দূষণের জেরে বিলুপ্তির মুখে গ্রেট বেরিয়ার রিফ, প্রবাল প্রাচীরের ৯০% নষ্ট বলে জানাল বিজ্ঞানীরা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

কুইন্সল্যান্ড : পৃথিবীর সমৃদ্ধ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে অন্যতম হল অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট বেরিয়ার রিফ। শুধু অস্ট্রেলিয়াই নয়, পৃথিবীর ঐতিহ্যপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়ায় কুইন্সল্যান্ডের সমুদ্রতটে প্রায় ৯০০টি দ্বীপের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই প্রবাল প্রাচীরটি প্রায় ৩৪৪,৪০০ বর্গ কিলোমিটার স্থান জুড়ে অবস্থিত। এই প্রবাল প্রাচীরের একটি বড় অংশ ‘গ্রেট বেরিয়ার রিফ মেরিন পার্ক’-টি একসময়ে ছিল মাছ ধরার একটি উপযুক্ত স্থান। সম্প্রতি পরিবেশবিদ্ রোয়ান জ্যাকবসেন ঐতিহ্যপূর্ণ এই বাস্তুতন্ত্রটিকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করেছেন। ২০১৬ সালেই এটির মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁর দাবি। image.adapt.1200.HIGH এক বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু বেয়ার্ডের কথায়, ‘গ্রেট বেরিয়ার রিফের অন্তত ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে গত কয়েক বছরে৷’ জানা যাচ্ছে, ২০১৬-১৭ থেকে এবছরের মধ্যেই এতটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে প্রবাল প্রাচীর৷ প্রাথমিক কারণ হিসেবে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে দায়ী করা হলেও, সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও বেশ কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে৷

সমুদ্রের জলের উষ্ণতা দিনে-দিনে বেড়ে যাওয়ার কারণে জলবায়ুতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। যার জেরে জীবন্ত প্রবালগুলি কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। টানা কয়েক বছরের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাব পড়েছে প্রবাল জগতে৷ যার জন্য সামুদ্রিক জীবের মৃত্যু ঘটছে সময়ের আগেই৷ সেসব মৃত প্রবালের স্তূপের মাঝে পড়ে সদ্যোজাতদের জীবনধারণ সমস্যার হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ জলের প্রকৃতি পরিবর্তন হওয়ায় নিজেদের অভিযোজিত করে নিতে গিয়ে একাধিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলজ জীবজগৎ৷si GreatBarrierReef

অধ্যাপক বেয়ার্ড বিষয়টি আরও ভালভাবে বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছেন, ‘ছোট প্রবালরা রিফ থেকে কিছুটা দূর যাতায়াত করতে পারে৷ তাই তারা কিছুটা নিরাপদে গিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে৷ কিন্তু পরিণত জীবরা তেমনটা করে উঠতে পারে না৷ ফলে সময়ের আগেই তাদের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে৷’ বেয়ার্ডের কথায়, ‘একটা কারণ নিয়ে আমরা নিশ্চিত৷ কুইন্সল্যান্ডের কাছে সমুদ্রের জলে নানারকম দ্রবণ মিশছে৷ সেটা সমুদ্রের জলের প্রকৃতি বদলের যত না ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে সমুদ্রের জলের উষ্ণতাবৃদ্ধি৷’

অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট বেরিয়ার রিফ বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলচর জীবের বাসস্থান৷ সর্ববৃহৎ জীববৈচিত্র্যের জায়গা হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃত৷ মূলত নানা রঙের প্রবালের জন্য সমুদ্রতলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে৷ যা বিশ্ববাসীর কাছে চূড়ান্ত আকর্ষণের৷ গ্রেট বেরিয়ার রিফ-এর বয়স প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ বছর।প্রাচীন এই বাস্তুতন্ত্রে বাস করত প্রায় ১৬২৫ প্রজাতির মাছ, ৩০০০ প্রজাতির শামুক এবং ৩০টি বিভিন্ন প্রজাতির ডলফিন সহ প্রবাল।প্রতি বছর প্রবালের সৌন্দর্য দেখতে গ্রেট বেরিয়ার রিফে ছুটে যান হাজার হাজার পর্যটক৷ ডুবুরির পোশাকে পরে জলের নিচে নেমে রং, বেরঙের প্রবালদর্শন জীবনের এক অভিজ্ঞতা বটে৷ এর মাধ্যমে সেদেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছিল। প্রতি বছর প্রায় ৩ বিলিয়ান ডলার আয় হত এই পর্যটন থেকে।FoOlffAJfEhQamJ 800x450 noPad

নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণায় আরও ইঙ্গিত, এমনটা চলতে থাকলে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে উধাও হয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত গ্রেট বেরিয়ার রিফের প্রবাল জগৎ৷ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বিশ্বের বৃহত্তম জলজ জীববৈচিত্র্যের নিদর্শন৷সম্প্রতি ‘গ্রেট বেরিয়ার রিফ’-এর কাছে সমুদ্রে কমপক্ষে দশ লক্ষ টন শিল্পবর্জ্য ফেলা র সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। যা পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর করে তুলবে বলে মত পরিবেশবিদদের।

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest