কল্পবিজ্ঞান কিংবদন্তি সাহিত্যিক অদ্রীশ বর্ধন প্রয়াত

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

#কলকাতা: মারা গেলেন সাহিত্যিক অদ্রীশ বর্ধন।  সোমবার রাত দেড়টা নাগাদ নীলরতন সরকার হাসপাতালে প্রয়াত হলেন ‘প্রফেসর নাটবল্টুচক্র’-এর স্রষ্টা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮। বার্ধক্যজনিত কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভুগছিলেন অদ্রীশ। তাঁর সৃষ্টি ডিকেটটিভ ইন্দ্রনাথ রুদ্র, লেডি ডিটেকটিভ নারায়ণী, ফাদার ঘনশ্যাম, প্রফেসর নাটবন্টু চক্র ইত্যাদি চরিতে শুধু ছোটোদের নয়, বড়োদেরও সমান ভাবে আকর্ষণ করে। সায়েন্স ফিকশনের বাংলা প্রতিশব্দ তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন – কল্পবিজ্ঞান।

কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ অদ্রীশ বর্ধনের জন্ম কলকাতায়, এক শিক্ষক পরিবারে, ১৯৩২-এর ১ ডিসেম্বরে। বাবা অনিল বর্ধন ছিলেন স্কুলশিক্ষক, ঠাকুরদা চণ্ডীচরণ বর্ধন বউবাজারের সার্পেন্টাইন লেনে ‘হিন্দু বয়েজ স্কুল’ নামে একটি বিদ্যালয় চালাতেন। সেই স্কুলেই বিদ্যারম্ভ অদ্রীশের। পরবর্তী কালে পড়াশোনা বিজ্ঞান নিয়ে।

ছোটোবেলা থেকেই অজানার প্রতি দুর্নিবার টানা। শিব্রাম চক্রবর্তীর ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ পড়ে কুড়ি বছর বয়সেই বোম্বে (মুম্বই) পলায়ন। হরেক চাকরি করে শেষ পর্যন্ত ‘ক্যালকাটা কেমিক্যাল’-এ। পোস্টিং ব্যাঙ্গালোরে (বেঙ্গালুরু)। কর্মসূত্রে দক্ষিণ ভারতের নানা জায়গা দেখা। অবসর সময়ে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এক জায়গায় আটকে থাকার মানসিকতা ছিল না অদ্রীশের। চাকরি পালটাতে পালটাতে নামী কোম্পানির পারচেজ ম্যানেজার ও ডিরেক্টরের বিশেষ সচিব। শেষ পর্যন্ত সেই চাকরিতেও ইস্তফা দিয়ে কলকাতায় ফিরে আসা। আর চাকরি নয়, এ বার দেওয়াল পত্রিকা দিয়ে সাহিত্য সাধনা শুরু। লিখলেন ভূতের গল্প ‘পোড়োবাড়ির খাঁড়া’। এর আগেই অবশ্য ‘উল্টোরথ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল গোয়েন্দা গল্প, ‘আমার বান্ধবী সুনন্দা’, বোম্বে থেকে পাঠানো।

ইন্দ্রনাথ রুদ্র, ফাদার ঘনশ্যাম, প্রফেসর নাটবল্টু চক্র, রাজা কঙ্ক, জিরো গজানন, নারায়ণী, এবং চাণক্য চাকলা তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলির অন্যতম। কল্পবিজ্ঞান লেখক হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছলেও, অদ্রীশ বর্ধন প্রথম লেখা শুরু করেন গোয়েন্দা কাহিনী। সৃষ্টি করেন যথাক্রমে ইন্দ্রনাথ রুদ্র এবং নারায়ণী নামক পুরুষ ও মহিলা গোয়েন্দা। এরপর ক্রমশ বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে তাঁর ক্ষেত্র। বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান, অতীন্দ্ৰিয় জগৎ, বা অতিপ্রাকৃত শুধু নয়, অনুবাদ সাহিত্যেও অমূল্য অবদান রয়েছে তাঁর। বিশেষভাবে উল্লেখ্য অদ্রীশ বর্ধন অনূদিত শার্লক হোমস, জুল ভার্ন, এবং এডগার অ্যালেন পো রচনাসমগ্র।

১৯৬৩ অদ্রীশ বর্ধন প্রকাশ করেন ভারতের প্রথম কল্পবিজ্ঞান-পত্রিকা ‘আশ্চর্য’। এর পরে সম্পাদনা করেন ‘ফ্যানটাসটিক’ পত্রিকার। দুটিই বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করলেও পরে বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু একসময় বাংলা ভাষার অসংখ্য নামীদামি সাহিত্যিক এই দুই পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। সারা জীবনে দেড়শোরও বেশি বই লিখেছেন ও অনুবাদ করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চার খণ্ডে ‘জুলে ভের্ন সমগ্র’, ১৩ খণ্ডে ‘গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্র সমগ্র’, ৩ খণ্ডে ‘আমার মা সব জানে’, ২ খণ্ডে ‘প্রফেসর নাটবল্টুচক্র সংগ্রহ’, ২ খণ্ডে ‘শার্লক হোমস সমগ্র’, ৩ খণ্ডে এডগার অ্যালান পোর রচনা সংগ্রহ’ ইত্যাদি। সারা জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার আর সম্মান। বয়সের ভারে আজ হারিয়েছিলেন কর্মক্ষমতা, হারিয়েছিলেন স্মৃতিশক্তিও। আজ তিনি চিরতরে চলে গেলেন। তবে যত দিন বাংলা কল্পবিজ্ঞান থাকবে, তত দিন অদ্রীশ বর্ধনের নাম বিনম্র শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হবে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest