কলকাতা: আজকের দিনের রাজনীতি মানেই ভােট। সেখানে বাম-ডান বলে কোনও কথা আর চলেনা। বাংলায় কংগ্রেস চাইছে পায়ের তালার মাটি আর একটু মজবুত করতে। অন্যদিকে বাম দলগুলিও চাইছে বিগ্রেড ময়দানে ঘুরে দাঁড়ানাের যে স্বপ্ন তারা দেখেছে, তা ইভিএমে তুলে আনতে।
প্রতিটি নির্বাচনেই ভােট কমেছে সিপিএমের। এদিকে কংগ্রেসও যে খুব ভালাে জায়গায় রয়েছে তা নয়। ফলে জোট গড়ে কিংবা আসন রফা করে তৃণমূলকে ধাক্কা দিতে চাইছে দুই দলই। কিন্তু জোট নিয়ে কথা এগােয়নি বেশিদূর। যে জট ঝুলে রয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট আর বিধানভবন কেউই তা কাটাতে পারেনি। ফলে কীভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন রফা করা যায় তা ঠিক করতে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দরবার করেছিল সিপিএম। ঠিক তেমনই রায়গঞ্জ আর মুর্শিদাবাদ আসনের জট নিয়ে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সােমেন মিত্র। শুক্রবার পর্যন্ত সেই জট কাটেনি।
‘বৌদিমণি’ রায়গঞ্জ আসন ছাড়বেন বলে মনে হয় না। লােকসভা নির্বাচনে এই আসন থেকেই জয়ী হয়েছিলেন সিপিএম সাংসদ তথা দলের পলিটব্যুরাের সদস্য মহম্মদ সেলিম। কেবল দীপা নয়, কানাঘুষােয় শােনা যাচ্ছে, কংগ্রেসও নাকি চাইছে না এই আসন সিপিএমকে ছাড়তে। প্রয়াত নেতা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির আবেগে ভর করে জেতার স্বপ্ন দেখছে তারা। এ দিন রায়গঞ্জে সেলিম বলেন, ‘কথা হয়েছিল। যার যেটা জেতা আসন, সে সেখানে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়বে না। এটাই ভদ্রলােকের চুক্তি। ২০১৬ সালেও একইভাবে আসন সমঝােতা হয়েছিল। এখন কংগ্রেস যেটা করছে- সেটাকে এড়েপনা বলে।’ প্রসঙ্গত, ২০১৪-র ভােটে বাংলায় কংগ্রেস চারটি এবং বামেরা দুটি আসন জিতেছিল। রায়গঞ্জে সেলিম জিতেছিলেন দেড় হাজার ভােটের কম ব্যবধানে। কংগ্রেসের বক্তব্য, ওই আসনে এবার সিপিএম কিছুতেই জিততে পারবে না। তবে সিপিএম সেটা মনে করছে না। তারা মনে করছে গত নির্বাচনে যে দুটি আসন সিপিএম জিতেছিল এবারও সেই আসন থেকে তারা জেতার ক্ষমতা রাখে। এই দুটি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে রাজি নয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। এ কথা স্পষ্ট করেছেন সীতারাম ইয়েচুরিও। সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে যদি জেতা দুটি আসন ছেড়ে দেওয়াই হয় কংগ্রেসকে, তাহলে কর্মীদের মনােবল ধাক্কা খাবে। | সেলিম বলেন, কে, কত ভােটে জিতল সেটা মাপকাঠি নয়। কার জেতা আসন সেটাই মাপকাঠি।বীরভূমে সূর্যকান্ত মিশ্র সাফ জানান, জেতা আসন না ছাড়লো আসন সমঝােতা হবে না।
উত্তর কলকাতা থেকে প্রার্থীপদে শােনা যাচ্ছিল ফুয়াদ হালিম ও রূপা বাগচির নাম। তবে কলকাতার একটি আসন কংগ্রেসকে ছাড়া হবে এমন স্থির হয়েছিল, তা হলে উত্তর কলকাতাও ছাড়া হতে পারে। দমদম থেকে উঠে আসছিল দুটি নাম। একটি নাম নেপালদেব ভট্টাচার্যের। আর অপর নামটি তন্ময় ভট্টাচার্যের। এখানে উঠে আসছে আরও একটি নাম, সেই নাম হল— রেখা গােস্বামী। ব্যারাকপুর আসনে রয়েছে গার্গী চট্টোপাধ্যায়ের নাম। তবে এই আসনটিও ছাড়া হতে পারে কংগ্রেসকে।।
ঝাড়গ্রাম আসনে সিপিএমের টিকিটের মূল দাবিদার হয়ে উঠেছেন দেবলীনা হেমব্রম। বাঁকুড়া থেকে প্রার্থী হিসেবে উঠে আসছিল অমিয় পাত্রের নাম। তিনি প্রার্থী হতে চান না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই এই কেন্দ্রে পার্থ মজুমদার বা সুকুমার পাইনের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা। বর্ধমান-দুর্গাপুরে দু’জনের নাম উঠছে বেশি করে। অমল হালদার বা আভাস রায়চৌধুরী- দু’জনের মধ্যে কাউকেই প্রার্থী করা হতে পারে। তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা।
বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী হতে পারেন ঈশ্বর বসু। বােলপুরে রামচন্দ্র ডােমের- নামই শােনা যাচ্ছে ফের। বনগাঁয় দেবেশ দাস কিংবা অলােকেশ দাস প্রার্থী হতে পারেন। বীরভূম, আসানসােল আসনটিও কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে রাখা হতে পারে। তবে একইসঙ্গে প্রার্থীও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে আসানসােলে। কংগ্রেস প্রার্থীর বিকল্প প্রার্থী হতে পারেন সিপিএমের গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, শরিকদের সঙ্গে আসন রফা পাকা। তিনটি করে আসন তিন বড় শরিক সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক ও আরএসপিকে ছাড়া হচ্ছে। সিপিআই ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা বসিরহাট, ঘাটাল ও মেদিনীপুরে প্রার্থী দেবে। কংগ্রেস যদি রফায় না আসে, তবে শুধু চারটি আসনেই নয়, বাকি আসনগুলিতেও চতুর্মুখী লড়াইয়ের দিকে এগিয়ে যাবে। এই অবস্থায় কংগ্রেস যেমন ৪২ আসনে তাঁদের প্রার্থী প্রস্তুত বলে জানিয়ে রেখেছে, সিপিএমও বাকি আসনগুলিতে প্রার্থী প্রস্তুত রাখছে। বেশকিছু আসনে ছােট শরিকদেরও ঠেলে দিতে পারে সিপিএম।।