয়ে মারা হল ঝাড়খণ্ডে। এর প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনাতেই আঙুল উঠেছে হিন্দুত্ববাদী বা গোরক্ষকদের দিকে।