আদবানীর রাজনৈতিক বানপ্রস্থে সিলমোহর, ‘মার্গদর্শক’ বিদায়ে কটাক্ষ কংগ্রেসের

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

নয়াদিল্লি: গত লোকসভা নির্বাচনের পরই ইঙ্গিতটা মিলেছিল। আসন্ন লোকসভা ২০১৯-এর বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথা ভারতের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানীর রাজনৈতিক বানপ্রস্থের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল। তাঁর গত ছয় বারের জেতা গান্ধীনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হচ্ছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেয় নিজেরদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। বাংলায় প্রথম দফায় ২৮ টি আসন মিলিয়ে দেশে মোট ১৮২ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তারা। এ রাজ্যে প্রথম শ্রেনীতে থাকা প্রায় সবকটি আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে সবথেকে শেষে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল বিজেপি। বাকি দলগুলির প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিজেপির হুংকার ছিল, ” ওস্তাদের মার শেষ রাতে।” কিন্তু প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর দেখা গেল গর্জনই সার, আসলে সব ভোঁভা। প্রার্থী তালিকায় তেমন কোন চমকই নেই বিজেপির। তবে চমক অন্য জায়গায়, বিজেপির প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন খোদ লাল কৃষ্ণ আদবানী!

বিষয়টি নিয়ে বিজেপিকে ইতিমধ্যেই এক হাত নিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর কংগ্রেসের বক্তব্য, মোদী যদি আদবানীর মত বর্ষীয়ানদের সম্মান দিতে না পারেন তবে দেশকে সম্মান করবেন কিভাবে! দলের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘প্রথমে জোর করে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে মার্গদর্শক মণ্ডলীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ বার তাঁর আসনও কেড়ে নেওয়া হল। মোদী যখন দলের প্রবীণ নেতাদেরই সম্মান করতে পারেন না, দেশের জনতাকে কী করে করবেন? বিজেপি ভাগাও, দেশ বাঁচাও।’’

১৯৯১ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথম গুজরাতের গান্ধীনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি। তারপর ফের এই কেন্দ্রে ফিরে আসেন ১৯৯৮ সালে। ৫ লক্ষ ৪১ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছিলেন। ব্যবধান ছিল ২ লক্ষ সাড়ে ১০ হাজারের মতো। তারপর থেকে আরও ৪ বার এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি।গত লোকসভাতে আদবানী গান্ধীনগরে ভোট পেয়েছিলেন ৭ লক্ষ ৭৩ হাজারের বেশি। জয়ের ব্যবধান ছিল ৪ লক্ষ ৮৩ হাজারের বেশি। বিজেপির উত্থানের নেপথ্যে থাকা আডবাণীকে এ বারে প্রার্থী না করার পিছনে দলের যুক্তি, ভোটে জয়কেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে, আডবাণীর বদলে অমিত শাহ প্রার্থী হলেই জয়ের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু বিজেপিরই একটি অংশের মতে, গাঁধীনগর আসন ১৯৮৯ সাল থেকে বিজেপির গড়। সেখানে আডবাণী জিততে পারতেন না, এ ধারণা ভুল। অমিত শাহ যে বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে এসেছেন, সেটিও আডবাণীরই সংসদীয় কেন্দ্রের অধীনে।
বস্তুত নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই বিজেপি-তে প্রথম প্রজন্মের নেতাদের গুরুত্ব কমতে শুরু করেছিল। মার্গ দর্শক মণ্ডলী নাম দিয়ে আডবাণী, জোশী, যশবন্ত সিনহাদের পোশাকি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তাঁদের কার্যত কোনও গুরুত্ব ছিল না। এমনকি অনেকের মতে, গুজরাত দাঙ্গার পর যে নরেন্দ্র মোদীর জন্য বার বার ঢাল হয়েছিলেন আডবাণী, পরবর্তী কালে তাঁর সঙ্গেই আস্থার সম্পর্কে ঘাটতি তৈরি হয়। তা মাঝে মধ্যে আডবাণীর কিছু মন্তব্যেও প্রকট হয়ে পড়ে। অন্যদিকে যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরীর মতো নেতারা তো প্রকাশ্যেই বিদ্রোহে নেমে পড়েন। এমনকি এও বোঝাতে চান, বিজেপি পার্টিটা স্রেফ দু’জনের দখলে চলে গিয়েছে,-মোদী ও অমিত শাহ।
যদিও মোদী অনুগামীদের মতে, কালের নিয়মেই সংসদীয় রাজনীতি থেকে বিদায় হল আডবাণীর। সঙ্ঘ পরিবারে নেতৃত্বের বদল এর থেকেও দ্রুত ও কম বয়সে হয়। তুলনায় ৯১ বছর বয়স পর্যন্ত সংসদীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন আডবাণী। এমনকি বাজপেয়ীও তাঁর অনেক আগেই অবসর নিয়েছেন। একই ভাবে জোশীরও ৮৫ বছর বয়স হয়েছে। কলরাজ মিশ্র-র বয়সও প্রায় আশি ছুঁই ছুঁই। এ বার তাঁরা সরে না দাঁড়ালে পরের প্রজন্মের নেতারা সুযোগ পাবেন কী ভাবে?  প্রবীণ নেতা কলরাজ মিশ্র ঘোষণা করেছেন, তিনি ভোটে লড়বেন না। মুরলীমনোহর জোশী, ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি, ভুবনচন্দ্র খান্ডুরির মতো প্রবীণ নেতাদের নামও প্রথম তালিকায় ঠাঁই পায়নি।

 

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest