২২ গজের সুপার কুল ক্যাপ্টেন, কেনের হার না মানা লড়াইকে কুর্নিশ বিশ্ববাসীর

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

নিউজ কর্নার ওয়েব ডেস্ক: দেখতে গেলে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুটি টিমই। খাতায়-কলমে কিম্বা ক্রিকেটীয় নিয়মে দেশের মাটিতে ইংল্য়ান্ড চ্য়াম্পিয়ন হলেও বাইশ গজের মন জয় কর নিয়েছে নিউজিল্য়ান্ড। কিউয়িদের এই লড়াই ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয় কেন উইলিয়ামসনদের জন্য়। কী অসাধারণ খেলাটাই না খেলেছেন তাঁরা।

কেন উইলিয়ামসন আজকের ক্রিকেটে  ভীষণরকম বেমানান একটা চরিত্র। আমাদের চারপাশের অন্য আরও অনেক কিছুর মতো যখন বদলে যাচ্ছে ক্রিকেট, পারফরম্যান্সের সঙ্গে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ যখন হয়ে যাচ্ছে খ্যাতি আর সাফল্যের অনুষঙ্গ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যখন চলছে তুমুল খোঁচাখুঁচি, টুইট-রিটুইট আর সেলফি বিনিময়- এসব কিছু থেকে দূরে থেকে উইলিয়ামসন জেগে আছেন বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপের মতো। এসব তুমুল কোলাহলের কিছুই স্পর্শ করে না তাকে, ২২ গজে যেন ঠিক একজন সন্ন্যাসী। এই যুগেও যার ফেসবুক-টুইটারে অ্যাকাউন্ট নেই, শোম্যানশিপের এই চোখ ধাঁধাঁনো সময়েও যাকে দেখলে মনে হয় পাশের বাড়ির ছেলেটির মতো- ক্রিকেট ম্যাচ শেষ করেই যার সঙ্গে আপনি রাস্তার পাশের দোকানে চা খেতে খেতে গল্প করতে পারবেন। বিকেলবেলা যার সঙ্গে আপনার ছেলেকে ক্রিকেট খেলতে দেখতে চাইবেন।

208993.4

ঘটনাটা সম্ভবত ২০০২ সালের দিকে। কেনের বয়স তখন ১২ প্রায়, স্কুলের হয়ে প্রতি ম্যাচেই রানের বন্যা বইয়ে দিত। বাবা ব্রেন্ট ছিলেন স্কুল দলের কোচ, একটা ম্যাচে ঠিক করলেন ছেলে তো অনেক রান করছেই, এবার অন্যদের সুযোগ দেওয়া যাক। কিন্তু সেই সুযোগ বাকিরা কাজে লাগাতে পারল না। কেন যখন আট নম্বরে নামল, দল বেশ বিপদেই। সেখান থেকে ১১ নম্বরের ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দলকে জিতিয়েই ছাড়লেন মাঠ। কিন্তু নিজে আগে বের হলেন না, ১১ নম্বর সতীর্থকেই আগে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন। সেই বয়সেই কেন উইলিয়ামসন বুঝতে পেরেছিলেন, ২২ গজে একা বড় হওয়ায় কোনো গৌরব নেই। যে সত্যিটা বুঝতে বুঝতে পুরো ক্যারিয়ার পার হয়ে যায় কত ক্রিকেটারের!

উইলিয়ামসনকে দেখে আপনি আসলে ধন্দেই পড়ে যেতে পারেন অনেক সময়। আপনি হয়তো বলতে পারেন, অধিনায়ককে তো আরেকটু আগ্রাসী হতে হবে এ সময়, আরেকটু বেশি সরব হতে হবে। কিন্তু উইলয়ামসনের ভাবনা অন্যরকম। যেন সন্ন্যাসীর মতো পুরো দলে শান্ত থাকার যে বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন, সেটাই এই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড। মার্টিন ক্রো যেমন চার বছর আগে বলেছিলেন, উইলিয়ামসন কোথায় যেতে চান সেটা নিশ্চিত জানেন তিনি। ক্রিকেটটা যদি অনেক দিন থেকে দেখেন, উইলিয়ামসনের বাঁধভাঙা আনন্দের কোনো ছবি কি মনে করতে পারেন? আচ্ছা, সেটাও যদি না পারেন, গুগল করে খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন না। খুব একটা লাভ হবে না, উইলিয়ামসনের উদযাপন মানে হেলমেট খুলে সেই স্মিত হাসি। মাঝে মাঝে হয়তো সেটা আরেকটু চওড়া হয়। ব্যস ওটুকুই, এর বাইরে আর বাড়তি কিছুই নেই।

century zealand reaching kane williamson celebrates after e06e8e5c 47b3 11e7 9f7a 23d54b55bc46

ফাইনালের ফল যাই হোক না কেন, অধিনায়ক হিসেবে কঠোর সত্যিটা মেনে নিয়ে সতীর্থদের সান্ত্বনা দিলেন অধিনায়কই। পাঁচ আঙুলের নিচে হতাশা লুকিয়ে ঠোঁটের কোণে টানলেন সৌজন্যের হাসি। টুর্নামেন্টের সেরার নাম ঘোষণার সময়ও কিউয়ি অধিনায়কের প্রতিক্রিয়া ছিল দেখার মতো। টুর্নামেন্ট সেরার তকমা যে তিনিই পাচ্ছেন, বিশ্বাসই করতে পারেননি। নিজের নামটা শুনেই অবাক নয়নে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমি?’ আর এখানেই জিতে গিয়েছেন তিনি। উইলিয়ামসন আসলে এমনই। সাফল্য বা ব্যর্থতাকে এখনকার ক্রিকেটে তার মতো ‘পার্ট অব গেম’ করে খুব কম ক্রিকেটারই নিতে পারেন। ব্যর্থতায় তাই নুয়ে পড়েন না হতাশায়, আবার সাফল্যেও উদ্বেল হন না; পাখির পালক থেকে জল ঝেড়ে ফেলার মতো করে সব একপাশে রেখে দেন।

ক্রিকেট যদি ‘জেন্টলমেন্স গেম’ হয়, তবে রবিবাসরীয় লর্ডসে সেই গেমের জেন্টলম্যান নিঃসন্দেহে কেন উইলিয়ামসন। ফাইনালের মেগা ম্যাচে তিনি হারেরনি। হারেনি তাঁর দলও। কিন্তু আটের গেরোয় আটকেই অধরা রয়ে গেল ইতিহাস। আট বছরে দু’বার ফাইনালে পৌঁছেও চ্যাম্পিয়ন হওয়া হল না নিউজিল্যান্ডের। হোম ফেভরিটদের হাতে ট্রফি উঠল ঠিকই। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীদের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিলেন উইলিয়ামসনই।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest