#কলকাতা: দক্ষিণবঙ্গের দহনজ্বালা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। রোজই বিকেলের দিকে ছিটেফোঁটা বৃষ্টির মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেও, তা থেকে বিশেষ রেহাই মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র কালবৈশাখীর দিকেই চাতক পাখির মতো তাকিয়ে সাধারণ মানুষ। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের খবর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতো রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে কার্যত তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি চলছে। তবে সন্ধ্যায় গাঙ্গেয় বঙ্গের কোনও কোনও জেলায় ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। ঝড়বৃষ্টি হয়েছে উত্তরেও।
গরমে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (যদি সেটা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়) স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি হলেই তাপপ্রবাহ বলা হয়। সেই বিচারে পশ্চিমাঞ্চলের সব জায়গায় সোমবার তাপপ্রবাহ বয়েছে, তা হয়তো বলা যাবে না। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, দশমিক-ভগ্নাংশের হেরফেরে হয়তো খাতায়-কলমে তাপপ্রবাহ বলা যাবে না। কিন্তু গরমের অনুভূতি সমান ভয়ঙ্কর। তাই একে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি বলা হয়। অর্থাৎ অঙ্কের হিসেবে না-হলেও পরিস্থিতি প্রায় একই।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মঙ্গলবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছোঁবে ৩৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি বেশি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটাও স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি বেশি। আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৯২ শতাংশ, সর্বনিম্ন ৫৫ শতাংশ। কলকাতার পাশাপাশি হাওড়া ও হুগলিতে থাকবে অস্বস্তিকর গরম। গরমের দাপট চলবে পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমানে। জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে। শুক্রবারের আগে অবশ্য সেই কালবৈশাখীর সম্ভাবনা বিশেষ নেই বলেই মনে করছে বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা ওয়েদার আল্টিমা। যদিও মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিকেলের দিকে স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘের সৃষ্টি হয়েছে হালকা ঝড়বৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু তা থেকে স্বস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। একমাত্র শুক্রবার বা তার পরেই স্বস্তি আসতে পারে। ওয়েদার আল্টিমার কর্ণধার রবীন্দ্র গোয়েঙ্কা জানাচ্ছেন, এই সপ্তাহের শেষে উত্তরপূর্ব ভারতে অবস্থিত একটি ঘূর্ণাবর্তের ফলে দক্ষিণবঙ্গে কালবৈশাখী অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কিছুটা কমতে পারে সর্বোচ্চ পারদও।
হাওয়া অফিসের খবর, নিকোবর দ্বীপে ইতিমধ্যেই বর্ষা ঢুকে পড়েছে। অনুকূল পরিস্থিতিতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তা গোটা আন্দামানে ছড়িয়ে পড়বে। তবে আবহবিদেরা বলছেন, এতে বাঙালির আনন্দের কিছু নেই। কারণ, বর্ষার ওই শাখাটি গাঙ্গেয় বাংলায় আসে না। কেরল দিয়ে বর্ষার যে-শাখাটি মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকে, সেটাই ধীরে ধীরে এ রাজ্যে আসে। সেই বর্ষা কবে আসবে? মৌসম ভবনের নির্ঘণ্ট অনুযায়ী কেরলে বর্ষা ঢোকার কথা ১ জুন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ৮ জুন গাঙ্গেয় বঙ্গে বর্ষা উপস্থিত হয়। কিন্তু এ বার বর্ষা এক্সপ্রেস লেট করবে বলেই পূর্বাভাস দিচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীরা। মৌসম ভবন সূত্রের খবর, এ বার কেরলে বর্ষা ঢুকতে পারে ৬ জুন নাগাদ। পরিস্থিতি অনুযায়ী এগোবে। তাই বাংলায় কবে বর্ষা ঢুকবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।