#কলকাতা: বন্ধ দরজার ওপারে নয়, জনসমক্ষে, সংবাদমাধ্যমের সামনেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি। রবিবার বিকেল চারটে নাগাদ জিবি বৈঠক শেষে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। একইসঙ্গে তাঁরা এও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বৈঠকের স্থান এবং কাল মুখ্যমন্ত্রীই ঠিক করুন। তিনি যেখানে, যখন বা যেদিন বলবেন সেখানেই তাঁরা বৈঠকে বসতে রাজি। কিন্তু স্বচ্ছতা রক্ষার জন্যই সেটা হতে হবে সবার সামনে। বৈঠকে তাঁদের তরফে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রতিনিধিকে রাখতে হবে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা, নিগ্রহকারীদের গ্রেপ্তার, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন সহ তাঁদের দাবিগুলিকে মানতে হবে রাজ্য সরকারকে। যত দ্রুত মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের দাবি মেনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেবেন তত তাড়াতাড়ি তাঁরা কাজে ফিরবেন। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক খবর ছড়ানো হচ্ছে। মানুষের অসুবিধা না করে চিকিৎসক হিসেবে তাঁরা সবাই দ্রুত কাজে ফিরতে চাইছেন।
শনিবার রাতেই সাংবাদিক বৈঠক করে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে আহ্বান জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আন্দোলনকারীদের তরফে রাতেই তা পত্রপাঠ খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। কাল পর্যন্ত জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি ছিল, এনআরএস-এ এসেই মুখ্যমন্ত্রীকে বৈঠক করতে হবে। তবে রবিবার জেনারেল বডির বৈঠকে শুরু থেকেই আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশের সুরই এই অনড় অবস্থানের বিপক্ষে যেতে শুরু করে।
শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ মতো জায়গাতেই বৈঠক করতে রাজি হন আন্দোলনকারীরা। তবে শর্ত দেওয়া হয়, সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাঁচ জন করে প্রতিনিধি নিয়ে, সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে বৈঠক করতে হবে। কবে, কখন বৈঠক হবে, সেই সিদ্ধান্তের ভারও ছেড়ে দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই। নবান্ন সূত্রের খবর, বিষয়টি ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে রাজি হয়েছেন তিনি।
এ দিন বিকেলেই ছাত্রদের সিদ্ধান্তের কথা স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র মারফত পৌঁছে যায় স্বাস্থ্যসচিব রাজীব সিংহের কাছে। মুখ্যমন্ত্রীর কানেও তা পৌঁছয়। তবে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব নির্ধারিত কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই আজ বৈঠকের সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে আগামিকাল সোমবার বৈঠক হতে পারে। সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য দফতর প্রস্তাব দিয়েছে নবান্নের অডিটোরিয়ামে এই বৈঠক করতে। প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাঁচ জন করে প্রতিনিধিকে বৈঠকে রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু প্রত্যেক কলেজ থেকে দু’জনের বেশি প্রতিনিধিকে জায়গা দেওয়ার অসুবিধা বলে জানায় স্বাস্থ্য দফতর। জুনিয়র ডাক্তাররা তাতেও রাজি হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের ১৪টি মেডিক্যাল কলেজ থেকে মোট ২৮ জন বৈঠকে যোগ দিতে পারেন।
নবান্ন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া প্রস্তাব আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের বড় অংশই মেনে নিয়েছে। নবান্নের সভাঘরে বৈঠক নিয়ে কোনও আপত্তি নেই তাঁদের। তবে স্বাস্থ্য দফতর এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে সংবাদমাধ্যমকে বৈঠকে উপস্থিত রাখা সম্ভব নয়। বরং বৈঠক শেষ হলে দু’পক্ষ তাদের মুখোমুখি হবে। বৈঠকে সংবাদমাধ্যমকে না রাখার বিরোধিতা করে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি আন্দোলনকারীরা। তাই আগামিকাল নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেই অচলাবস্থা কাটিয়ে বেরনোর রফাসূত্র মিলবে বলে আশাবাদী স্বাস্থ্যকর্তারা।