ওয়েব ডেস্ক: ইদানিং অ্যালোভেরা আট থেকে আশি সবার কাছেই ভীষণ পরিচিত। প্রায় সবাই জানেন, নানা ধরনের সমস্যার এক এবং অব্যর্থ উপাদান এই অ্যালোভেরা। তবে অ্যালোভেরার ব্যবহার কিন্তু সুপ্রাচীন। প্রাচীন কালে মুনি-ঋষিরা একে বলতেন ঘৃতকুমারী। এবং আয়ুর্বেদ চিকিতসায় এর বহুল ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। আর শুধুই কি শারীরিক সমস্যায় ব্যবহার করা হয় অ্যালোভেরা জেল? একেবারেই নয়। ত্বক আর চুলের সৌন্দর্য বাড়াতেও এর জুড়ি নেই। ইদানিং, অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর উপকারিতা এতটাই লোকমুখে প্রচারিত যে প্রায় প্রত্যেকের রান্নাঘরে বা টবে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে গাছটিকে। আর খুব সহজেই জন্মায় বলে প্রায় সবাই আপন করে নিচ্ছেন একে।কিন্তু যাঁরা গাছ লাগাতে পারছেন না! তাঁরা কী করছেন? চুল আর ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে তাঁরা অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট কিনছেন অনলাইনে বা দোকান থেকে। তাঁদের জানাই, যদি রান্নায় বা পানীয়ে সরাসরি অ্যালোভেরার রস ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আরও বেশি উপকার পাবেন আপনি। অ্যালোভেরায় সামান্য গন্ধ থাকলেও এর আলাদা কোনও স্বাদ নেই। তাই উপকার পেতে ডায়েটে রাখতেই পারেন একে। কীভাবে? রইল তারই টিপস—
১. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর: অ্যালোভেরা মানেই প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যার অন্যতম উপাদান পলিফেনল রয়েছে এর মধ্যে। তাই সরাসরি এর রস ব্যবহার করলে বা ডায়েটে থাকলে আপনার চুল হবে রেশম কোমল। ত্বকে আসবে বাড়তি জেল্লা।
২. হজমশক্তি বাড়ায়: হজমশক্তি বাড়াতেও সিদ্ধহস্ত অ্যালোভেরা। ডি.কে পাবলিশিং হাউসের হিলিং ফুড বইতে আছে, এর মধ্যে থাকা ল্যাক্সেটিভ উপাদান পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ফলে, খাবার হজম হয় দ্রুত। একই সঙ্গে এটি অন্ত্রের খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমায় এবং ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। এতে স্বাভাবিক ভাবেই হজমক্ষমতা বাড়ে।
3. বশে থাকে ডায়াবেটিস: সমীক্ষা বলছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আত্রান্তরা নিশ্চিন্তে এই রস পান করতে পারেন। এতে ইনসুলিনের ক্ষরণ বাড়ে। নিয়ন্ত্রণে থাকে শর্করার পরিমাণ। তবে এই নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।
৪. ওজন কমায় দ্রুত: হাজার চেষ্টা করেও বাড়তি ওজন কমাতে পারছেন না! আজ থেকেই তাহলে ডায়েটে রাখুন অ্যালোভেরাকে। এর রসে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লমেটারি এবং ডিটক্সিফাইং উপাদান। ফলে, অ্যালোভেরার রস মানেই শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়ে তরতাজা আপনি। পেট পরিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে হজমশক্তি বাড়ালেই দ্রুত ঝরবেন আপনি। একই সঙ্গে বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
কীভাবে ডায়েটে থাকবে অ্যালোভেরা:
১. জুস পান করুন: সবচেয়ে সহজ উপায় হল যদি পানীয় হিসেবে অ্যালোভেরার (Aloe Vera) রসকে কাজে লাগাতে পারেন। এর জন্য পাতার কিছুটা অংশ কেটে নিন। তারপর ওপরের সবুজ অংশ সরিয়ে চামচ দিয়ে বের করে নিন অ্যালো জেল। দেখবেন, হলদেটে আঠা যেন না থাকে। এবার সেই জেল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ডাবের জল বা এমনি জলের মধ্যে দিয়ে, অল্প মধু মিশিয়ে মিক্সিতে ব্লেন্ড করে নিন। চাইলে পছন্দের ফলের রসও মেশাতে পারেন।
2. স্যালাডে অ্যালোভেরার পাতা মিশিয়ে: রসের পাশাপাশি অ্যালো পাতাও স্যালাডে মিশিয়ে খেতে পারেন আপনি। তার জন্য গাছের থেকে পাতা নিয়ে ভালো করে সেটা ধুয়ে নিন। দেখবেন, আঠা যেন না থাকে। এবার ছোট ছোট টুকরোয় কেটে মিশিয়ে নিন স্যালাডের সঙ্গে। অ্যালো পাতা স্যালাডে মিশলে আরও স্বাদু হবে আপনার ডিশ।
3. স্যালাড ড্রিসিংয়ে জেল: অ্যালো জেল স্যালাড ড্রেসিংয়েও ব্যবহার করা সম্ভব। এই জেল খুব হাল্কা হওয়ায় সহজেই অলিভ অয়েল বা ভিনিগারের সঙ্গে মিশে আপনার ডিশকে করে আরও টেস্টি এবং পুষ্টিকর।
৪. আইস কিউবে অ্যালো জেল: গরম মানেই অসহ্য সূর্যের তাপ আর ত্ত্বকে সানবার্ন । এই জ্বালাপোড়া থেকে রেহাই পেতে চান ঝটপট? তাহলে ফ্রিজের আইস কিউব তৈরির পাত্রে জলের সঙ্গে জেল মিশিয়ে ভরে রেখে দিন। কিউব তৈরি হলেই তা ঘষে নিন ত্বকে। পোড়াভাব কমে দ্রুত আরাম পাবেন। এছাড়া, স্মুদি বা সরবতেও মিশিয়ে নিতে পারেন এই কিউব। পানীয় ঠাণ্ডাও হল। আপনার শরীরে অ্যালো জেলও গেল।
তবে সব সময় একটা কথা মাথায় রাখবেন, গাছের আঠা যেন কোনোভাবেই শরীরে প্রবেশ না করতে পারে। এতে হিতে বিপরীত হবে। কারণ, এই আঠার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। আর রোজের ডায়েটে অ্যালোকে আপন করবেন কিনা বা কীভাবে করবেন সেটা অবশ্যই জেনে নেবেন কোনও পুষ্টিবিজ্ঞানী বা ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে।