অবশেষে কাটল জট, মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সারা দিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

#কলকাতা: জট কাটতে চলেছে সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবার৷ মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সারা দিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পথে ডাক্তাররা৷

আন্দোলন নয়, আইনের উপরেই শেষমেশ আস্থা রাখতে হল এরাজ্যের মানুষের সেবায় সদ্য নিয়োজিত হওয়া মেধাবীদের৷ বহু টানাপোড়েন শেষে সপ্তাহখানেক পর সম্বিৎ ফিরে পেয়ে হবু চিকিৎসক, জুনিয়র চিকিৎসকরা গেলেন নবান্নে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতির জট কাটাতে৷ গেলেন সমস্যা মিটিয়ে কাজে ফিরতে৷ হাসপাতালগুলিতে পরিষেবা চালু করতে৷ আর নবান্নে বৈঠকের সময়ে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদেরই দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে৷ আন্দোলনের গর্জন ছেড়ে, একেবারে আবেদনের নরম সুরে কথা বললেন তাঁরা৷

মুখ্যমন্ত্রীকে এনআরএস চত্বরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে, বন্ধ দরজার আড়ালে নয়, সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে৷ এই শর্তে আন্দোলনকারীরা গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে একেবারে অনড় হয়েছিলেন৷ শর্তের কাছে কে, কতটা নমনীয় হবে, তা নিয়ে কার্যত স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন ছাড়া অন্যত্র বৈঠকে নারাজ ছিলেন, তেমনই জুনিয়র ডাক্তাররাও সংবাদমাধ্যমের সামনেই আলোচনা চাইছিলেন৷ সোমবার দুপুর তিনটেয় নবান্নে বৈঠকের কথা থাকলেও, সকাল থেকে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মতো, টেলিভিশন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় গোটা বৈঠকের লাইভ টেলিকাস্ট করতে সম্মত হয় সরকার। এ সব টানাপড়েনের শেষে বিকেল চারটে নাগাদ শুরু হয় বৈঠক। স্বাস্থ্য দপ্তরের পাঠানো বাসে এনআরএস থেকে আলোচনাকারীরা নবান্নে পৌঁছান৷ প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২ জন করে প্রতিনিধি-সহ মোট ৩১ জন ছিলেন দলে৷ মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব রাজীব সিনহা, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য৷ ছিলেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, ডিজি বীরেন্দ্র৷

আর বৈঠকের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথা বললেন জুনিয়র ডাক্তাররা, তবে সুর অনেক নরম৷ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘আমরা নিরুপায় হয়ে এখানে এসেছি৷ আমাদের আগে এত ভয়ের সঙ্গে কাজ করতে হতো না৷ একজন ডাক্তারকে এত মার খেতে হল, এই স্পর্ধা আগে দেখিনি৷ এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না৷ আপনি আমাদের অভিভাবকের মতো, আপনার উপর পূর্ণ আস্থা আছে৷ আমরা দ্রুত কাজে ফিরতে চাই৷ যদি সম্ভব হয়, নিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত করা হোক৷’ অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসকরাও দাবিদাওয়া জানালেন, তবে আন্দোলনের সুর থেকে প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে৷ কিছুটা প্রার্থনাই যেন করলেন, নিজেদের সুরক্ষা আরেকটু সুনিশ্চিত করতে৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ১২ দফা লিখিত দাবি পেশ করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। প্রতিটি দাবিই আলাদা আলাদা করে তাঁরা বিস্তারিত বলেন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে। এগুলির মধ্যে, হাসপাতালে চিকিত্সকদের নিরাপত্তায় পুলিশের সংখ্যা এবং সক্রিয়তা বাড়ানোর দাবি যেমন ছিল, তেমনই ছিল রোগীদের অভাব অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য হাসপাতালের গ্রিভ্যান্স সেল বা অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্রগুলিকে সামনে নিয়ে আসার দাবিও।

এ দিন বৈঠকের শুরু থেকেই নমনীয় দেখা যায় দু’পক্ষকে। মমতা এবং জুনিয়র ডাক্তাররা একে অপরের কথা শুনেছেন মন দিয়ে। বৈঠকে কিছু অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ উঠলেও, সুর কখনও চড়া হয়নি। আন্দোলনকারীদের সব দাবি সঙ্গেই একমত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জুনিয়র ডাক্তাররা আশা প্রকাশ করেছেন, বৈঠকের সব সিন্ধান্ত যথাযথ প্রয়োগ সরকারপক্ষ করবেন।তবে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভূমিকাও এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়৷সমাধান বের করে তাঁদের কাজে ফেরাতেই তিনি যেন বদ্ধপরিকর৷ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে সমস্তটা শুনলেন, সমাধান হিসেবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও দিলেন৷

এদিনের বৈঠক এক গুচ্ছ সিদ্ধান্তও নিয়েছে রাজ্য সরকার। দেখে নিন এক নজরে–

•  ভবিষ্যতে এই ধরনের হামলার ঘটনা যাতে না ঘটে, সে দিকে নজর রাখবে প্রশাসন। যদি ঘটেও থাকে, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে কড়া পদক্ষেপ।

• নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে পুলিশ পদক্ষেপ না করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সাসপেন্ড।

• হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নে যে যে প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, সেগুলি কী পরিস্থিতিতে রয়েছে, কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা যাচাই করা হবে।

• অনেক সরকারি হাসপাতালে গেট নেই। সর্বত্র গেট তৈরি হবে।

• জরুরি বিভাগে থাকবে একটি করে কোলাপসিবল গেট। তার ভিতরে দু’জনের বেশি রোগীর আত্মীয় ঢুকতে পারবে না।

• চিকিৎসকদের উপরে আক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে সরকার।

• রোগীদের আত্মীয়দের জন্য সরকারের যে গ্রিভ্যান্স সেল বা অভিয়োগ গ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে, সে গুলিকে আরও সক্রিয় ও দৃশ্যমান করা হবে।

• চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে কলকাতা ও জেলায় জেলায় একজন করে নোডাল অফিসার রাখবে পুলিশ।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest