নিউজ কর্নার ওয়েব ডেস্ক: শুক্রবার পাকিস্তানের জাতীয় দিবস বয়কট করেছিল ভারত অথচ একই দিনে নরেন্দ্র প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী সৌজন্যে চিঠি পাঠালেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। স্বভাবতই একই দিনে ভারতের দুই পৃথক অবস্থান নিয়ে সোশ্যাল সাইটে শুরু হয়েছে জোর তরজা। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইমরান খানের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেছেন। তাতে সন্ত্রাস প্রসঙ্গে জোর দেওয়া হয়েছে। কিভাবে দক্ষিণ এশিয়াকে সন্ত্রাস মুক্ত করা যায় চিঠিতে তারও উল্লেখ করেছেন মোদী।
অথচ কয়েকদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। গেরুয়া অনুগামীরা সময় পেলেই পাকিস্তানের বাপান্ত করতে কসুর করছিলেন না। অনেকে ধরেই নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী বোধহয় যুদ্ধ করবেন খুব জলদি। কিন্তু পাকিস্তান এ যাত্রায় অত্যন্ত পরিণত কূটনৈতিক বুদ্ধির পরিচয় দেয়। তারা যে কেবল অভিনন্দনের সঙ্গে সুব্যবহার করে তাই নয় তা সুকৌশলে সোশ্যাল সাইটে ছড়িয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দেয় পাকিস্তান শান্তি চাইছে।অনেকের ধারণা তখনই খানিকটা কূটনৈতিকভাবে ধাক্কা খেয়ে ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তিনিও ছিলেন তক্কে তক্কে। গান্ধীর দেশ ভারত সৌজন্যে পাকিস্তানের থেকে পিছনে পড়বে একথা বুঝতে পেরে নীতি বদলান তিনিও। কিন্তু তা যে দেশের মানুষ তথা তাঁর শিবিরের লোকজন ভালোভাবে নেবে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনিতেই এখনও পর্যন্ত তার বিনা নিমন্ত্রণে পাকিস্তান যাওয়ার চর্চা করে বিরোধীরা। এই প্রসঙ্গ উঠলেই অত্যন্ত অস্বস্তিতে পড়তে দেখা যায় গেরুয়া শিবিরের নেতাদের। একদিকে পাক বিরোধিতা অন্যদিকে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বিশেষ সৌজন্যে প্রদর্শন ভালোভাবে নেয়নি বিজেপির নিচু তলার কর্মীরা।
শুক্রবার ভারত জানিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানের জাতীয় দিবস বয়কট করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের আমন্ত্রণ করেছে পাকিস্তান।এ পর্যন্ত ভারতের নিজস্ব স্ট্যান্ড পয়েন্ট স্পষ্ট ছিল সকলের কাছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর হঠাৎ এই ‘গান্ধীগিরি ‘ হজম হচ্ছে না সংঘ ঘনিষ্টদের।চিঠিতে নরেন্দ্র মোদী যা বলেছেন এবং তার প্রত্যুত্তরে ইমরান খান যা লিখেছেন তা দেখে বোঝার উপায় নেই দুই দেশ এমন চরম উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে পার হয়েছে সদ্য।যদিও সামনে নির্বাচন না থাকায় ইমরান খান প্রথম থেকেই শান্তির পয়গাম দিতে পেরেছিলেন সহজেই। তার উল্টোটা ছিল নরেন্দ্র মোদির অবস্থান। ভোটের আগে রণ হুংকার শুনিয়ে তিনি তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ানোর শেষ চেষ্টা করছিলেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।তখন বলা হয়েছিল পাকিস্তানি পণ্যের উপর ২০০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হল। সোশ্যাল সাইটে পাকিস্তান বিদ্বেষ উগরে দিয়েছিলেন গেরুয়াপ্রেমীরা। কিন্তু এরপর নরেন্দ্র মোদী যা করলেন তাতে তাদের যে বিরোধীদের কাছে অস্বস্তিতে পড়তে হবে সন্দেহ নেই।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদী চিঠিতে লিখেছেন- এই উপমহাদেশে গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নতির জন্য সকলকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। সকলের লক্ষ্য গোটা অঞ্চলের উন্নতি। এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যা হবে হিংসা ও সন্ত্রাস মুক্ত। নরেন্দ্র মোদীর এই বার্তা পেয়ে সৌজন্যে টুইট করেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।গোপনে হলেও, আঞ্চলিক শান্তি ও সুস্থিতি রক্ষায় শুভেচ্ছা-বার্তার মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাড়ানো হাত ধরতে যে তাঁর কোনও দ্বিধা নেই, বিন্দুমাত্র দেরি না করে তাঁর টুইটে সে কথা বুঝিয়ে দিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। লিখলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাঠানো বার্তা পেয়েছি। জাতীয় দিবসে আমি পাক নাগরিকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। গণতন্ত্র, শান্তি, সুস্থিতি ও উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এই উপমহাদেশের মানুষকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। এই অঞ্চলকে হিংসা ও সন্ত্রাসের পরিবেশ থেকে মুক্ত করতে।’’ প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্য তুলে ধরে সহমত পোষণ করেন পাক রাষ্ট্রদূত সোহেল মাহমুদ। একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পাকিস্তান এবং ভারতের উচিত যাতে কোনরকম যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি না হয় সেদিকে নজর দেওয়া এবংস্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা। আশা করছি ভারত পাকিস্তানের সম্পর্কের মধ্যে যে দীর্ঘ শীতলতা ছিল তা খুব শিগগিরই কেটে যাবে।
Received msg from PM Modi: "I extend my greetings & best wishes to the people of Pakistan on the National Day of Pakistan. It is time that ppl of Sub-continent work together for a democratic, peaceful, progressive & prosperous region, in an atmosphere free of terror and violence"
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) March 22, 2019
প্রতি বছর ২৩ মার্চ দিনটিকে ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে পালন করে পাকিস্তান। এ বারও সেই অনুষ্ঠান হয়েছিল দিল্লিতে পাক হাইকমিশন ও ইসলামাবাদে। কিন্তু শুক্রবার দিল্লিতে পাক হাইকমিশনের অনুষ্ঠান বয়কট করে ভারত। কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তো বটেই, কোনও আমলাও যাননি সেই অনুষ্ঠানে। শোনা যায়, ফোন করে সংবাদমাধ্যমকেও ওই অনুষ্ঠানে যেতে বারণ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এমন সৌজন্যে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।ইমরানের টুইটের পরেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘দ্বিচারিতা’র সমালোচনায় সরব হন কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের নেতারা। কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী টুইটে লেখেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের এই দ্বিচারিতা আমাদের খুব একটা অবাক করেনি!’’ জম্মু-কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা, প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইটে কটাক্ষ করেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে কোনটা নীতি আর কোনটা নীতি নয়, তা বোঝা দুষ্কর!’’ তবে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে যা করা হয়েছে সবটাই কূটনীতির কারণে। এটি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত স্বাক্ষরিত চিঠি নয়। সব দেশের ক্ষেত্রেই এমনটা করতে হয়, এটাই নিয়ম।