নয়াদিল্লি: ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রের ভোটারদের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। আর তাতে তাঁর আসনের ভোটারদের তিনি ‘আমার অমেঠী পরিবারের সদস্য’ বলে উল্লেখ করলেন। চিঠিতে রাহুল লিখলেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ক্ষমতায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা আপনাদের সেই সব জরুরি প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেব, যেগুলি বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের এনডিএ সরকার আটকে রেখেছে। তাই আগামী ৬ মে আপনারা সকলে আপনাদের পরিবারের এই সদস্যকে ভোট দিন। জেতান।’’
বিজেপির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও টাকা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তোলেন কংগ্রেস সভাপতি৷ বিজেপিকে ‘মিথ্যার কারখানা’ ও ‘টাকার নদী’ বলে আখ্যায়িত করেন রাহুল৷ তাঁর অভিযোগ, বিজেপি শিল্পপতিদের হয়ে কাজ করে৷ কিন্তু কংগ্রেস কাজ করবে দেশের কৃষক, যুব সম্প্রদায়, দুস্থ ও সমাজের নিম্নবর্গের মানুষদের জন্যে৷ তাঁর আবেদন, সত্যের মুখোমুখি হওয়ার সাহস তাঁকে দিয়েছেন আমেঠির মানুষই৷ তাই ফের ভোটে জিতিয়ে সেই সাহস বজায় রাখতে সাহায্য করারও আবেদন জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি৷
তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, নিজেকে অমেঠীর পরিবারের সদস্য বললেও, ভোটের ঘণ্টা বাজার পর এ বার তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রে যত বার আসতে দেখা গিয়েছে কংগ্রেস সভাপতিকে, তার চেয়ে বহু বার দাদার কেন্দ্রে এসে ভোটের প্রচার করে গিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা৷ স্বাধীনতার পর থেকে মাত্র দুবার অমেঠীকে পরাজয়ের মুখ দেখেছেন কংগ্রেস প্রার্থীরা৷ ১৯৭৭ ও ৯৮-এ৷ ২০০৪ সালে এই কেন্দ্র সনিয়া ছেড়ে দেন পুত্র রাহুলকে৷ অমেঠী থেকেই জিতে সংসদে পৌঁছন রাহুল৷২০০৪ থেকে ০৯, দুটি লোকসভাতেই শতাংশ ও ব্যবধানের বিচারে প্রতিপক্ষকে অনেকটা পিছনে ফেলেছিলেন গান্ধী পরিবারের এই নেতা৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২০০৪-এ ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৭২ শতাংশে৷ কিন্তু উলটো ছবি দেখা যায় ২০১৪-র লোকসভা ভোটের ফলাফলে৷ মোদী ঝড়ের প্রভাব পড়ে অমেঠীতেও৷ রাহুল গান্ধী পেয়েছিলেন মাত্র ৪৬.৭১ শতাংশ ভোট৷ ওই কেন্দ্রে যা স্বাধীনতার পর কংগ্রেসের ইতিহাসে বিরল৷ ব্যবধানও কমে বিস্তর৷ ২০০৯-এ যা ছিল ২.৭০ লক্ষ, পাঁচ বছরে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র এক লক্ষের সামান্য বেশি৷
কিন্তু তার পর অমেঠীতে বহু বার এসেছেন স্মৃতি। এ বারও গোড়া থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রচারে। বিজেপি নেতাদের একাংশ বলছেন, লড়াইটা এ বার আরও জোরালো হবে ভেবেই কেরলের ওয়েনাড় লোকসভা আসনেও প্রার্থী হয়েছেন তিনি।এই সব অভিযোগকে লঘু করতেই সম্ভবত তাঁর লেখা চিঠিতে অমেঠীর ভোটারদের ‘একটি পরিবারের সদস্য’ বলে উল্লেখ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি। লিখেছেন, ‘‘অমেঠী আমার পরিবার। আমার অমেঠী পরিবারের সদস্যরা আমাকে সাহস জোগান যাতে আমি সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ি। যাতে আমি গরিবের দুঃখের কথা শুনতে পাই। যাতে তাঁদের জন্য সরব হতে পারি।’’