নিউজ কর্নার ওয়েব ডেস্ক: অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকের ব্যবহার এবং যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা এখন মানুষের স্বভাবে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনাকে খাদ্য ভেবে খেয়ে মৃত্যু হচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণীদের। প্রাণী জগতের এই নারকীয় জীবনযাপনের জন্য দায়ী একমাত্র মানুষ। মেরুপ্রদেশে বরফ গলন এবং খাদ্যের অভাবের কারণে বহু প্রজাতি বিলুপ্তির পথে চালিত হচ্ছে বা শহরে ঢুকতে বাধ্য হচ্ছে। প্লাস্টিকের ব্যাগ খেয়ে মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণীরাও। ভয়ঙ্কর সমস্যা তৈরি করছে সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ। সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের একটি সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, প্লাস্টিক থেকেও সিগারেটের ফেলে দেওয়া অংশ বন্য ও সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য বেশি ক্ষতিকর।
কিছুদিন আগেই খাদ্যের খোঁজে রাশিয়ার একটি শহরে মেরু ভল্লুকের ঢুকে পড়ার খবর সামনে এসেছিল। এবার আরও ভয়ঙ্কর চিত্র সামনে এল। কারেন মেসন, ন্যাশনাল অডোনন সোসাইটির একজন স্বেচ্ছাসেবক এবং একজন ফটোগ্রাফার। তাঁর তোলা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি মা পাখি তার বাচ্চার মুখে খাদ্য ভেবে তুলে দিচ্ছে সিগারেটের ফেলে দেওয়া অংশ। কিছুদিন আগে কারেন সেন্ট পিটের সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সেই সময় তিনি দেখতে পান, একটি কালো স্কিমার তার শিশুকে কিছু একটা খাওয়াচ্ছে। তখনই তিনি কয়েকটি ছবি তোলেন। সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘আমি জানতাম ওটা মাছ না, কিন্তু আমি বাড়ি না ফিরে আসা পর্যন্ত জানতে পারিনি বস্তুটা কী।’ পরে বোঝা যায়, ওটি সিগারেটের ফেলে দেওয়া অংশ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি ছড়িয়ে দেন সেই ছবি। ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানতে চেয়েছেন, আর কতদিন আমরা এমন চালিয়ে যাব! বিভিন্ন ওয়াইল্ডলাইফের সোশ্যালগ্রুপে এই ছবিগুলো ছড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, সিগারেটের বাট বা শেষের যে পুড়ে যাওয়া অবশিষ্ট ফিল্টারের অংশটা, সেটা এভাবে সমুদ্রের তীরগুলোয় ছড়িয়ে থাকলে খুব তাড়াতাড়ি সমুদ্রের প্রাণী এবং পাখিগুলো ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। মেসন আরও বলছেন, শুধু পাখির বাচ্চা কেন, অন্তত নিজের বাচ্চাটার জন্যও দয়া করে মানুষ যদি সি বিচে এই সিগারেটের অংশগুলো ফেলা বন্ধ করেন, তাহলে মঙ্গল। কারণ শিশুরা অনেক সময়েই হাঁটতে হাঁটতে সামনে যা পায়, তাই তুলে মুখে দিয়ে দেয়। সেটাও তো শিশুটির জন্য ক্ষতিকর। তাই অন্তত সেটা মাথায় রেখে এগুলো বন্ধ করার আর্জি জানাচ্ছেন মাসোন। আর সেখানকার স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি তাঁর একটাই অনুরোধ, অন্তত তাঁরা যেন সি-বিচগুলো পরিষ্কার রাখেন, নইলে শত শত টন আবর্জনা সেখানে জমবে একটা সময়ে। যা সর্বনাশা।
সান দিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট স্কুল অফ পাবলিক হেল্থের একটি প্রচারে জানানো হয়েছে যে ৫.৫ ট্রিলিয়ন ফিল্টার সিগারেটের একটা বড় শতাংশ প্রতিবছরই পরিবেশের কোথাও না কোথাও নিক্ষিপ্ত হয়। একটি রিপোর্টে পাওয়া গেছে যে সিগারেটের এই অংশটা স্ট্রয়ের থেকেও কোথাও কোথাও বেশি বিপজ্জনক, অন্তত মহাসাগরগুলোর ক্ষেত্রে।