কোঝিকোড়: উত্তরপ্রদেশের আমেঠির সঙ্গেই কেরালার ওয়ানাড লোকসভা থেকে ভোটে লড়ছেন রাহুল গান্ধী৷ সেখানে ভোট ২৩শে এপ্রিল৷ বৃহস্পতিবার সেখানে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন কংগ্রেস সভাপতি৷
রাহুল গান্ধীর কোঝিকোড়ে আসার খবরে উল্লসিত কংগ্রেস কর্মী, সমর্থকরা৷ এয়ারপোর্টের বাইরে ছিল জমকালো অভ্যর্থনা৷ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে ঘিরেও আবেগ আর উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো৷ কংগ্রেস সভাপতিকে নিয়ে বিশাল ব়্যালি বের হয়। কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে গিয়েই মনোনয়ন জমা দেন ওয়েনাড় কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী রাহুল গান্ধী৷ সঙ্গে ছিলেন পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও৷ এদিন সকালেই ভাই-বোন পৌঁছে গিয়েছেন কোঝিকোড়৷ জানা গিয়েছে, মনোনয়ন জমা দিয়েই নিজের নির্বাচনী এলাকায় যাবেন রাহুল৷
রাহুল গান্ধীর ওয়েনাড় থেকে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বাম নেতাদের দাবি, নিজেদের পায়ের তলার মাটি হারিয়ে ফেলেছে কংগ্রেস। অমেঠীতে হারের আশঙ্কা করে কেরল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন কংগ্রেস সভাপতি। একই সুর শোনা গিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের গলাতেও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি বলেন, রাহুল গান্ধী ওয়েনাড় থেকে লড়তে গিয়েছেন কারণ তিনি কোন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা থেকে জয় লাভ করতে পারবেন না। অমেঠীতে কংগ্রেস সভাপতির প্রতিপক্ষ হলেন বিজেপির স্মৃতি ইরানি। তাঁর দাবি, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ওয়েনাড়বাসীকে অপমান করেছেন কংগ্রেস সভাপতি। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, দুটি আসন থেকেই যদি জয়লাভ করেন রাহুল তাহলে কি অমেঠী ছেড়ে দেবেন?
যদিও সে সব সমালোচনা গায়ে মাখতে মানতে রাজি নয় কংগ্রেস । দলের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদী চোদ্দর লোকসভায় দুটি কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর গুজরাতের কেন্দ্রটি তিনি ছেড়ে দেন। তাহলে তাঁর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা যায়। স্মৃতি ইরানি নিজেও চোদ্দর নির্বাচনে চাঁদনি চক ও অমেঠী থেকে দাঁড়িয়ে দু’জায়গাতেই হেরেছিলেন। এ বারেও তিনি অমেঠী থেকে হারবেন। অমেঠীকে রাহুল গান্ধী নিজের পরিবার বলেই মনে করেন।” সুরজেওয়ালা আরও বলেন, “রাহুল গান্ধীকে কর্ণাটক, কেরল ও তামিলনাড়ুর তিনটি কেন্দ্র থেকেই দাঁড়ানোর আবেদন করা হয়েছিল। তারমধ্যে কেরলের ওয়ানাড়কেই বেছে নিলেন রাহুল। দক্ষিণের মানুষের সংস্কৃতিকে বাঁচানোর লড়াই করছে কংগ্রেস। উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের মানুষের সম্পর্ক অটুট। কোনও শক্তি তা ভাঙতে পারবে না।”
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ওয়ানাড লোকসভা কেন্দ্রের সূচনা। মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত আসন। এখানে কংগ্রেসের সমর্থন যথেষ্ট। এর আগের দুবারের ভোটেই এখান থেকে জিতেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী এমআই শানবাস। সম্প্রতি তাঁর প্রয়াণ হয়৷ এই লোকসভার অন্তর্গত তিরুবামবাডি ও এরনাড বিধানসভা কেন্দ্র দুটি কংগ্রেসের সঙ্গী মুসলিম লিগের খাস তালুক বলে পরিচিত। ফলে ওয়ানাডে জয় নিয়ে বিপদের আঁচ নেই কংগ্রেসের৷ এছাড়া, কেরালা থেকে রাহুলই প্রথম গান্ধী নেহরু পরিবারের হয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন। কংগ্রেস থিঙ্ক ট্যাঙ্ক মনে করছে এর ফলে দলের গোটা দক্ষিণ ভারতের কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত হবে। রাহুল তাদের লোক বলে দক্ষিণ ভারতীয়দের কাছে বার্তা পৌঁছবে৷ দিল্লিতে সরকার গঠনে যা সদর্থক দিক৷
তবে দলের অন্দরের খবর, কেরালায় কংগ্রেস সংগঠন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জীর্ণ৷ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডি এবং বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালার নেতৃত্বে দুটি গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। ফলে প্রার্থী বাছাই, টিকিট দেওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। তিক্ততা কমাতেই রাহুলের প্রার্থী হওয়ার জন্য ওয়ানাড কেন্দ্রটি বেছে নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে৷