নিউজ কর্নার ওয়েব ডেস্ক: অসহনীয় গরমে প্রশান্তি পেতে সামর্থবানরা তো বটেই মধ্যবিত্তরাও ছুটছেন এয়ার কন্ডিশনার বা এসি কিনতে। এসি কিনতে গিয়ে অনেকেই বিড়ম্বনার শিকার হন। কোন ধরনের, কত সাইজের এসি কিনবেন। শুধু ব্র্যান্ডমুগ্ধতা থেকে এসি না কিনে কিছু বিষয় বিবেচনা করে এসি কিনলে কখনো ঠকবেন না।
কত স্কয়ার ফুট , কত টন ক্ষমতাসম্পন্ন এসি কি পরিমান বিদ্যুৎ খরচ হয় ?? জানেন কি?? প্রচন্ড গরম এসে গেছে এয়ারকন্ডিশন কেনার আগে জেনে নিন কোন কোন জিনিসগুলি মাথায় রাখতে হবে।
শুধুমাত্র ব্র্যান্ডমুগ্ধতা থেকে ঝপ করে এসি কিনে ফেলবেন না। ফ্রিজ-টিভি-ওয়াশিং মেশিনের মতো এসি কেনাও দরকার বুঝেশুনে। তবেই বাঁচবে বিদ্যুতের বিল এবং ঠিকঠাক ঠান্ডা হবে ঘর। দেখে নিন এয়ারকন্ডিশন কেনার ১০টি টিপ্স—
১) প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে বিদ্যুৎ কতটা পুড়বে। এর উপর নির্ভর করে বাজারের সমস্ত এসিকে ‘স্টার’ রেটিং দেওয়া হয়। এই রেটিং দেয় ব্যুরো অফ এনার্জি এফিসিয়েন্সি। ১ থেকে ৫ পর্যন্ত হয় রেটিং। ফাইভ স্টার এসি মানেই বিদ্যুৎ পুড়বে সবচেয়ে কম। একই টনেজের এবং একই ব্র্যান্ডের ফাইভ স্টার এসির দাম অন্যান্য মডেলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। কেনার সময়ে দাম বেশি পড়লেও ভবিষ্যতে প্রতি মাসের বিদ্যুতের কথা ভেবে যত বেশি স্টার-সম্পন্ন এসি কিনবেন, ততই আপনার পকেটের পক্ষে ভাল।
২) যত বড় এসি, তত ঠান্ডা হবে ঘর, হিসেবটা এত সোজা নয়। যদি মনে করে থাকেন যে একটি ছোট ঘরকে চিল্ড রাখতে ইয়া বড় এসি কিনতে হবে তবে ভুল ভাবছেন। ঘরের মাপ অনুযায়ী কত টনের এসি প্রয়োজন তার একটি তালিকা রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বড় এসি কিনলে ঘর ঠিকঠাক ঠান্ডা হবে না। নীচের তালিকাটি মনে রাখবেন—
ঘরের মাপ ( স্কয়ার ফুট ) | কত টনের এসি
১২০ পর্যন্ত | ০.৭৫ টন
১২১ থেকে ১৫০ | ১ টন
১৫১ থেকে ২৫০ | ১.৫ টন
২৫১ থেকে ৪০০ | ২ টন ও তার বেশি
ঘর এর থেকেও বড় হলে কোনও বড় ব্র্যান্ডের শোরুমে গিয়ে কথা বলুন। ওঁরাই বলে দেবেন কত টনের ক’টি এসি লাগবে।
৩) এখন প্রায় সব বাড়িতেই স্প্লিট এসি লাগানোর চল। এই এসিগুলি উইনডো এসির চেয়ে দেখতে অনেকটাই স্লিক। তাছাড়া একটি জানলা জুড়ে বসেও থাকে না। কিন্তু যাঁরা ঘন ঘন বাড়ি পাল্টান তাঁদের পক্ষে উইনডো এসিই ভাল কারণ স্প্লিট এসির ইনস্টলেশন উইনডো এসির থেকে সহজ হলেও এর রি-ইনস্টলেশন চার্জ অপেক্ষাকৃত বেশি। তা বাদে এই দুই ধরনের এসি-তে কমবেশি একই পরিমাণ বিদ্যুৎ পোড়ে। তবে ঘর বড় হলে উইনডো এসি না কেনাই ভাল।
৪) এসি কেনার সময় ভালভাবে খেয়াল করবেন এসিতে কোনও আওয়াজ হচ্ছে কি না। স্প্লিট এসিগুলিতে আওয়াজ অনেক কম হয়। শান্তিতে ঘুমোনো বা কাজ করার পক্ষে ভাল।
৫) বাজেট খুব একটা সমস্যা না হলে রিভার্স সাইক্ল এসি কিনুন যাতে গরমকালে ঠান্ডা হাওয়া আর শীতকালে গরম হাওয়ার সুবিধা পাবেন। এগুলির দাম সাধারণ এসিগুলির তুলনায় অনেকটাই বেশি।
৬) বাড়ির সব ঘরে এসি লাগানো বেশ খরচসাপেক্ষ। সেক্ষেত্রে মাস্টার বেডরুমের জন্য একটি উইনডো বা স্প্লিট এসি কিনে সঙ্গে আর একটি পোর্টেবল এসি কিনে নিন যা এক ঘর থেকে আর এক ঘরে সহজেই তুলে নিয়ে যাওয়া যাবে। পোর্টেবল এসিগুলির দাম স্বাভাবিকভাবেই তুলনায় কম।
৭) ঘরের ভিতরের হাওয়া কেমন তার উপর কিন্তু এসির আয়ু নির্ভর করে। দূষিত বাতাস ঘরে জমে থাকলে ঘর ঠিকঠাক ঠান্ডা হয় না। ভাল ব্র্যান্ডের এসিগুলিতে ভাল এয়ার ফিল্টার থাকে। এসি কেনার সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন।
৮) যে এসি কিনছেন তাতে যেন একটি অ্যাডজাস্টেব্ল থার্মোস্ট্যাট, দু’টি কুলিং স্পিড এবং অন্ততপক্ষে দু’টি ফ্যান স্পিড থাকে যাতে ঘরের তাপমাত্রা অনুযায়ী ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করা যায় ঠান্ডা।
৯) আফটার সেল্স সার্ভিস যে কোনও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এসি কেনার আগে কোম্পানির সার্ভিস কতটা ভাল সেই বিষয়ে ভাল করে খোঁজ খবর করে নেবেন।
১০) আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে বাড়ি হলে যে সমস্ত এসির কয়েল অ্যালুমিনিয়ামে তৈরি সেই সমস্ত এসি না কেনাই ভাল। অ্যালুমিনিয়াম কয়েলে খুব তাড়াতাড়ি মরচে পড়ে যায়, গ্যাস লিক করতে থাকে এবং ঘর ঠান্ডা হয় না। তাই সব সময় কপার কয়েলের এসি কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। সব জলবায়ুতেই ভাল কাজ দেবে।
১১) রুম অনুসারে এসির আকার নির্বাচন করুন: এসি কিনতে গিয়ে প্রথমেই দোকানিরা জিজ্ঞেস করে, কত টনের এসি নিবেন? আসলে এই টন এসির সাইজ বা ওজনকে বোঝায় না। ১ টন এসি মানে হলো ১২০০০ বিটিইউ/আওয়ার, ১.৫ টন মানে হলো ১৮০০০ বিটিইউ/আওয়ার, এভাবে বাড়তে থাকে। এক টনের একটি এসি প্রতি ঘণ্টায় রুম থেকে ১২০০০ বিটিইউ তাপ শোষণ করতে পারে। তার মানে যত বেশি টন মানের এসি; তত বেশি কুলিং ক্ষমতা। কত টনের এসি কিনবেন, তা নির্ণয়ের সময় রুমের আকার জানার পাশাপাশি রুমটি কততম ফ্লোরে অবস্থিত, সূর্যের তাপ দেয়ালের কোন পাশে লাগে, রুমে কতজন মানুষ থাকবে, রুমে কোন হিটিং জিনিসপত্র যেমন- ওভেন বা আয়রন ব্যবহার করবেন কিনা, জানালা, দরজা, পর্দা, সিলিং, ফ্লোর- এসবের হিট কন্ডাকটিভিটি কেমন এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে।