#নয়াদিল্লি: দেশভাগ এবং কাশ্মীর সমস্যার জন্য জওহরলাল নেহরু দায়ী করেকেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্যের জেরে শুক্রবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লোকসভা। এর তীব্র বিরোধিতা করেন কংগ্রেস সাংসদরা। শুরু হয় হই হট্টগোল। তার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেন, ‘‘কংগ্রেসের জন্যই কাশ্মীরের এক তৃতীয়াংশ মানুষ আমাদের সঙ্গে নেই।’’
জম্মু কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদবৃদ্ধি সংক্রান্ত বিল শুক্রবার লোকসভায় পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই বিল নিয়ে বিতর্ক হয় লোকসভায়। অমিত শাহ এদিন বলেন, ‘‘দেশভাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মণীশ তিওয়ারি। আমি ওঁকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। দেশভাগের জন্য কে দায়ী?’’ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে নিশানা করে অমিত বলেন, পাক সেনাকে যখন কোণঠাসা করে ফেলেছে ভারত, তখনই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন জওহরলাল নেহরু। দেশভাগের জন্য কার্যত নেহরুকেই কাঠগড়ায় তোলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এতে কংগ্রেস সাংসদরা আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠেন। কয়েক জন অনেকেই ওয়েলে নেমে এসেও হইচই শুরু করেন। জওহরলাল নেহরুর নাম নেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেন কংগ্রেসের সাংসদরা। সেই হট্টগোলের মধ্যেই অমিত শাহ আবার খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘ঠিক আছে। নাম নিলে যদি আপনাদের এত ব্যথা লাগে, তা হলে তাঁকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করছি।’’
বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে ৩৫৬ ধারাকে ব্যবহার করছে। কংগ্রেসের তরফে সাংসদ মণীশ তিওয়ারির বক্তব্য, ‘‘মেহবুবা মুফতির পিপল্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)এবং বিজেপির জোট কাশ্মীরে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু এই জোট ছিল ভিন্ন ভাবধারা ও আদর্শের দু’টি দলের মধ্যে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তা টেকেনি। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি এমন যে, প্রতি ছ’মাস অন্তর কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ বাড়াতে হচ্ছে। এর শিকড় লুকিয়ে আছে ২০১৫ সালের ওই অসম জোটের মধ্যেই।’’
কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে অমিত শাহের অভিযোগ, ৭০ বছরে ৯৩ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছে সেখানে। তারা এই সরকারে বিরুদ্ধে শ্বাসরোধ করার অভিযোগ তোলে কীভাবে? তাঁর কথায়, গত পাঁচ বছরে জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ‘জিরো-টলারেন্স’ ভূমিকা নিয়েছে মোদী সরকার। উপত্যাকায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভারত বিরোধী এজেন্ডা ঢুকিয়ে দেওয়ার যে চেষ্টা চলেছে, তা কড়া হাতে দমন করেছে সরকার। অমিত শাহ এ দিন বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা পেতে কখনওই ৩৫৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করেনি এ সরকার।
জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচন কবে হবে তা জানতে সরব হন বিরোধীরা। এই প্রশ্নে অমিত শাহ জানান, নির্বাচন করাতে বিজেপি সরকার সবসময় প্রস্তুত। কিন্তু নির্বাচন করানো তাদের কাজ নয়। নির্বাচন কমিশন যবে সিদ্ধান্ত নেবে, সেই দিনই নির্বাচন হবে জম্মু-কাশ্মীরে। কাশ্মীরি সংস্কৃতি প্রসঙ্গে অমিত শাহ সাফ জানান, ইনসানিয়ত, কাশ্মীরিয়ত এখানে অটুট রয়েছে। কাশ্মীরের সংস্কৃতি রক্ষায় দায়বদ্ধ এ সরকার। তিনি বলেন, “আমরা টুকরো টুকরো দল নই, জম্মু-কাশ্মীরে মানুষের বিরুদ্ধে নই। যারা সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়, ভারত বিরোধী ভাবনা পোষণ করে, সরকার তাদের বিরুদ্ধে।”